ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

‘সৃষ্টির প্রতি ভালবাসাই সুফিবাদের মর্মকথা’

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

‘সৃষ্টির প্রতি ভালবাসাই সুফিবাদের মর্মকথা’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রকৃত অর্থে সুফিবাদ হচ্ছে প্রেমের ধর্ম। যেখানে মানুষে মানুষে নেই কোন বৈষম্য। নেই জাত-পাতের বিভেদ। তাই সৃষ্টির প্রতি ভালবাসাই সুফিবাদের মর্মকথা। একইভাবে এখানে নেই কোন ধনী-গরিবের পার্থক্য। বেহেশতের পুরস্কারের আশা বা দোজখের ভয়ে ধর্মচর্চা সুফিবাদ নয়। সুফিবাদ হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা প্রতি শুদ্ধ প্রেম। যে প্রেম সৃষ্টিকর্তার পাশাপাশি সৃষ্টিকেও ভালবাসতে শেখায়। এভাবেই সুফিবাদের ব্যাখা দিলেন সুফি উৎসবের সেমিনারে অংশ নেয়া বক্তারা। শনিবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির নাট্যাশালার সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় ‘সুফিবাদ : প্রেমের ধর্ম’ বিষয়ক সেমিনার। এদিকে সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি একাডেমির উন্মুক্ত আঙিনায় সুফি গানের মরমী সুধায় সিক্ত হয়েছে শ্রোতাকুল। ‘সম্প্রীতির জন্য সঙ্গীত প্রতিপাদ্যে’ তিন দিনের আন্তর্জাতিক সুফি উৎসবের দ্বিতীয় দিন শনিবার সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আল্লামা রুমি সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ রেজাউল করিম। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন ঢাকাস্থ ইরানের রাষ্ট্রদূত আব্বাস ভায়েজি দেহনবি ও তুরস্কের রাষ্ট্রদূত দেভরিম ওজতুর্ক। স্বাগত বক্তব্য দেন আল্লামা রুমি সোসাইটির উপদেষ্টা সৈয়দ মাহমুদুল হক। সন্ধ্যায় শুরু হয় সঙ্গীত পরিবেশনা। মঞ্চে আসেন নতুন প্রজন্মের শিল্পী পুলক। এই শিল্পী গেয়ে শোনান ‘আল্লাহু আল্লাহু’, ‘অন্তরে অন্তরে মাওলা তোমার ঘর’, ‘কেন অন্তরে প্রেম দিয়া’ ও ‘তুই ছাড়া বল কি আর বাঁচা’ শিরোনামের গান। পরিবেশনায় ফকির লালন সাঁইয়ের গানকে আশ্রয় করেন নন্দিত লোকসঙ্গীত শিল্পী চন্দনা মজুমদার। মাধুর্যময় চড়া কণ্ঠে গেয়ে শোনান ‘পাড়ে কে যাবি নবীর নৌকাতে আয়’ ও ‘এলাহি আলামিন গো আল্লা, বাদশা আলমপনা তুমি’সহ কয়েকটি গান। শ্রোতার অন্তরে প্রশান্তি ছড়িয়ে কিরণ চন্দ্র রায় গেয়ে শোনান ‘নবীর নামে পাগল হলো পীর আউলিয়া দুনিয়া’ ও ‘আমার মুরশিদ পরণমণিরে’সহ কয়েকটি গান। এছাড়া দ্বিতীয় দিনের উৎসবে সঙ্গীত পরিবেশন করেন টুনটুন বাউল, নূরে ইয়াসমিন জলি, রাজ্জাক বাউল ও হানিফ বাউল। এদিনের বিদেশী দল হিসেবে পরিবেশনা উপস্থাপন করে তুর্কি সুফি দল। আজ শনিবার উৎসবের সমাপনী দিন। সন্ধ্যা ৬টা খেকে শুরু হওয়া আয়োজনে আধ্যাত্মিক গান পরিবেশন করবেন শিল্পী হায়দার, হারুণ, ইকবাল হায়দার, দীপংকর, সুনীল কারাকার, সিরাজ বাউল। দলীয় পরিবেশনা উপস্থাপন করবে