ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মত প্রস্তাব গৃহীত

সিরিয়ায় অস্ত্রবিরতি আহ্বান

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সিরিয়ায় অস্ত্রবিরতি আহ্বান

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সর্বসম্মত অস্ত্রবিরতি প্রস্তাব সত্ত্বেও সিরীয় বাহিনী রাজধানী দামেস্কের পূর্বাঞ্চলীয় বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব গৌতায় বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে। জাতিসংঘ অবিলম্বে সেখানে অস্ত্রবিরতি কার্যকরের আহ্বান জানিয়েছে। এএফপি। রবিবার সকাল থেকে শাসক বাশার আল আসাদের অনুগত বাহিনী পূর্ব গৌতার দুমা অঞ্চলে বোমা বর্ষণ শুরু করেছে বলে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মানবাধিকার গ্রুপ সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে। চলতি মাসের ১৮ তারিখ থেকে সরকারী বাহিনী ওই অঞ্চলে বিমান ও স্থল হামলা অব্যাহত রেখেছে। অবজারভেটরির দেয়া তথ্যমতে রবিবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫১৯ জনে পৌঁছেছে। নিহতদের মধ্যে ১২৯ জন শিশু। এর আগে শনিবার নিরাপত্তা পরিষদ অবরুদ্ধ ও আহত লোকজনের কাছে জরুরী ত্রাণ পৌঁছানোর সুযোগ দিতে ৩০ দিনের অস্ত্রবিরতির একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাস করে। বৃহস্পতিবার ওই প্রস্তাবের ওপর ভোটগ্রহণের কথা থাকলেও রাশিয়ার আপত্তির কারণে খসড়া প্রস্তাবে পরিবর্তন আনায় ভোটগ্রহণ পেছাতে হয়। প্রস্তাবে জরুরী ত্রাণ সরবরাহ পৌঁছানোর জন্য অবিলম্বে ৩০ দিনের অস্ত্রবিরতি এবং বেসামরিক লোকজনকে ওই এলাকা থেকে বের করে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। কুয়েত ও সুইডেন খসড়া প্রস্তাবটি উপস্থাপন করে। প্রস্তাবটি পাস হওয়ার পর জাতিসংঘ মহাসচিব বিবাদমান সব পক্ষকে বেসামরিক লোকজনকে রক্ষার চূড়ান্ত দায়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য হলেও এ দায় এড়িয়ে যাওয়া যায় না। রবিবারের বিমান হামলায় হতাহতের তাৎক্ষণিক খবর দিতে পারেনি অবজারভেটরি। সংস্থার প্রধান রামি আবদেল রহমান এদিন দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে সরকারী বাহিনী ও বিদ্রোহী জায়েশ আল ইসলামের মধ্যে সংঘর্ষের খবর দিয়েছে। তিনি বলেন, ওই এলাকায় এ ধরনের সংঘর্ষ নৈমিত্তিক ঘটনা। এর ফলে সপ্তাহ ধরে চলা লড়াইয়ে কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেনি। রাশিয়ার পছন্দ মতো খসড়া প্রস্তাবে পরিবর্তন আনায় তারা এতে ভেটো দেয়নি। সিরিয়ায় সংঘাত শুরুর পর এ নিয়ে জাতিসংঘে উত্থাপিত বিভিন্ন প্রস্তাবে মস্কো মোট ১১ বার ভেটো দিয়েছে। এদিকে জায়েশ আল ইসলাম ও ফাইলাক আল রহমান নামে বিদ্রোহীদের দুটি গ্রুপ ওই অস্ত্রবিরতিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, সরকারী বাহিনী অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করে হামলা অব্যাহত রাখলে তারা জবার দিতে প্রস্তুত রয়েছে। অবরুদ্ধ এলাকায় আহত লোকজনের কাছে প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দিতে গ্রুপগুলো ত্রাণ বহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজি আছে বলে জানিয়েছে। উভয় গ্রুপই ইসলামপন্থী, ২০১৩ সালে গ্রুপ দুটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গত মাসের শেষের দিকে জাতিসংঘের উদ্যোগে কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনায় গ্রুপ দুটি অংশ নিয়েছিল। তুরস্কও যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগানের মুখপাত্র ইবরাহিম কালিন টুইটারে লেখেন, ‘সিরিয়ার শাসক চক্র পূর্ব গৌতায় গণহত্যা চালাচ্ছে। এ গণহত্যা বন্ধে বিশ্বকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে।’ এর আগে শুক্রবার তুর্কী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসগলু বেসামরিক এলাকায় বোমাবর্ষণ বন্ধে ইরান ও রাশিয়াকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। সরকারী বাহিনী বেসামরিক এলাকায় লক্ষ্য করে হামলা করে আক্রমণ শুরুর পর পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে চলেছে। হাসপাতালগুলোও এই আক্রমণ থেকে বাদ যাচ্ছে না। গৌতা থেকে চিকিৎসা কর্মীরা জানিয়েছেন, ২২টি হাসপাতাল বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাত্র তিনটি হাসপাতাল এখন পুরোপুরি চালু আছে। রাশিয়া অবশ্য পূর্ব গৌতা অভিযানে অংশগ্রহণের কথা অস্বীকার করেছে। আসাদের সহায়তায় মস্কো ২০১৫ সাল থেকে সিরিয়ায় সামরিক তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে।
×