ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিম্ন আদালতের আদেশের নথি আসার পর আদেশ

খালেদার জামিন আবেদনের শুনানি শেষ

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

খালেদার জামিন আবেদনের শুনানি শেষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে। নিম্ন আদালতের আদেশের নথি হাইকোর্টে পৌঁছানোর পর খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। অন্যদিকে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানি আজ সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ এই সময় পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আবেদনে রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান এ আদেশ প্রদান করেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে রবিবার সকাল থেকেই আদালত অঙ্গনে নেয়া হয় কড়া নিরাপত্তা। এর মধ্যে বিএনপির নেতাকর্মীরা আদালত অঙ্গনে প্রবেশ করেন। দুপুর দুটার আগেই আদালতের এজলাস কক্ষে বিএনপির আইনজীবী ও নেতাদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। জামিন আবেদনের শুনানিতে আইনজীবীদের অতিরিক্ত উপস্থিতির কারণে এজলাস থেকে উঠে যান বিচারপতিদ্বয়। রবিবার দুপুর ২টার পর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে জামিন আবেদনের শুনানি শুরুর পর পরই এ ঘটনা ঘটে। রবিবার খালেদা জিয়ার জামিন না হওয়াতে সুপ্রীমকোর্টে বিএনপিপন্থী আইনজীবী ও বিএনপির কর্মীরা মিছিল বের করেন। মিছিলে তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। জামিন আবেদনের শুনানিতে অংশ নিয়ে তিনি আদালতকে বলেন, ইতিহাসে এই প্রথম কোন প্রধানমন্ত্রী যিনি এতিমদের টাকা আত্মসাত করেছেন। একজন প্রধানমন্ত্রীর ছেলের স্বাক্ষরে কীভাবে টাকা চলে যায়? ওই সময় তার ছেলে প্রধানমন্ত্রীর বাসায়ই থাকতেন। একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি এত বড় দায় এড়াতে পারেন না। খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবীরা সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর বয়স, অসুস্থতা ও সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে জামিন আবেদনের আর্জি করেন। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেন। খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে খুরশীদ আলম খান এবং খালেদা জিয়ার পক্ষে এ জে মোহাম্মদ আলী অংশ নেন। এর আগে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শুরু করতে দুপুর ২টা ১০ মিনিটে এজলাস কক্ষে প্রবেশ করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিম। কিন্তু আইনজীবীদের অতিরিক্ত উপস্থিতিতে বিচারকদ্বয় এজলাস কক্ষ ত্যাগ করেন। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এজলাস কক্ষে প্রবেশ করে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীনকে লক্ষ্য করে বলেন, প্রেসিডেন্ট এমনটি হলে আমরা কীভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করব। জয়নুল আবেদীন জবাবে বলেন, মাননীয় আদালত, এটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা। এ মামলার প্রতি দেশবাসীর আগ্রহ আছে, আইনজীবীদেরও আগ্রহ আছে। এ সময় অপর বিচারপতি সহিদুল করিম বলেন, আপনাদের উপস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে আমাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ সময় দাঁড়িয়ে বলেন, আমরা উনাদের (জয়নুল আবেদীন) বলেছিলাম, তাদের পক্ষে ৩০ জন এবং আমাদের পক্ষে ৩০ আইনজীবী উপস্থিত থাকুক। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি। আদালত এ সময় বলেন, আপনারা ঠিক করেন, আমরা ১০ মিনিট পর আবার বসব। দুপুর আড়াইটায় বিচারকদ্বয় ফের এজলাস কক্ষে প্রবেশ করে শুনানি শুরু করেন। খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন তার আইনজীবীরা। আবেদনে ৩১টি যুক্তি দেখিয়েছেন তার আইনজীবীরা। এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদার আইনজীবীদের আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। সেদিন খালেদার জরিমানা স্থগিত করে বিচারিক আদালতের নথি ১৫ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে পাঠানোর আদেশ দেন। ওই শুনানির জন্য রবিবার দিন ধার্য করা হয়। শুনানিতে খালেদা জিযার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, এখানে সংক্ষিপ্ত সাজা। আদালতের রেওয়াজ আছে জামিন পেতে পারেন। এছাড়া তিনি বয়স্ক নারী। