ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সাবিহা রহমান

কোন্ রঙে সৌন্দর্য

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

কোন্ রঙে সৌন্দর্য

ছেলের জন্য একটা ভাল মেয়ে খুঁজছি। দাবি একটাই, মেয়ে ফর্সা সুন্দর হতে হবে। এই ধরনের কথা আমাদের সমাজে নতুন কিছু নয়। ফর্সা যেন সুন্দরেরই আর একটি সমার্থক শব্দ। কথাটির সত্যতা কতটুকু তা ভেবে দেখার সময় আমাদের নেই। কিন্তু আমাদের এই বিশ্বাস একটি মেয়ের জীবনে বা একটি পরিবারে কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারে তা আমাদের একটু সময় নিয়ে হলেও চিন্তা করে দেখা উচিত। আমাদের সমাজের শ্যামলা কিংবা কালো বর্ণের মেয়েদের প্রথমেই যে অযাচিত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, তা হলো, বিয়ে হবে কীভাবে? সমাজের সিংহভাগ মানুষ মনে করেন ভাল বিয়ে দিতে হলে ত্বকের রং ফর্সা হওয়া চাই। মেয়েটির যোগ্যতা কিংবা গুণগুলো দেখার পর্বটি আসে অনেক পরে। ত্বকের রং কালো হওয়া একটি দোষ ও ফর্সা হওয়া একটি গুণ হিসেবে ধরা হয়। জীবনযুদ্ধে সবদিক থেকেই যেন পিছিয়ে পড়ে কৃষ্ণ ত্বকের নারীরা। ব্যাপারটি এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদই আছে এ-নিয়ে, ‘আগে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারী।’ বিয়ের আসরের আগেও একজন শ্যামবর্ণের মেয়েকে নানারকম বৈষম্য ও ভেদাভেদের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। দুটি সন্তানের মধ্যে যদি শুধু একজন ফর্সা ত্বকের অধিকারী হয়, তবে সেই হয়ে ওঠে বাবা-মায়ের চোখের মণি। তার আবদার ও চাওয়া-পাওয়াগুলোকে আগে প্রাধান্য দেয়া হয়। স্কুল-কলেজে বন্ধু নির্বাচনে কিংবা শিক্ষকের মনোযোগ আকর্ষণে ফর্সা ত্বকের মেয়েদের অনেক দ্রুত সফলতা পেতে দেখা যায়। সব শেষে আসে চাকরির বাজার-মেয়েরা আজ ঘরের বাইরে গিয়ে চাকরি করছে পুরুষদের পাশাপাশি। একদিক দিয়ে তারা এগিয়ে যাচ্ছে; কিন্তু সবাই কি সমানভাবে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে? আজকাল চাকরিদাতারাও তথাকথিত ফর্সা-সুন্দর কর্মচারী চান। চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে অনেক ক্ষেত্রে আগেই বলা থাকে আবেদনকারীকে সুন্দর হতে হবে। শুধু আমাদের দেশ নয়, অন্যান্য অনেক দেশে একজন নারীর যোগ্যতা বিচার করার আগে তার ত্বকের রং বিবেচনায় আনা হয়। তবে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা কিন্তু সব দেশে বা সব মানুষের কাছে এক নয়। আমাদের দেশের সমাজ ব্যবস্থায় ফর্সাকে সুন্দর হিসেবে ধরা হলেও আফ্রিকা, সোমালিয়াসহ আরও নানা দেশে কৃষ্ণ ত্বকের নারীদেরই সৌন্দর্যের উদাহরণস্বরূপ দেখা হয়। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় ফর্সা ত্বকের নারীদের ছাড়িয়ে গেছেন কৃষ্ণত্বকের নারীরা। কোন কোন নারীর কালো ত্বক এতটাই সুন্দর যে তাদের ব্ল্যাক ডায়মন্ড বলেও ডাকা হয়। আইয়ুশ কেজরিওয়াল, একজন ব্রিটেন-বেজড ফ্যাশন ডিজাইনার, মনে করেন চামড়ার রং, ওজন- এসবের উপর ভিত্তি করে কোনভাবেই সৌন্দর্যের নির্দিষ্ট মাপকাঠি গড়ে তোলা সম্ভব না। আর তাই তিনি তার পোশাকের জন্য শ্যামবর্ণের মডেলই সাধারণত বেছে নেন। ‘আমার কাছে সৌন্দর্য মানে কনফিডেন্স। আত্মবিশ্বাস মানুষকে দেয় সুখী হবার প্রেরণা। আর আপনি যদি সুখী না হন তাহলে আপনার সৌন্দর্য কখনই ফুটে উঠবে না।’ তাই প্রশ্ন ওঠে, ‘সৌন্দর্যের রং কি? কোন বর্ণের নারীদের আমরা সুন্দর বলব?’ আসলে এই ধরনের প্রশ্ন একদম ভিত্তিহীন। এই ধরনের প্রশ্ন করে আমরা বোকামিরই প্রকাশ ঘটাই মাত্র। একটি ছবি যেমন একজনের কাছে ভাল লাগলেও আর একজন লোকের কাছে রুচিসম্মত নাও লাগতে পারে; ঠিক সেভাবেই একজন নারীর শুধুমাত্র ত্বকের রঙের ওপর ভিত্তি করে তাকে সুন্দর কিংবা কুৎসিত বলা যাবে না। প্রতিটি মানুষই একে অন্যের থেকে আলাদা। আর এই ভিন্নতাই প্রতিটি মানুষকে নিজ নিজ সত্তায় সুন্দর করেছে। এই সৌন্দর্যকে তাই কোন বর্ণের মাপকাঠিতে মেপে এর অবমাননা করা আমাদের কারই উচিত নয়। ছবি : নাঈম ইসলাম
×