ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুগোপযোগী বিষয় সমুদ্রবিজ্ঞান

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

যুগোপযোগী বিষয় সমুদ্রবিজ্ঞান

ক্যারিয়ার গড়তে যুগোপযোগী বিষয়ের বিকল্প নেই। তেমনি একটি বিষয় সমুদ্রবিজ্ঞান। নতুন এ বিষয়ে অধ্যয়নের মাধ্যমে সমুদ্রের বুকে লুকিয়ে থাকা সম্পদকে ব্যবহার উপযোগী করে একদিকে যেমন দেশের উন্নয়নে সুনাগরিকের ভূমিকা পালন করা যায়, তেমনি ব্যক্তিগত জীবনেও গড়া যায় সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার। দেশের সবকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন এই বিভাগটি চালু না হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিভাগ দীর্ঘদিন যাবত চালু হয়েছে। সর্বশেষ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিভাগটি ২০১৬-১৭ সেশন থেকে চালু হয়েছে। নতুন বছরের শুরুতে নবীন শিক্ষার্থীদের ভর্তির মাধ্যমে এ বিভাগে দুটি ব্যাচ সংযুক্ত হয়েছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মোঃ সোলাইমান হোসেন বলেন, বহির্বিশ্বে এ বিভাগটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে সমুদ্রঘেরা দেশগুলোতে। যেহেতু আমাদের দেশেও সমুদ্রসীমা রয়েছে তাই আমাদের জন্যও এ বিভাগটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, আমরা যদি আমাদের সমুদ্র সম্পদকে ব্যবহার করতে পারি, তবে দারিদ্র্য বিমোচন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবসহ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হব। ‘ব্লু ইকোনমি’ অর্থাৎ তথ্য সমুদ্র অর্থনীতি আমাদের সামনে নতুন দিগন্তের সূচনা ঘটাতে পারে। বাংলাদেশের বর্তমানে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কি.মি সমুদ্রসীমা রয়েছে। বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় সমপরিমাণ এ সমুদ্রসীমায় লোকায়িত সম্পদের সুষ্ঠু ও পরিবেশবান্ধব ব্যবহার আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। সমুদ্রে রয়েছে দুই ধরনের সম্পদ। এর একটি হচ্ছে লিভিং সোর্স আর অন্যটি হচ্ছে নন লিভিং সোর্স। লিভিং সোর্সের মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক মাছ। যেমন, ইলিশ, চিংড়ি, কোরাল, পোয়া, রূপচাঁদা, টুনা, হাঙ্গর ইত্যাদি। তাছাড়া রয়েছে সামুদ্রিক শৈবাল, শামুক, ঝিনুক কচ্ছপসহ অসংখ্য উদ্ভিদ ও জলজকনা। নন লিভিং সোর্স এর মধ্যে রয়েছে, ভূগর্ভস্থ মূল্যবান খনিজসম্পদ, তেল, গ্যাস ইত্যাদি। সমুদ্রে তলদেশে রয়েছে গ্যাস হাইড্রেড, ম্যাংগানিজ নডিউলস, ইভাপোরাইটস ইত্যাদি। সৈকতে রয়েছে ইলমেনাইট, রুটাইল, জিরকল, ম্যাগনেটাইটের মতো খনিজবালু। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সমুদ্র সম্পদ ব্যবহার করে সিফুড, ওষুধ ও কসমেটিকস দ্রব্য তৈরি করছে। সমুদ্রের বুকে লুকিয়ে থাকা এসব সম্পদের ব্যবহার শিখতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে সমুদ্রে ফিল্ড ওয়ার্কে যাওয়া হয়। কেমন উপভোগ করছেন জানতে চাইলে শাবির সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফখরুল আলম অনিক বলেন, আমরা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ফিল্ড ওয়ার্কে যাই। র‌্যাকটিক্যাল ওয়ার্ক সবসময়ই আনন্দের। আমরা এনভানর্মেন্টার ব্যবহার করে পরিবেশগত ডাটা সংগ্রহ করতে পারি। তাছাড়া ওয়াটার মাল্টিপাওয়ারমেন্টার ব্যবহার করে পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করি। এসব কাজ বেশ কৌতূহল নিয়ে বিরক্তি ছাড়াই আমরা করে থাকি। ফলে পড়ালেখায় ভেতর থেকে একটা আনন্দ আসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফেরদৌসি আক্তার বলেন, সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়টি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাঠ্য বই হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করলে শিক্ষার্থীরা আগে থেকেই এ বিষয়ে পড়াশোনার মাধ্যমে নিজের ক্যারিয়ার গঠন সম্পর্কে জানতে পারবে। এতে করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমুদ্র সম্পদ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়বে। সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার সুযোগ পাবে। দেশের সরকারী ও বেসরকারী যে কয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগ চালু হয়েছে সেগুলো নতুন হওয়ার কারণে নানা সমস্যা ভুগছে। শিক্ষা-গবেষণার জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পান না সব সুযোগা-সুবিধা। রয়েছে ল্যাব ও ক্লাসরুমের সঙ্কট। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পেলে সমুদ্র সম্পদের অফুরন্ত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি তৈরি করা যাবে। যার ফলে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে এ বিভাগ জোরালো ভূমিকা পালন করবে। নতুন প্রজন্মের হাত ধরেই জ্ঞানের নতুন দ্বার উন্মোচনে এ বিভাগ স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে, এমন আশা বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
×