ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এসএসসির প্রশ্ন পুরোপুরি ফাঁসের প্রমাণ এখনও মেলেনি

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

এসএসসির প্রশ্ন পুরোপুরি ফাঁসের প্রমাণ এখনও  মেলেনি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এখন পর্যন্ত কোন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পুরোপুরি ফাঁসের প্রমাণ পায়নি প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে সরকার গঠিত পরীক্ষা মূল্যায়ন কমিটি। ফাঁস হওয়া প্রশ্নগুলোর মধ্যে শুধু একাধিক বিষয়ের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নে মিল পাওয়া গেছে। আবার যেসব প্রশ্ন ফাঁসের সত্যতা পাওয়া গেছে তাও ঘটেছে পরীক্ষা শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে, যখন পরীক্ষার্থীরা হয় কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে নয় তো পথে ছিল। ফলে ফাঁস হওয়া কোন প্রশ্ন দেখে বই থেকে উত্তর বের করে পরীক্ষার হলে তার সুবিধা নিতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত পরীক্ষা মূল্যায়ন কমিটির মূল্যায়নে এমন তথ্যই মিলেছে। এ অবস্থায় রবিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এ কমিটির বৈঠকের পর কমিটির প্রধান, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মোঃ আলমগীর পুরো পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশ না করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কমিটির সুপারিশ নিয়ে পরীক্ষার্থীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। শিক্ষার্থীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো সুপারিশ করা হবে না। ২০ লাখের বেশি পরীক্ষার্থীর স্বার্থ বিবেচনা করেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে সুপারিশ করা হবে। আগামী ২/৩ দিনের দিনের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ পেশ করা হবে। রবিবার ছিল কমিটির তৃতীয় বৈঠক। বৈঠকে কমিটির প্রধান ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও শিক্ষা বোর্ডগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর প্রশ্ন করা হলে সচিব মোঃ আলমগীর এখনই বিস্তারিত তথ্য দিতে রাজি হয়নি। তবে দু’দিন আগে তাদের অগ্রগতি ও প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তবে এর মধ্যে অধিকাংশই আংশিক মিল আছে, কিছু কিছু পুরোপুরি আছে। তবে কোন বিষয়ের প্রশ্ন পুরোপুরি মিলেছে সেটা বলার জন্য আমাদের আরও সময়ের প্রয়োজন। যদি দেখি পুরোপুরি মিলেছে এবং সেই পরীক্ষা বাতিল করা দরকার তাহলে সেই সুপারিশ করব। যেই পরীক্ষার প্রশ্ন পুরোপুরি মিলেছে, সেই বিষয়ের পরীক্ষা বাতিলের সম্ভাবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা সুপারিশ করব। কিন্তু বাতিল করবে কিনা, তা কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে। রবিবারের তৃতীয় বৈঠকের পর তিনি পুরো পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশ না করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে গণমাধ্যমে যেসব সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো পর্যালোচনা করেছেন জানিয়ে সচিব বলেন, যে সুপারিশ করব তা গোপনীয়। সরকার সুপারিশ পর্যালোচনা করবে, আমাদের সুপারিশ রাখতে পারে, নাও রাখতে পারে। এরপর সরকার সিদ্ধান্ত নিলে আপনারা জানতে পারবেন। পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশ করা হবে কি না- এই প্রশ্নে আলমগীর বলেন, সেটা বলা যাবে না। আমরা শুধু একটু বলতে পারি ২০ লাখ শিক্ষার্থীর স্বার্থের কথা চিন্তা করেই আমরা সুপারিশ করব, সরকারও তাদের স্বার্থের কথা চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নেবে। এরা তো আমাদেরই সন্তান। আমরা এমন কোন সুপারিশ করব না যেটা তাদের জন্য ক্ষতি হবে। আর সরকারও এমন কোন সিদ্ধান্ত নেবে না যেটা তাদের জন্য কষ্টের বা ক্ষতিকর কিছু। মোঃ আলমগীর আরও বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত নৈবত্তিক প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পেয়েছি। তার ওপর কাজ করে যাচ্ছি। এসব বিষয়ের উপর যাচাই বাছাই করে আগামী দুই-একদিনের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, যে সব মোবাইল নম্বর ও প্রশ্নফাঁসের লিংক পাওয়া গেছে তা যাচাই-বাছাই কাজ শেষ হয়নি। এ কারণে পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও সব কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। তাই তদন্ত প্রতিবেদন আগামীকাল (আজ সোমবার) দেয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য আরও দু’দিন সময় লাগতে পারে বলে তিনি জানান। কমিটির অপর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এখন পর্যন্ত বিস্তারিত কথা বলার সময় হয়নি। তবে কমিটি এখন পর্যন্ত একটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পুরোপুরি ফাঁসের প্রমাণ পায়নি। প্রশ্নের একটি অংশ ফাঁস হলে উভয় অংশ বাতিলের সুযোগ থাকে না। তাই আরও পর্যালোচনা চলছে। এক সদস্য বলেছেন, যদি ৩০ মিটিট আগে প্রশ্ন ফাঁস হয় ফেসবুকে তখন তো পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রেই চলে যায়। না হয় রাস্তায় থাকে। তাই পরীক্ষার্থীরা প্রশ্ন পেয়ে সেভাবে পরীক্ষায় আসতে পারেনি। এ অবস্থায় পরীক্ষা বাতিলের কোন কারণ থাকতে পারে না বলেই মনে করেন কমিটির অধিকাংশ সদস্য। তবে শুরুর দিকে একটি পরীক্ষায় অনেক আগে প্রশ্ন বাইরে আসায় সে পরীক্ষা নিয়ে ভিন্নভাবে ভাবা হচ্ছে। এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস অব্যাহত থাকায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জাতীয় মনিটরিং এবং আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির জরুরী সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কমিটি গঠনের কথা জানান। গত ৬ ফেব্রুয়ারি কমিটি গঠন করা হয়। মন্ত্রণালয়ের গঠিত ওই কমিটি গত ১১ ফেব্রুয়ারি প্রথম বৈঠক করে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে। ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় বৈঠক বসেছিল। এর আগে এবার বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হয়ে উঠলেও ঠেকানো যায়নি প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা। শেষ পর্যন্ত প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রায় একই অভিযোগ ওঠার মধ্য দিয়েই শনিবার শেষ হয়েছে এসএসসি পরীক্ষার লিখিত অংশ। বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে পরীক্ষা পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা সচিবের পাশাপাশি আগামী বছর থেকেই পরীক্ষায় এমসিকিউ অংশ বাতিলের ইঙ্গিত গিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রীও। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও পরীক্ষা থেকে এমসিকিউ বা বহুনির্বচনী অভীক্ষা অংশটি তুলে দেয়ার বিষয়টি রয়েছে জোর আলোচনায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরাও একমত হয়েছেন যে, পরের বছর থেকে নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া হবে। প্রশ্ন ব্যাংক তৈরির পরিকল্পনার বিষয়েও একমত হয়েছেন সবাই। সর্বশেষ শিক্ষামন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন, আগামী এইচএসসি পরীক্ষাতেই আসবে ব্যাপক পরিবর্তন। এতে কাজ হবে বলেও আশাবাদ জানান তিনি। এছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখন পর্যন্ত ১৫৩ জনকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে পরীক্ষার্থী, কোচিং শিক্ষক, অভিভাবক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও স্কুল শিক্ষকও রয়েছেন।
×