ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পূর্বের ঋণ আমানতের সীমা বহাল রাখার দাবি

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

পূর্বের ঋণ আমানতের সীমা বহাল রাখার দাবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগের আমানত ও ঋণের অনুপাত সীমা (এডিআর) বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে ব্যাংক খাতের উদ্যোক্তারা। নতুন অনুপাত সীমার কারণে বিনিয়োগ কমে যাবে-এমন যুক্তি দেখিয়ে উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) নেতারা সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী ও গবর্নর বরাবর চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে বিএবি নেতৃবৃন্দরা যেসব দাবি জানিয়েছেন তা হলো, এডিআর আগের অবস্থায় ফেরানো, চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার সরবরাহ বৃদ্ধি, আবাসন খাতের ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি রাখার বিধান পুরোপুরি তুলে দেয়া এবং এডিআর সীমা থেকে কৃষি ঋণকে বাদ দেয়া। এ ছাড়া বেসরকারী ব্যাংক থেকে সরকারী প্রতিষ্ঠানের তহবিল প্রত্যাহার বিষয়েও সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন বিএবির নেতারা। এর আগে একই বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির। এর আগে সম্প্রতি অগ্রণী ব্যাংকের এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির বলেন, একটি বেসরকারী ব্যাংক (ফারমার্স) খারাপ অবস্থায় পড়ে গেছে। বেসরকারী ব্যাংক থেকে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আমানত সরিয়ে নিতে চাইছে। একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এ আতঙ্ক আগে শেয়ারবাজারে ছিল, এখন ব্যাংকে চলে আসছে। বিষয়টি নিয়ে উপস্থিত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হস্তক্ষেপ চান গবর্নর। গবর্নর বলেন, আমদানি যে হারে বাড়ছে, রফতানি ও প্রবাসী আয় সে হারে আসছে না। এতে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ বেড়েছে। দাম বেড়ে গেছে। চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় ১৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। এর মাধ্যমে বাজার থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে এসেছে। পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে গবর্নর বলেন, ৫৭ ব্যাংকের মধ্যে ৩৮ ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) সীমার নিচেই আছে। অযথাই বলা হচ্ছে, ঋণসীমা সমন্বয়ের কারণে বড় প্রভাব পড়বে। নতুন নিয়মের ফলে ১১ হাজার কোটি টাকার আমানত লাগবে। এর মধ্যে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন, বাংলাদেশ কৃষি, বেসিক ও ফারমার্স ব্যাংকেরই ৬ হাজার কোটি টাকা। বাকি বেসরকারী ১৫ ব্যাংকের লাগবে ৫ হাজার কোটি টাকা। আগ্রাসী ঋণ বিতরণ বন্ধ, ঋণের মান ভাল ও ঋণশৃঙ্খলা নিশ্চিতে ঋণসীমা কমানো হয়েছে। আমানতের সুদ হার বাড়তে শুরু করেছে, এটা আমানতকারীদের জন্য ভাল। তবে ঋণের সুদহার বাড়াটা ভাল নয়। এটা স্বল্প সময়েই ঠিক হয়ে যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, নতুন আমানত ও ঋণসীমার ফলে বাজারে তারল্যসঙ্কট দেখা দিয়েছে। আমানত কমে যাওয়ায় উচ্চমূল্যে তা সংগ্রহে ব্যাংকগুলো তৎপর হয়ে উঠেছে। এতে আমানতের সুদহার বেড়ে যাচ্ছে। উচ্চমূল্যে আমানত সংগ্রহের কারণে ঋণের সুদহারও বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে ব্যাংকগুলো। এর ফলে অদূর ভবিষ্যতে দ্রব্যমূল্যও বেড়ে যাবে। সুদহার বাড়লে বিনিয়োগও কমে আসবে। এ জন্য প্রচলিত ব্যাংকগুলোর জন্য এডিআর ৮৫ শতাংশ ও ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য ৯০ শতাংশে ফিরিয়ে আনার পরামর্শ দেয়া হয় চিঠিতে। বর্তমানে এই হার যথাক্রমে ৮৩ দশমিক ৫ ও ৮৯ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট সম্পর্কে ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ভোগ্যপণ্যের আমদানি ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে গেছে, পাশাপাশি রফতানিও কমেছে। ভোগ্যপণ্য আমদানি বন্ধ করা যাবে না, অন্যদিকে রফতানি আর প্রবাসী আয়ও বাড়ানো যাচ্ছে না। ফলে ডলার সঙ্কট হচ্ছে। আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে পর্যাপ্ত ডলার মিলছে না। এতে সময়মতো দায় পরিশোধ করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি ডলারের দামও বেড়ে যাচ্ছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় ডলার সরবরাহের প্রয়োজন। এ ছাড়া কৃষি খাতের ঋণ নিয়ে বলা হয়েছে, কৃষি বিনিয়োগ বাধ্যতামূলক। ঋণ বিতরণের লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হলে ব্যাংকের হাতে থেকে যাওয়া টাকা অন্য ব্যাংকে দেয়া হয়। এ জন্য ব্যাংকগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, মুনাফা হারাচ্ছে। কৃষিঋণের সুদহার ৯ শতাংশ, যা বর্তমানে আমানত হারের চেয়ে কম। বাধ্যতামূলক কৃষিঋণ দিতে গিয়ে এডিআর বেশি হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে কৃষিঋণকে এডিআর হিসাবায়ন থেকে বাইরে রাখার দাবি জানিয়েছে বিএবি। আবাসন ঋণ নিয়ে বলা হয়েছে, আবাসন ঋণ শতভাগ নিরাপদ। এরপরও আবাসন খাতের নিয়মিত ঋণের বিপরীতে ২ শতাংশ সাধারণ সঞ্চিতি রাখতে হচ্ছে। এর কোন সন্তোষজনক কারণ নেই। এ জন্য আবাসন ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি না রাখার দাবি জানিয়েছে বিএবি। এর আগে ব্যাংক কোম্পানি আইন পরিবর্তনের জন্য দৌড়ঝাঁপ করেন বিএবির নেতারা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি জাতীয় সংসদে এই আইনের সংশোধনী পাস হয়। এতে আমানতকারীদের অধিকার সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা। এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে জানানো হয়, ব্যাংকগুলো ঋণসীমা সমন্বয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় পাবে, যা আগে ছিল জুন পর্যন্ত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারে বলা হয়েছে, নতুন ঋণসীমা পরিপালনের সময়সীমা ৩০ জুনের পরিবর্তে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পুনর্নিধারণ করা হলো। এ ক্ষেত্রে গত ৩০ জানুয়ারি বা তার আগে গ্রাহককে দেয়া কোন প্রতিশ্রুতি (কমিটমেন্ট) ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সরাসরি ঋণে (ফান্ডেড) পরিণত হওয়ার কারণে ঋণসীমা বেড়ে গেলেও তা নির্দেশনার লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য করা হবে না। তবে এ ক্ষেত্রেও ঋণ আমানত হার ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনতে হবে। প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আমানত সংগ্রহ করলে ৮৫ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারত। গত ৩০ জানুয়ারি এক সার্কুলারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, আমানতের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৮৩ টাকা ৫০ পয়সা ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। ইসলামী ধারার ব্যাংক আগে ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ৯০ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারত, নতুন নির্দেশনায় যা ৮৯ টাকা করা হয়। যেসব ব্যাংকের ঋণ নতুন সীমার বেশি রয়েছে, তারা তা সমন্বয় করতে পাঁচ মাসের মতো সময় পেয়েছিল।
×