ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রংপুর বিভাগের চার জেলায় এবং ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের ছয় জেলায় বাস্তবায়িত হবে দুই প্রকল্প

অনাবাদি কৃষি জমি সেচের আওতায় আনার উদ্যোগ ॥ বছরে আরও দেড় লাখ মে.টন খাদ্যশস্য উৎপাদনের আশা

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

অনাবাদি কৃষি জমি সেচের আওতায় আনার উদ্যোগ ॥ বছরে আরও দেড় লাখ মে.টন খাদ্যশস্য উৎপাদনের আশা

আনোয়ার রোজেন ॥ আধুনিক সেচ সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে অব্যবহৃত কৃষি জমি ব্যবহার করে শস্যের উৎপাদন বাড়াতে চায় সরকার। এবার রংপুর বিভাগের ২৮ উপজেলায় খাল পুনঃখনন, সেচ অবকাঠামো উন্নয়ন এবং আধুনিক সেচ প্রযুক্তি সুবিধা দেয়া হবে। ফলে এসব উপজেলার ১৬ হাজার ১৯৭ হেক্টর জমি ভূ-উপরিস্থ পানি নির্ভর সেচ সুবিধার আওতায় আসবে। এতে প্রতিবছর রংপুর বিভাগে অতিরিক্ত প্রায় ৭৩ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এজন্য প্রায় ১৪১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। ‘রংপুর অঞ্চলে ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়ন ও সেচ দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, দেশে দিন দিন কৃষি জমির পরিমাণ কমছে। আবার একই সঙ্গে আবাদযোগ্য অনেক জমি অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। এজন্য সরকার দেশজুড়ে অনাবাদি কৃষি জমি সেচের আওতায় এনে অতিরিক্ত শস্য উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৫৬ উপজেলায় খাল পুনঃখনন, সেচ অবকাঠামো উন্নয়ন এবং আধুনিক সেচ প্রযুক্তি সুবিধা দেয়া শুরু হচ্ছে। এতে এসব উপজেলার প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমি ভূ-উপরিস্থ পানি নির্ভর সেচ সুবিধার আওতায় আসবে। এতে প্রতি বছর ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে অতিরিক্ত ৭৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত ১৩৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গত ২ জানুয়ারি একনেকের চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। আলোচ্য দুইটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মোট দেড় লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য অতিরিক্ত উৎপাদন করা সম্ভব হবে। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য এ এন সামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী বলেন, ভূ-উপরিস্থ পানি নির্ভর সেচ সুবিধা সম্প্রসারণের জন্য দুটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিসহ পরিবেশগত উন্নয়ন ও জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে। সম্প্রতি রাজধানীতে আয়োজিত কৃষি যন্ত্রপাতি মেলায় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, দিন দিন আমাদের কৃষিতে কায়িক শ্রম দেয়ার শ্রমিকের অভাব দেখা দিচ্ছে। যার ফলে কৃষিতে উৎপাদন ও সময় বেশি লাগছে। আবার নানা কারণে কৃষি জমির পরিমাণও কমছে। তবে দেশজুড়ে এখনও অনেক জমি অনাবাদি রয়ে গেছে। আমরা নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তাই সম্পদের সদ্ব্যবহার করতে হবে। অনাবাদি সম্ভাব্য সকল জমি চাষের আওতায় এনে খাদ্য নিরাপত্তা আরও জোরদার করবে সরকার। সূত্র জানায়, ভূ-উপরিস্থ পানি নির্ভর সেচ সুবিধা সম্প্রসারণের জন্য প্রকল্প দুটো প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুত ছাড়াও সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্প এলাকায় ফসলের উৎপাদন বাড়বে, যা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ধরে রাখাসহ দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। প্রকল্পটির উদ্যোক্তা কৃষি মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প প্রস্তাব থেকে জানা গেছে, প্রকল্পটি রংপুর বিভাগের চার জেলায় বাস্তবায়ন করা হবে। অপেক্ষাকৃত শুষ্ক আবহাওয়া, উচ্চ তাপমাত্রা, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত এবং ভূ-উপরিস্থ পানির স্বল্পতা প্রকল্প এলাকার প্রধান বৈশিষ্ট্য। প্রকল্প এলাকার মধ্য দিয়ে অনেক নদী, শাখা-নদী প্রবাহিত হয়েছে, যেখানে ভূ-উপরিস্থ পানির উৎস রয়েছে। তাছাড়া ওই সব এলাকায় অসংখ্য খাল-নালা রয়েছে এবং খালগুলো প্রায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না। তাই আবাদযোগ্য অনেক জমি পতিত রয়েছে। প্রকল্প এলাকার মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ৫ লাখ ৯১ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে প্রায় ৪ লাখ ৮৩ হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে এবং প্রায় এক লাখ আট হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধার বাইরে আছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সেচ বহির্ভূত জমির ১৬ হাজার ১৯৭ হেক্টর ভূ-উপরিস্থ পানি নির্ভর সেচ সুবিধার আওতায় আসবে এবং অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে। যে সব উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে সেগুলো হচ্ছে- রংপুর জেলার সদর, কাউনিয়া, গঙ্গাচড়া, পীরগাছা, পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ এবং তারাগঞ্জ উপজেলা। নীলফামারীর সদর, সৈয়দপুর, কিশোরগঞ্জ, জলঢাকা, ডোমার ও ডিমলা উপজেলা। লালমনিরহাটের সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতিবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলা। কুড়িগ্রামের সদর, ফুলবাড়ী, রাজারহাট, উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজীবপুর, নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলা। সূত্র জানায়, রংপুর, নীলফামারী, লালমণিরহাট ও কুড়িগ্রামে উন্নত ক্ষুদ্র সেচ সুবিধা প্রবর্তনের জন্য ইতোপূর্বে ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই ধাপে গত ১০ বছরে দুইটি প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। মঙ্গাপীড়িত এসব এলাকায় এ সময় এ দুটি প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১০ হাজার ৬০০ হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনা হয়। এর ফলে প্রতিবছর অতিরিক্ত প্রায় ৩৪ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।
×