ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গুগল এ্যামাজনের মনোপলি কিভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

গুগল এ্যামাজনের মনোপলি কিভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়

বেশি দিন আগের কথা নয়, গুগল, ফেসবুক, এ্যামাজন ও অন্যান্য কোম্পানির দিকে লোকে সম্ভ্রমের চোখে ডাকাত। কালক্রমে এগুলো এক একটি টাইটানে বা বিশাল বিশাল কোম্পানিতে পরিণত হলো। শত শত কোটি ডলার আয় করতে লাগাল। আজ এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। বলা হয় যে এরা কয়েকটি বিশাল দৈত্যে পরিণত হয়েছেই শুধু নয় যে এরা প্রতিযোগিতার পথে বাধ্য এবং গণতন্ত্র বিধ্বংসী। নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ তাদের জরিমানা করে, রাজনীতিকরা নানা সমালোচনায় বিদ্ধ করে। এদের এক সময়ের ঘোর সমর্থক হুঁশিয়ার করে দিয়েছে যে এদের ক্ষতিসাধন করার দারুণ ক্ষমতা আছে। সব অভিযোগই যে সত্য এমন মনে করার কারণ নেই। ব্যবসা বড় হলেই যে তার মধ্যে শয়তানি এসে ভর করবে এমন ধারণাও ঠিক নয়। এ্যাপল বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে প্রশংসিত শ্রেফ এই কারণে যে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখেও কোম্পানিটি মানুষ যা কিনতে চায় সেই জিনিসগুলো তৈরি করছে। তবে বড় বড় টেক প্লাটফর্মগুলো বিশেষ করে ফেসবুক, গুগল ও এ্যামাজন সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিয়ে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। সেটা অংশত এই কারণে যে এরা অনেক সময় আইনগত অব্যাহতির সুবিধা লাভ করে থাকে। ব্যবহারকারীরা ফেসবুক, গুগলে কি করছে তার জন্য এই দুই প্রতিষ্ঠানকে কদাচিৎই দায়ী করা হয়। বছরের পর বছর ধরে এ্যামাজনের বেশিরভাগ আমেরিকান ক্রেতা কোন বিক্রয় কর দেয়নি। বৃহৎ টেক কোম্পানিগুলো বাজারে কোন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় না। ক্রমবর্ধমানভাবে তারা নিজেরাই বাজারে পরিণত হয়ে সিংহভাগ ডিজিটাল অর্থনীতির অবকাঠামো যোগাচ্ছে। তাদের অনেক সার্ভিসই বিনামূল্যে মনে হলেও ব্যবহারকারীরা তাদের ড্যাটা যোগানোর মধ্য দিয়ে মূল্য পরিশোধ করে। তারা ইতোমধ্যে অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। শেয়ার বাজারে তাদের বিশাল মূল্য দেখে বোঝা যায় বিনিয়োগকারীরা আশা করছে আগামী দশকে তাদের মূল্যের আকার দ্বিগুণ বা ত্রিগুণ হয়ে দাঁড়াবে। এমন মনে করার যুক্তিসঙ্গত কারণ অছে যে টেক টাইগাররা নিজেদের আধিপত্য রক্ষা ও প্রসারিত করতে আপন ক্ষমতাকে কাজে লাগাবে। এতে ভোক্তা সাধারণেরই ক্ষতি হবে। টেক প্লাটফর্মগুলো এত প্রাধান্য বিস্তার করতে পেরেছে এই কারণে যে ‘নেটওয়ার্ক ইফেক্ট’ থেকে তারা লাভবান হয়। আকার আয়ও বড় আকার ধারণ করে। যেমন ধরুণ, এ্যামাজন যত বেশি বিক্রেতা আকর্ষণ করতে পারবে তত বেশি ক্রেতা সেখানে কেনাকাটা করতে যাবে এবং তত বেশি ক্রেতারা আকর্ষিত হবে। এভাবে তা চলতেই থাকবে। কোন কোন হিসাবে এ্যামাজন আমেরিকান অনলাইন শপিংয়ের ৪০ শতাংশেরও বেশি দখল করে আছে। অন্যদিকে মিডিয়া শিল্পে ফেসবুকের আধিপত্য। এর মাসিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২শ’ কোটিরও বেশি। গুগল ছাড়া ফার্মগুলো চলতে পারে না। কোন কোন দেশে গুগল ওয়েব সার্চের ৯০ শতাংশেরও বেশি প্রসেস করে থাকে। ফেসবুক ও গুগল আমেরিকার অনলাইন বিজ্ঞাপনী আয়ের দুই-তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণ করে। টেক জয়েন্টরা এমন আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে যে অনাগতদের টিকতে পারা কঠিন। ফেসবুক বিশ্বে ব্যক্তিগত তথ্যের বৃহত্তম ভা-ারের অধিকারীই শুধু নয়, এর কাছে সদস্যদের এবং তারা কিভাবেও পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তার দীর্ঘতম তালিকাও আছে। এ্যামাজনের কাছে অন্য যে কোন ফার্মের চাইতে অনেক বেশি মূল্যগত তথ্য আছে। এ্যামাজনের এলেক্সা ও গুগলের এ্যাসিস্টেনের মতো ভয়েস এ্যাসিস্টেন্টগুলো তাদের মানুষের ইন্টারনেট সম্পর্কিত। অভিজ্ঞতাগুলোর ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ এনে দেবে। এই ধারা চলতে থাকলে একপর্যায়ে টেক শিল্পের তেজীভাব যখন কমে আসবে তখন ভোক্তাদেরই ক্ষতি হবে। স্টার্টআপগুলোর আয় কমবে। বেশিরভাগ ভাল ভাল আইডিয়া টাইটানগুলোই কিনে নেবে এবং কোন না কোনভাবে মুনাফা চলে যাবে তাদেরই হাতে। মনোপলি আরও বেশি পাকাপোক্ত হবে। এ অবস্থান কি করণীয় অতীতে সমাজগুলো হয় মনোপলি ভেঙ্গে দিয়ে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করেছে যেমন ১৯৯১ সালে ঘটেছে স্ট্যান্ডার্ড আমলের ক্ষেত্রে অথবা পাবলিক ইউলিটি হিসেবে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করে যেমনটি ঘটেছে ১৯১৩ সালে এটিএ্যান্ডটির বেলায়। আজ এই দুই কৌশলের ক্ষেত্রে বিরাট সীমাবদ্ধতা আছে। ইউটিলিটি নিয়ন্ত্রণের প্রচলিত কৌশল হলো মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও মুনাফার ওপর সীমারেখা টেনে নেয়া। কিন্তু সেগুলো এখন প্রয়োগ করতে যাওয়া বেশ কঠিন। চিন্তাধারার ক্ষেত্রে দুটি বড় পরিবর্তন টাইগারদের যুক্তিসঙ্গতভাবে বশে আনার ক্ষেত্রে বহুলাংশে সহায়ক হবে। প্রথমটি হলো বর্তমান প্রতিযোগিতা আইনটি আয়ত্ত ভালভাবে প্রয়োগ করা। নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষকে দুই বা একাধিক কোম্পানির মার্জার বা একই ভবন খতিয়ে দেখতে হবে। বুঝতে হবে এই ধরনের একই ভবনের উদ্দেশ্য সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদী হুমকি ব্যর্থ করে দেয়া কি না। এ ধরনের খতিয়ে দেখার ব্যবস্থাটি অনুসরণ করা হলে ফেসবুক হয়ত ইনস্টাগ্রামকে এবং গুগল ওয়েজকে কিনে নিতে পারত না। কয়েক বছর আগে এক পর্যায়ে গুগল মোটামুটিভাবে সপ্তাহে একটি করে কোম্পানি কিনে নিচ্ছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, গুগল, এ্যামাজন, ফেসবুক প্রভৃতির একাধিপত্য ভাঙতে হলে এ্যান্ট্রি ট্রাস্ট আইন আরও কঠোর করা এবং ততোধিক কঠোরভাবে প্রয়োগ করা দরকার। অর্থনীতি ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×