ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

ফোর জি যুগে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ফোর জি যুগে বাংলাদেশ

মোবাইল টেলিকমিউনিকেশনের সর্বাধুনিক সংস্করণ ফোর-জি (৪এ-ঋড়ঁৎঃয এবহবৎধঃরড়হ)। এটি সম্পূর্ণরূপে ইন্টারনেট প্রটোকলভিত্তিক একটি টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম যা গ্রাহককে Ultra-broadband mobile internet access প্রদান করে থাকে। ফোর-জি প্রযুক্তি হচ্ছে থ্রিজি মোবাইলের আধুনিকতর সংস্করণ। এই প্রযুক্তি এখনও গ্রাহক পর্যায়ে সহজলভ্য হয়ে উঠেনি। ফোরজি মোবাইলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক উৎপাদন ও বিপণন শুরু হলে তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেমে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রচলিত থ্রিজির চেয়ে ফোর জি অনেক দ্রুতগতির। এ প্রযুক্তিতে ডেটা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে কোন ধরনের ল্যাগ হয় না। কোন রকম বাফারিং ছাড়াই টিভি ও লাইভ স্টিমিং দেখতে পারেন গ্রাহক। ইন্টারনেট ডাউনলোড বা আপলোডে থ্রি জিতে যে সময় লাগত, ফোর জিতে সে সময় প্রায় অর্ধেকে নেমে আসবে। বাংলাদেশে থ্রি জি ইন্টারনেটের গড় গতি ৩ দশমিক ৭৫ এমবিপিএস ‘ফোর জিতে এই গতি ৭ এমপিবিএস হবে বার তার চেয়ে বেশি। থ্রিজি সুবিধায় ইন্টারনেট ডাউনলোড বা আপলোডে যে সময় লাগত, ফোর জিতে সে সময় নেমে আসবে প্রায় অর্ধেকে। প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার কারণে যে কোন ব্র্যান্ডেই অপারেটররা ফোর জি সেবা দিতে পারবে। প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা তরঙ্গের কার্যক্ষমতা দেড় থেকে দুই গুণ বাড়িয়ে দেয়। এতে শুধু ইন্টারনেটই নয়, ভয়ে সকলেও অগ্রগতি হবে। ফোর জি সেবা ব্যবহারের বড় চ্যালেঞ্জ হবে এটি ব্যবহারের উপযোগী হ্যান্ডসেট। দেশে ৩০% মানুষের হাতে স্মার্টফোন রয়েছে, যার মধ্যে ১০% থ্রির-জি ব্যবহারের উপযোগী। ফোর জি হ্যান্ডসেটের চাহিদা তৈরিতে সরকারের সহায়তার প্রয়োজন পড়বে। ফোর জি গতি পেলে প্রান্তিক মানুষ নানা কাজ করতে পারবে, ফলে তাদের শহরমুখী হতে হবে না। অনলাইনভিত্তিক সেবা বেড়ে যাবে এবং ই-কর্মাসের প্রসার ঘটবে। ফোর জি চালু হলে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও আউটসোর্সিংয়ের কাজ করার সুযোগ তৈরি হবে; বাড়বে কাজের ক্ষেত্র। ফোর জি গতিতে দেশে এফ কমার্সভিত্তিক ২০ হাজার পেইজ বা গ্রুপের প্রসার আরও বাড়বে। ফোর জি মোবাইলে রয়েছে সর্বোচ্চ গতির ডাটা ট্রান্সফারের সুবিধা। এই প্রযুক্তিতে গ্রাহক সর্বদাই মোবাইল অনলাইন ব্রডব্যান্ডের আওতায় থাকতে সমর্থ হবেন। এতে হাই ডেফিনেশন টেলিভিশন এবং ভিডিও কনফারেন্সের সুবিধা পাওয়া যাবে। এই প্রযুক্তিতে গ্রাহকের কথোপকথন ও ডাটা ট্রান্সফারের নিরাপত্তা অনেক বেশি শক্তিশালী হবে। ফোর-জি মোবাইল গ্রাহককে ভয়েস মেসেজ, ফ্যাক্স, মাল্টিমিডিয়া মেসেজ, অডিও ভিডিও রেকর্ডিং ইত্যাদির সুবিধাও প্রদান করবে। ২০০৮ সালের মার্চ মাসে ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঞবষবপড়সসঁহরপধঃরড়হং টহরড়হ জধফরড় পড়সসঁহরপধঃরড়হ ংবপঃড়ৎ (ওঞট-জ), ফোর-জি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বাধ্যতামূলক