ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রিজার্ভ চুরি

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

রিজার্ভ চুরি

সাইবার অপরাধের মাধ্যমে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়াটি এখন অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়েছে। দুই বছর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে আট কোটি বিশ লাখ ডলার চুরি হয়ে গেছে। ডিজিটাল পদ্ধতির নেতিবাচক দিক এতে উন্মোচিত হয়েছে বলা যায়। এর মধ্যে ফিলিপিন্সে পাচার হয়েছে আট কোটি দশ লাখ ডলার আর শ্রীলঙ্কায় ২০ লাখ ডলার। ফিলিপিন্সে পাচার হওয়া অর্থের মধ্যে এক কোটি চল্লিশ লাখ ডলার ফেরত পাওয়া গেছে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘সুইফট মেসেজিং’ পদ্ধতির মাধ্যমে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মেসেজে আট কোটি দশ লাখ ডলার যায় ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকে (আরসিবিসি)। আর আরেক মেসেজে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয় কুড়ি লাখ ডলার। শ্রীলঙ্কায় পাঠানো অর্থ ওই এ্যাকাউন্টে জমা হওয়া শেষ পর্যন্ত আটকানো গেলেও ফিলিপিন্সের ব্যাংকে যাওয়া অর্থের বেশিরভাগই স্থানীয় মুদ্রায় বদলে জুয়ার টেবিলে ঘুরে চলে যায় নাগালের বাইরে। রিজল ব্যাংকের একটি শাখা হয়ে বেরিয়ে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে এক ক্যাসিনো মালিকের ফেরত দেয়া দেড় কোটি ডলার বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দিয়েছে ফিলিপিন্স। এ ঘটনায় রিজল ব্যাংককে ২০ কোটি ডলার জরিমানাও করেছে ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জরিমানার ওই অর্থ তারা পরিশোধ করলেও বাংলাদেশকে বাকি অর্থ ফেরতের দায় নিতে তারা রাজি নয়। ওই সময়েই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ঢাকায় মামলা করা হয়। বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগÑ সিআইডি দুই বছরেও আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি। পুরো বিশ্বে আলোচিত এই সাইবার চুরির পেছনে কারা ছিল তা আজও উদ্ঘাটন করতে পারেনি বাংলাদেশসহ ফিলিপিন্স ও যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ বলছে, আট কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে ৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার বেরিয়ে কোথায় গেছে তার ধারণা পাওয়া গেলেও প্রায় দেড় কোটি ডলারের বিষয়ে কোন হদিস পাওয়া যায়নি। রিজল ব্যাংকের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত অনেকে জড়িত। অথচ তাদের বিরুদ্ধে ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এমনকি তারা বিষয়টি নিয়ে গড়িমসি করছে। এটা তো বাস্তব যে, রিজল ব্যাংক মানি লন্ডারিং করেছে। ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির ঘটনাই তা প্রমাণ করে। ২৭টি লেনদেন একদিনেই হয়েছে এবং তা যেদিন টাকা সেখানে পৌঁছে সেদিনই। এতবড় অঙ্কের লেনদেনগুলো ব্যাংকের বিধিবিধান অনুযায়ী সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত করার কথা এবং এই অর্থ জব্দ করার নিয়ম পালন করা হয়নি। রিজল ব্যাংক অবশ্য প্রথমদিকেই ডলার জমা করেছিল। তবে এর পরে এক ঘণ্টা সময়ের মধ্যে ডলারগুলো বিতরণ করে দেয়। এ থেকে স্পষ্ট হয়, ব্যাংকটির ওপর-নিচু স্তরের অনেক কর্মকর্তাই এর সঙ্গে জড়িত, যা মানি লন্ডারিং। ডলার ফেরত আনার জন্য বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে ফৌজদারি মামলা দায়েরের। বাদী হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ও সুইফট কর্তৃপক্ষও থাকছেন। এই সিদ্ধান্ত জানার পরও রিজল ব্যাংক কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি। দু’বছর আগে চুরি হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশের যা যা করণীয় সেসব অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয়।
×