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, সংক্ষিপ্ত সাজায় জামিন পেতে পারেন, এটা কোন যুক্তি হতে পারে না। এছাড়া তিনি যে অসুস্থ, সেটার স্বপক্ষে কোন মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দেয়া হয়নি। এ মামলায় আপীল শুনানির জন্য প্রস্তুত হতে পারে। জামিন আবেদনের ওপর হাইকোর্টের আদেশের পর বিএনপির আইনজীবীদের বিক্ষোভ। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে যে দুটি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। শুনানিতে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ২০০৮ সালের মামলা। ২৩৭ কার্যদিবসে তিনি ১০৯ বার বিভিন্ন অজুহাতে সময় নিয়েছেন। এছাড়া ২৬ বার উচ্চ আদালতে এসেছেন। মোট কথা নয় বছরের মতো মামলাটি চলছে। সুতরাং এখানেও দেরি হবে না, তা বলা যায় না। তাই আপীল শুনানির জন্য এক মাসের মধ্যে পেপারবুক প্রস্তুত হতে পারে। যেমন বিডিআর মামলায় হয়েছিল। আমাদের কোর্টের সে প্রযুক্তি আছে। আদালত শুনানি শেষে নিম্ন আদালতের নথি আসার পর জামিন আবেদনের ওপর আদেশের জন্য সময় নির্ধারণ করেন। জামিনের জন্য খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা ৩২টি যুক্তি দেখিয়েছেন। যুক্তিতে বলা হয়, আবেদনকারীর বয়স ৭৩ বছর। তিনি শারীরিকভাবে বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। ৩০ বছর ধরে গেঁটে বাত, ২০ বছর ধরে ডায়াবেটিস, ১০ বছর ধরে উচ্চ রক্তচাপ ও তাছাড়া ১৯৯৭ সালে তার বাম হাঁটু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এবং ডান হাঁটু ২০০২ সালে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। শারীরিক এসব জটিলতার কারণ বিবেচনায় নিয়ে তার জামিন মঞ্জুরের আবেদন জানানো হয়। গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন দায়ের করেন। এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান মামলাটিতে খালেদা জিয়ার ৫ বছর কারাদ- দেন। একইসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদাপুত্র তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামির ১০ বছর করে কারাদ- দেন। রায় ঘোষণার ১১ দিন পর ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা রায়ের সার্টিফাইড কপি বা অনুলিপি হাতে পান। সাজা ঘোষণার পর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ॥ জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানি আজ সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ সে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আবেদনে ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান রবিবার এ আদেশ দেন। একই আদালত গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদ- দিয়ে কারাগারে পাঠান। রবিবার জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় চতুর্থ দিনের মতো যুক্তিতর্ক শুনানির দিন ছিল। কিন্তু খালেদা জিয়াকে এদিন কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়নি। সকালে আদালত বসার পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপার্সনের আপীল হাইকোর্ট শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে। রবিবার দুপুরে তার জামিন আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। সুতরাং দাতব্য ট্রাস্ট মামলার শুনানি সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করে খালেদা জিয়ার জামিন বাড়ানো হোক। দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল এ সময় বলেন, খালেদা জিয়াকে রবিবার যেহেতু হাজির করা হয়নি, সোমবার তাকে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হোক। এ সময় খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী আবদুল রেজাক খান হাইকোর্টে জামিন শুনানির অপেক্ষায় থাকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আদালতে হাজির করার আদেশ না দিতে অনুরোধ করেন বিচারককে। শুনানি শেষে বিচারক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান শুনানি আজ সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করে জামিনের মেয়াদ বাড়িয়ে দেন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় আরও একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর সাবেক নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
×