ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে ॥ লুই উ

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

 রোহিঙ্গা সমস্যার  সমাধান প্রচেষ্টা অব্যাহত  থাকবে ॥ লুই উ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুই উ। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করে যাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এদিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণ হলো তাদের ওপর ক্রমাগত বঞ্চনা, নিপীড়ন, দমন পীড়ন ও সামরিক নৃশংসতা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুই উ। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা করেন রাষ্ট্রদূত। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট তুলে ধরা হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে নতুন রাষ্ট্রদূত জানান, রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমে ফেরাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন তিনি। বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত বলেন, আমার মেয়াদে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করে যাব। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমারের উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চলমান সমস্যার সমাধানে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আরও প্রশ্ন করা হলে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত এর বেশি কিছু বলেননি। গত ১০ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের কাছে নতুন রাষ্ট্রদূত তার পরিচয়পত্র পেশ করেন। এরপর রবিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে প্রথমবারের মতো বৈঠক করেন তিনি। আজ সোমবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে তার সাক্ষাতের কথা রয়েছে। এদিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম রবিবার রাজধানীর গুলশানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণ হলো তাদের ওপর ক্রমাগত বঞ্চনা, নিপীড়ন, দমন পীড়ন ও সামরিক নৃশংসতা। সে কারণে যেখান থেকে এই সমস্যার উৎপত্তি হয়েছে, সেখান থেকেই এর সমাধান হতে হবে। বাংলাদেশ অন্যায্যভাবে রোহিঙ্গা সঙ্কটের ভার বহন করছে বলেও জানান তিনি। রোহিঙ্গা শিশুদের সমস্যা নিয়ে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে কাজ করছে। তবে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও টেকসইমূলক প্রত্যাবাসন চায় বাংলাদেশ। এই প্রত্যাবাসনের মধ্যে রোহিঙ্গা শিশুও রয়েছে। গত নবেম্বর মাস থেকে মিয়ানমারের সঙ্গে সরকার অব্যাহত আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে তিনটি চুক্তি করতে সক্ষম হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ের জন্য কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বাংলাদেশ মিয়ানমারের নিকট ৮০৩২ জনের একটি তালিকা হস্তান্তর করেছে। প্রথম ধাপে এই তালিকা দেয়ার পরে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এখন ১১ লাখেরও বেশি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক অবস্থান করছে। এখনও প্রতিদিনই কিছু না কিছু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। গত বছর ২৫ আগস্ট রাখাইনে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত সাড়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারে নিপীড়নের মুখে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে আরও প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা। সেনাবাহিনী অভিযান এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে শরণার্থীদের ফেরত নিতে সম্মত হয় মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের ঘরে ফেরার পথ তৈরি করতে গত ২৩ নবেম্বর নেপিডোয় দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। গত বছরের ৯ অক্টোবর সেনা অভিযানের মুখে ৮৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আর চলতি বছর ২৫ আগস্টের পর নতুন করে বাংলাদেশে আসে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে বিভিন্ন সময়ে জাতিগত দমন-পীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে শরণার্থী জীবন কাটাচ্ছে তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম। বাংলাদেশের আহ্বানে ১৯৯২ সালে দ্বিপক্ষীয় একটি চুক্তির আওতায় মিয়ানমার কিছু রোহিঙ্গাকে ফেরত নিলেও পরে আর সেই প্রক্রিয়া এগোয়নি।
×