ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডলারের দাম কেন পড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ডলারের দাম কেন পড়ছে

২০১৭ সালের গোড়ার দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উদ্বিগ্ন ছিলেন এ ভেবে যে ডলার খুব বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠছে। ২০১৮ সালের শুরুতে তার এ নিয়ে উদ্বিগ্ন বোধ করার কোন কারণ থাকেনি। কারণ এ এক বছরে ডলারের দাম পড়ে গেছে এবং পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো বার্ষিক হিসাবে হ্রাস পেয়েছে। ছয়টি মুদ্রার সঙ্গে ডলারের মূল্যমান পরিমাণের এক সূচকে দেখা যায় যে ২০১৭ সালে ডলারের দাম প্রায় ১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০০৩ সালে ডলারের বার্ষিক দরপতন হয়েছিল প্রায় ১৫ শতাংশ। তারপর থেকে এতবড় বার্ষিক মূল্যহ্রাস আর হয়নি। সমস্যাটা কোথায়? কেন ডলারের দাম কমছে? প্রথম দৃষ্টিতে এই মূল্যহ্রাসকে রহস্যময় বলে মনে হতে পারে। কারণ ফেডারেল রিজার্ভ গত বছর দফায় দফায় সুদের হার বাড়িয়েছে। সুদের হার বাড়লে সচরাচর ডলারের মূল্য বাড়ে। কারণ মার্কিন এ্যাসেট কেনার জন্য আরও বেশি সংখ্যায় বিদেশী বিনিয়োগকারী পাওয়া যায়। তা ছাড়া এতে করে মুদ্রাস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে থাকে। উপর্যুপরি দুই প্রান্তিকে মার্কিন অর্থনীতির শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। বড় দিনের ছুটির সময় কেনাবেচা বেশ ভাল হওয়ায় বোঝা যায় যে এই ধারা বছরের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত অব্যাহত ছিল অনেক বিশেষজ্ঞ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে সাম্প্রতিক কর হ্রাসের পদক্ষেপের ফলে অর্থনীতির এই গতিশীলতা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু তার পরও ডলারের দাম হ্রাস পাওয়া বিস্ময়কর মনে হতে পারে। কিন্তু একটু খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে যে এতে আসলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ইউরোপীয় অর্থনীতিতে বিশেষ করে জার্মানি ও ফ্রান্সের অর্থনীতিতে প্রাণের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। এ কারণে কিছু বিনিয়োগকারী ডলারের দিকে না ঝুঁকে ইউরোর দিকে জড়ো হচ্ছে। সম্প্রতি কর হ্রাসের কারণে আমেরিকান ফার্মগুলো থেকে আরও বেশি মুনাফা তুলে নেয়া যাবে এই প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে ইউরো বা অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতাটি প্রবল হয়ে উঠেছে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডলারের মূল্য হ্রাসের দ্বিতীয় কারণ নীতিনির্ধারকদের মনোভাবের ক্ষেত্রে পরিবর্তন। এই সেদিন পর্যন্ত কোন দেশ মুদ্রার শক্তিশালী বিনিময় হারের ব্যাপারে আগ্রহী ছিল না। সস্তা মুদ্রাকেই বরং দাম দেয়া হতো। আমদানি কমানো ও রফতানি বাড়িয়ে দেয়াকে বৈশ্বিক চাহিদার এক বৃহত্তর ভাগ করায়ত্ত করার উপায় হিসেবে দেখা হতো। ২০১০ সালে ব্রাজিলের অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন যে ওই লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন দেশের মধ্যে মুদ্রাযুদ্ধ চলছে। তারা তাদের মুদ্রার বিনিময় হার কমানোর জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। ধনী বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর আশঙ্কা ছিল যে তাদের কঠোরতর মুদ্রানীতির আভাস পাওয়া মাত্র তাদের মুদ্রার দাম বেড়ে যাবে এবং এতে তাদের অর্থনীতির ক্ষতি হবে। কিন্তু এখন বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে তেজীভাবের শঙ্কার হওয়ায় খুব কম দেশই তাদের মুদ্রার দাম বেড়ে গেলে তেমন একটা আপত্তি করবে। সুদের হার শুধু যে আমেরিকায় বেড়েছে তা নয়, কানাডা ও ব্রিটেনেও বেড়েছে। বিশেষ ধরনের মুদ্রানীতি ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করে নিয়ে মৌলিক বিষয়গুলোর ওপর অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ হলো তৃতীয় শক্তি যা ডলারের দাম নিচের দিকে ঠেলছে অর্থাৎ অন্যান্য প্রধান মুদ্রার সঙ্গে এর বিনিময়মূল্য কমছে। মুদ্রার মল্যমান কতটুকু কমেছে তা নির্ণয়ের কিছু বেঞ্চমার্ক আছে। তার মধ্যে একটা হলো ‘দি ইকোনমিস্ট’-এর ‘বিগ ম্যাক ইনডেক্স’। এই সূচকের ভিত্তি হলো এমন ধারণা যে পণ্য ও সার্ভিসের দাম সারা বিশ্বে এক হওয়া উচিত। কম বা বেশি হলে তা দিয়ে সে দেশের মুদ্রার শক্তিশালী বা দুর্বল অবস্থা নির্ণয় করা যায়। যেমন- একটা বার্গারের কথাই ধরা যাক। ওই সূচকের সর্বশেষ সংস্করণ অনুযায়ী গুটিকয়েক কর্মী দেশের মুদ্রার দাম আমেরিকার ডলারের চেয়ে বেশি। এক দশক আগের অবস্থার তুলনায় এটা এক বিরাট পরিবর্তন। ডলারের সঙ্গে কোন কোন দেশের মুদ্রার বিনিময়মূল্য ইতোমধ্যে লাফ মেরে বেড়ে গেছে। গত গ্রীষ্মে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইউরোর দাম ১ দশমিক ১১ ডলার থেকে বেড়ে ১.২০ ডলার হয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার অন্যান্য মুদ্রা শক্তিশালী হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা আছে। গত বছর ইউরোর মূল্যমানের সঙ্গে তুলনা করলে ডলার ১২ শতাংশ দুর্বল হয়েছে। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ম্যাককরমিকের নীতিনির্ণায়ক বেনোইট কোইয়ুব বলেছেন যে ডলারের এই দুর্বলতা ২০১৮ সালের অধ্যায়জুড়ে অব্যাহত থাকবে। চীন ও ইউরোপের ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের শক্তি প্রদর্শনের যেসব খবর আসছে তাতে ডলারের জন্য সামনে আরও বেশি বেদনা সম্ভবত অপেক্ষা করছে। কারণ বিনিয়োগকারীদের অর্থ অন্যান্য অর্থনীতির দিকে ধাবিত হতে থাকবে। অর্থনীতি ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট ও অন্যান্য
×