হিসেবে নির্ধারণ করে দেয় যা ওহঃবৎহধঃরড়হধষ গড়নরষব ঞবষবপড়সসঁহরপধঃরড়হং অফাধহপবফ (ওগঞ-অফাধহপবফ) ংঢ়বপরভরপধঃরড়হ নামে পরিচিত। ফোর-জি মোবাইলের অপরিহার্য বৈশিষ্টগুলো হচ্ছে : ডাটা ট্রান্সফারের গতি ঐরময সড়নরষরঃু ংঃধঃরড়হ (যেমন, ট্রেন, বাস ইত্যাদি) এবং খড়ি সড়নরষরঃু ংঃধঃরড়হ (যেমন, পথচারী, রহফড়ড়ৎ ইত্যাদি) এর ক্ষেত্রে যথাক্রমে ন্যূনতম ১০০ মেগাবাইট/ সেকেন্ড এবং ১ গিগাবাইট/ সেকেন্ড হতে হবে। এই প্রযুক্তির ডাটা ট্রান্সফার পুরোপুরি ইন্টারনেট প্রটোকল প্যাকেট সুইচ নেটওয়ার্কভিত্তিক হতে হবে। একই স্পেকট্রাম থেকে সর্বাধিক সংখ্যক গ্রাহককে সেবা দিতে হবে। পরিমাপ যোগ্য ঈষধহহবষ ইধহফ রিফঃয ন্যূনতম ৫-২০ মেগাহার্জ এবং ক্ষেত্রবিশেষ ৪০ মেগাহার্জ পর্যন্ত হবে। উড়হিষরহশ এর ক্ষেত্রে ষরহশ ংঢ়বপঃৎধষ ঊভভরপরবহপু ১৫নরঃ/ং/ঐু এবং টঢ়ষরহশ এর ক্ষেত্রে ৬.৭৫ নরঃ/ং/ঐু হতে হবে। এই সবগুলো বৈশিষ্ট্যই শুধুমাত্র খঞঊ অফাধহপবফ (ঝঃধহফধৎফরুবফ নু ৩এচচ) এবং ৮০২.১৬স (ংঃধহফধৎফরুবফ নু ঃযব ওঊঊঊ) এই দুটি প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করবে। বর্তমানে দুটি ফোর-জি স্ট্যান্ডার্ড বাণিজ্যিকভাবে ফোর জি মোবাইলের সঙ্গে যুক্ত আছে। এর মধ্যে গড়নরষব ডরসধী ২০০৬ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় সর্বপ্রথম এবং খড়হম ঞবৎস ঊাড়ষঁঃরড়হ (খঞঊ) স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে অপারেশন শুরু করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঝঢ়ৎরহঃ ঘবীঃবষ ২০০৮ সালে গড়নরষব ডরসধী চালু করে এবং গবঃৎড় চঈঝ ২০১০ সালে খঞঊ সার্ভিস শুরু করে। শুরু থেকেই ফোর-জি প্রযুক্তির টঝই ডরৎবষবংং গড়ফবস প্রচলিত ছিল তবে ২০১০ সালে সর্বপ্রথম ওয়াইম্যাক্স স্মার্টফোন এবং ২০১১ সালে খঞঊ স্মার্টফোন বাজারে আসে। এখন পর্যন্ত ফোরজি মোবাইল গুগলের এ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের ওপর নির্ভরশীল। দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের (ফোর-জি) টেলিযোগাযোগ সেবা। চার মোবাইল ফোন অপারেটরকে ফোর-জি সেবার লাইসেন্স দেওয়ার মাধ্যমে দেশে এ সেবার যাত্রা শুরু হলো। লাইসেন্স পাওয়ার পরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকালই সেবাটি চালু করা হয়েছে। ফোর জি লাইসেন্স নিতে গত জানুয়ারিতে আবেদন করে গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক, টেলিটক ও বন্ধ হয়ে যাওয়া অপারেটর সিটিসেল। তবে গত মঙ্গলবার নিলামে অংশ নিয়ে ফোর জি তরঙ্গ কিনে নিয়েছে শুধু গ্রামীণফোন ও বাংলালিংক। রবি তাদের হাতে থাকা তরঙ্গ প্রযুক্তি নিরপেক্ষতায় রূপান্তর করে ফোর জি সেবায় আসছে। টেলিটকও একইভাবে এই সেবা দেবে, যদিও তারা এখনও প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা সুবিধা পাওয়ার অপেক্ষায়। বন্ধ হয়ে যাওয়া অপারেটর সিটিসেল ফোর জি তরঙ্গ নিলামে অংশ না নেওয়ায় পুনরায় চালু হওয়ার সম্ভাবনা থেকে ছিটকে পড়েছে। ফোর জি তরঙ্গের নিলাম এবং প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার সুবিধা বিক্রি করে ভ্যাটসহ পাঁচ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা আয় করেছে সরকার।
×