ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জনপ্রিয় ধারার জয়জয়কার, ব্যতিক্রম কারাগারের রোজনামচা

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

জনপ্রিয় ধারার জয়জয়কার, ব্যতিক্রম কারাগারের রোজনামচা

মেলা প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলছে নানা হিসাব-নিকাস। বিপুল পাঠক প্রতিদিন মেলায় আসছেন। বিক্রি কেমন? কোন কোন বই বেশি যাচ্ছে? কোন কোন লেখক আছেন বেস্ট সেলার তালিকায়? মেলার ২৫তম দিনে সেসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাঠকের আগ্রহের কেন্দ্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালীর মহান নেতা কারাগারে বসে যে ডায়েরি লিখেছিলেন সেটি গত বছর বই আকারে প্রকাশ করে বাংলা একাডেমি। অনন্য সাধারণ গ্রন্থ ‘কারাগারের রোজনামচা’ নিয়ে তখন থেকেই বিপুল কৌতূহল পাঠকের। মহাজীবনের আরও একটি অধ্যায় উন্মোচিত হয়েছে বইতে। বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের জেল জীবনের কথা উঠে এসেছে। অত্যন্ত ঘটনাবহুল সময়ের স্মৃতি, যখন যেটুকু সম্ভব, নিজের ডায়েরিতে লিখে রেখে ছিলেন জাতির জনক। প্রিয় পতœী ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের পরামর্শ ও অনুপ্রেরণায় লেখা। অমূল্য এই সম্পদ রক্ষার বিপুল সংগ্রাম করতে হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে। এবং আশার কথা যে, তাঁরা যারপরনাই সফল। চাহিদার তুলনায় সামান্যই ছাপতে পেরেছে একাডেমি। ফলে বইটি সংগ্রহে বিক্রেতাদের মধ্যে সারা বছরই প্রতিযোগিতা লেগে ছিল। এখন মেলা থেকে বইটি সংগ্রহ করছেন পাঠক। এখানেও বইটি বিক্রির শীর্ষে। চাহিদা এত যে, নিয়মিত ছাপা হওয়া বইয়ের কোন কপি আপাতত বাইরে বিক্রি করা হচ্ছে না। সব বই চলে আসছে মেলায়। বাংলা একাডেমির সবকটি স্টল ও বিক্রয় কেন্দ্র থেকে বিক্রি হচ্ছে ‘কারাগারের রোজনামচা।’ মেলার সদস্য সচিব জালাল আহমেদ জানান, বইটি গড়ে প্রতিদিন ৬০০ কপি করে বিক্রি হচ্ছে। রবিবার পর্যন্ত মোট ১৫ থেকে ২০ হাজার বই বিক্রি হয়েছে বলে জানান তিনি। একাডেমির অভিধানগুলোর আছে বিশেষ চাহিদা। বরাবরের মতোই প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। তুলনামূলকভাবে এগিয়ে আছে ইংরেজী থেকে বাংলা অভিধানের বিক্রি। অন্যবারের মতোই জনপ্রিয় ধারার সাহিত্য বেশি টানছে পাঠকদের। এবং এ আলোচনায় যথারীতি এগিয়ে আছেন হুমায়ূন আহমেদ। জননন্দিত লেখক যে নেই আর, মেলা ঘুরে সে কথাটি একবারের জন্যও মনেই হয় না। প্রয়াত লেখকের বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত বই নিয়ে কাড়াকাড়ি অবস্থা চলছে বললেও ভুল হবে না। অনন্যা, সময়, কাকলী, পার্ল, অনুপমসহ বেশ কিছু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে লেখকের বই বের হয়েছে। সবখানেই ভিড়। তবে মূল ঠিকানা হয়ে আছে অন্যপ্রকাশ। এখানে চারপাশ খোলা প্যাভিলিয়ন। অনেক বিক্রয়কর্মী। কারও বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ নেই। আরও অনেকের বই বিক্রি হচ্ছে বটে। মূল বিক্রি হুমায়ূন আহমেদ। প্রকাশক মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, যে বইটি পড়া হয়নি সেটিই নতুন। সেটিই সংগ্রহ করছেন পাঠক। এভাবে লেখকের সব বই-ই বিক্রি হচ্ছে। তবে একটু সিরিয়াসধর্মী লেখা ‘দেয়াল’ বিক্রির শীর্ষে বলে জানান তিনি। সব মিলিয়ে প্রতিদিন কত বই বিক্রি হচ্ছে হুমায়ন আহমেদের? এমন প্রশ্নের হিসাব দিতে পারলেন না প্রকাশক কিংবা দিতে রাজি হলেন না। তবে স্বীকার করলেন, বইমেলায় এখনও সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে হুমায়ূন আহমেদের বই। এদিকে, জনপ্রিয়তা কিংবা বই বিক্রির হিসেবে বরাবরের মতোই এগিয়ে আছেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। মেলায় আসা খুদে পাঠকদের প্রথম পছন্দ তিনি। জনপ্রিয় সায়েন্স ফিকশন লেখকের নতুন তিনটি বই মেলায় এসেছে। কয়েকটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হলেও, আলাদা পরিচিতি আছে তা¤্রলিপির। সবার আগে এখানেই ভিড় করে জাফর ইকবাল ভক্তরা। লেখক নিজেও নিয়মিত বসেন প্যাভিলিয়নের সামনে। এখান থেকে এবার প্রকাশিত হয়েছে কিশোর উপন্যাস ‘সাইক্লোন।’ বিক্রি কেমন? জানতে চাইলে যথারীতি মুখে কুলুপ আঁটেন প্রকাশক তারিকুল ইসলাম রনি। বলেন, জাফর ইকবাল স্যারের বই তো ধরেন সব সময়ই বেশি যায়। তবে নানা মাধ্যমে খোঁজ খবর করে জানা যায়, এখন পর্যন্ত জাফর ইকবালের বইটি বিক্রি হয়েছে ১৫ থেকে ২০ হাজার কপি। সময় প্রকাশন থেকে এসেছে একই লেখকের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ‘ত্রাতিনা’। পার্ল পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘তবুও টুনটুনি তবুও ছোটাচ্চু।’ এ বইগুলোর বিক্রিও খুব ভাল বলে জানা গেছে। আনিসুল হকের নিজস্ব ভাষা। ছোট ছোট বাক্য। তাঁর সুন্দর বলার সঙ্গে অনেক আগেই পরিচিত হয়েছিলেন পাঠক। সাপ্তাহিক ‘যায়যায় দিন’র ঈদ সংখ্যায় পড়া গল্পটি আজও মনে দাগ কেটে আছে। প্রথম উপন্যাস ‘ভালোবাসা আমি তোমার জন্য কাঁদছি’ পড়ে, আহা, কতজন কেঁদেছেন! সেই যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা, এখনও তা-ই আছেন। এবারের মেলায় একাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে তার। নাম দেখেই বই কিনে নিচ্ছেন পাঠক। এবার মেলায় এসেছে আনিসুল হকের বেশ কয়েকটি নতুন বই। ইতিহাস নির্ভর রচনা ‘আঁধারের যাত্রী’ প্রকাশ করেছে প্রথমা। বইটি খুব ভাল বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে। অবশ্য প্যাভিলিয়নের সামনে দাঁড়িয়ে থেকেও সেটি বেশ বোঝা যাচ্ছে। সময় থেকে এসেছে একই লেখকের ‘ও বন্ধু কাজলভোমরা’। এটিও প্রতিদিন ভাল বিক্রি হচ্ছে। শিশুতোষ বই ‘ভূতের সঙ্গে গুড্ডুবুড়ার সেলফি’ এবং ‘ইটি তুমি কেমন আছো’ নিয়েও আছে বেশ চাহিদা। সুমন্ত আসলামেরও একটি পাঠক শ্রেণী গড়ে উঠেছে। জনপ্রিয় লেখক। প্রতি মেলায় কয়েকটি নতুন উপন্যাস প্রকাশিত হয়। এবার একাধিক বই এসেছে। ভাল বিক্রিও হচ্ছে। অন্যপ্রকাশ থেকে আসা ‘স্পর্শের বাইরে’ বিশেষ বিক্রি হচ্ছে বলে জানা যায়। সায়েন্স ফিকশন লেখক হিসেবে মোশতাক আহমেদ ভাল জায়গা করে নিয়েছেন। এবার অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে আসা ‘ছায়াস্বর্গ’ রয়েছে বেস্ট সেলার বইয়ের তালিকায়। ভাষাচিত্র থেকে প্রকাশিত সাদাত হোসেনের ‘নিঃসঙ্গ নক্ষত্র’ প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। এবারে মেলায় নতুন লেখক হিসেবে আলোচনায় এসেছেন আয়মান সাদিক। তার লেখা ‘নেভার স্টপ লার্নিং’ নিয়ে ভাল আগ্রহ পাঠকের। সর্বাধিক বিক্রির তালিকায় আছে বইটি। প্রকাশ করেছে অধ্যয়ন। ইমদাদুল হকের পাঠক তৈরি হয়ে আছে বহুকাল আগে থেকেই। এখনও তারা প্রিয় লেখকের বই খুঁজে নিয়ে কিনছেন। অনন্যা থেকে প্রকাশিত তার ‘একটি রহস্য উপন্যাস’ ভাল বিক্রি হচ্ছে বলে জানা যায়। অন্যান্য বইয়ের বিক্রিও মন্দ নয়। ১০৭ নতুন বই ॥ মেলায় এদিন নতুন বই এসেছে ১০৭টি মেলা মঞ্চের আয়োজন ॥ গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে ছিল ‘ভাষাসংগ্রামী নাদেরা বেগম, ভাষাসংগ্রামী মমতাজ বেগম এবং একুশের শহীদ মিনারের অন্যতম রূপকার নভেরা আহমেদ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। নির্ধারিত প্রবন্ধকার রামেন্দু মজুমদার বিদেশে অবস্থান করায় তার লিখিত ভাষাসংগ্রামী নাদেরা বেগম প্রবন্ধটি পাঠ করেন ত্রপা মজুমদার। ‘ভাষাসংগ্রামী মমতাজ বেগম’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রফিউর রাব্বি। ‘একুশের শহীদ মিনারের অন্যতম রূপকার নভেরা আহমেদ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রেজাউল করিম সুমন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শফি আহমেদ এবং মালেকা বেগম। সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ আবুল মকসুদ। সন্ধ্যায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফেরদৌস আরা, মোঃ রেজাউল করিম, মামুন সিদ্দিকী এবং মাহবুবা রহমান।
×