বাংলাদেশের জলের গান, ইরানী সুফি দল ও ভারতের রুহানী সিস্টার্স। সংস্কৃতিমন্ত্রী মন্ত্রণালয় ও শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় যৌথভাবে উৎসবের আয়োজন করছে আল্লামা রুমি সোসাইটি বাংলাদেশ ও হাটখোলা ফাউন্ডেশন। বাংলাদেশ, ভারত, ইরান ও তুরস্কের ১১৯ জন সুফি ও লোকসঙ্গীত শিল্পীর সঙ্গে উৎসবে অংশ নিচ্ছে পাঁচটি সঙ্গীত দল। সুজয় শ্যামের একুশে পদকপ্রাপ্তির সংবর্ধনা ॥ দেশের সঙ্গীত ভুবনের এক অনন্য শিল্পী সুজয় শ্যাম। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এই সুরকার শিল্পী একুশে পদক পেয়েছেন এবছর। শিল্পীর এই সাফল্যপ্রাপ্তির উদ্্যাপনটি হয়ে গেল শনিবার। সংবর্ধানার প্রদানের পাশাপাশি আয়োজনে ছিল গণসঙ্গীত পরিবেশনা। বসন্ত বিকেলে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গণশিল্পী সংস্থা। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতারের কণ্ঠসৈনিক ও আবৃত্তিশিল্পী আশরাফুল আলম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ। শিল্পকলায় রাগেশ্রী দাসের সঙ্গীতসন্ধ্যা ॥ সুরে স্নিগ্ধতায় আলোড়িত হলো বসন্তসন্ধ্যা। গানেস গানে শ্রোতার হৃদয় রাঙালেন রাগেশ্রী দাস। কলকাতার এই গুণী কণ্ঠশিল্পীর সঙ্গীতসন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হলো শনিবার। আধুনিক বাংলা গানের সঙ্গে পরিবেশন করেছেন ঠুমরী বেনারস ঘরানার এই সুকণ্ঠী গায়িকা। শিল্পীর সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন রূপক মিত্র। সঙ্গীতানুষ্ঠানটির আয়োজন করে সৃজনশীল গানের দল নিবেদন ও মহীরূহ। রবীন্দ্র শিশুতোষ চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী ॥ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে রবীন্দ্র সাহিত্যনির্ভর ৪টি স্বল্পদৈর্ঘ্য শিশুতোষ চলচ্চিত্র। গত বছর টোকন ঠাকুর নির্মিত ‘রাজপুত্তুর’ ও সুমনা সিদ্দিকী নির্মিত ‘মাধো’ চলচ্চিত্র দুটির উদ্বোধন হয়। সেই ধারাবাহিকতায় শনিবার সন্ধ্যায় একাডেমি জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে লুসি তৃপ্তি গমেজ নির্মিত ‘ডাকঘর’ এবং আবু সাইয়ীদ নির্মিত ‘বিশ্বম্ভর বাবুর দায়’ চলচ্চিত্র দুটির বিশেষ প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়। শাহীন আখতারের লেকচার ‘আমার লেখালেখির জগৎ’ ॥ বাংলাদেশে ইতিহাসচর্চায় কোথাও একটা ত্রুটি রয়েছে। কারণ আমরা ব্রিটিশদের দুইশ বছরের শাসনামল সম্পর্কে কথা বলি না। সিপাহি বিদ্রোহের দিনটা নীরবে চলে যায়। ১৯৪৩ সালের মন্বন্তরকে আমরা মনে করতে চাই না। সবচেয়ে দুঃখজনক যে, ঔপনিবেশবিরোধী আন্দোলনে আমরা আমাদের ফুটমার্ক রাখতে চাই না। ক্রমাগত তা মুছে দিচ্ছি। এটি আত্মঘাতী। শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত পাবলিক লেকচারে এ মন্তব্য করেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারজয়ী কথাসাহিত্যিক শাহীন আখতার।
×