ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মংডুতে ৪ রোহিঙ্গার মৃত্যুদণ্ড ॥ ক্যাম্পে তীব্র প্রতিক্রিয়া

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

মংডুতে ৪ রোহিঙ্গার মৃত্যুদণ্ড ॥ ক্যাম্পে তীব্র প্রতিক্রিয়া

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ রাখাইন রাজ্যের মংডুর একটি বিশেষ আদালত ৪ রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে মৃত্যুদ- ও ২৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ-ের রায় ঘোষণা করেছে। গত শুক্রবার মংডুর ওই বিশেষ আদালত এ রায় ঘোষণা করে। যা এদেশের আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। অপরদিকে, মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশের বিপরীতে তাদের সীমান্তে বেষ্টনি নির্মাণের লক্ষ্যে দেড়কোটি ডলার সমমান কিয়াত বরাদ্দ দিয়েছে। সে দেশের পার্লামেন্টে এ বাজেট পাস হয়েছে। এদিকে, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী তিন নারী রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আজ রবিবার উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প পরিদর্শনে আসছেন। এছাড়া গত শুক্রবার টুরিস্ট ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশের অভিযোগে যে ১১ বিদেশী নাগরিককে আটক করা হয়েছিল উখিয়া থানা পুলিশ মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দিয়েছে। পাহাড়ধসে কুতুপালংয়ে এক রোহিঙ্গা শিশু প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া তুমব্রু সীমান্তের ওপারে জিরো লাইন থেকে গোপন পথে রোহিঙ্গাদের আগমন অব্যাহত রয়েছে। শনিবার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে টানা অনুপ্রবেশের ছয়মাস পূর্ণ হয়েছে। গত বছরের ২৫ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে থাকে। তখন থেকে শনিবার পর্যন্ত ১৮০ দিনে কখনও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বাদ যায়নি। ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর রাতে মিয়ানমার মংডুর পুলিশের তিন নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালানোর অভিযোগে মংডুর একটি বিশেষ আদালত চার রোহিঙ্গাকে মৃত্যুদ- ও ২৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দিয়েছে। দ-প্রাপ্তদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ এই বলে প্রমাণিত ঘোষণা দেয়া হয়েছে যে, অভিযুক্তরা ৯ অক্টোবর হামলা চালিয়ে সে দেশের দুই নিরাপত্তা রক্ষীকে হত্যা করেছে। ১৫ জনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। যাদের কারাদ- দেয়া হয়েছে এর মেয়াদ ১০ থেকে ২০ বছর। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর মংডুর পুলিশের নিরাপত্তা চৌকিতে দুই পুলিশ সদস্য ও ৮ সন্ত্রাসী প্রাণ হারায়। সন্ত্রাসীরা লুট করে নেয় পুলিশের অস্ত্রশস্ত্র। ঘটনার একদিন পর ১১ অক্টোবর থেকে সন্ত্রাসী দমন অভিযানের নামে রোহিঙ্গাদের ওপর হামলে পড়ে দেশটির সেনা সদস্যরা। ওই সময় লাখ লাখ রোহ্ঙ্গিা দেশ ত্যাগ করে সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে আসে। তবে বাংলাদেশ ওই সময়ে সীমান্ত এলাকায় কঠোরভাবে প্রহরা দেয়ায় আগত রোহিঙ্গারা নিজ বাড়িঘরে ফিরে যায়। এরপরও বিভিন্ন ফাঁকফোকরে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। যদিও সরকারী হিসাবে এ সংখ্যা ৮৬ হাজার। ৪ রোহিঙ্গার মৃত্যুদ- ও ২৬ রোহিঙ্গার বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ-ের ঘটনায় আশ্রিত রোহিঙ্গা শিবিরে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার রোহিঙ্গা আবুল কালাম, সমিহউদ্দিন, নুরুল বশর, বদর আলম, মুহিবুল্লাহসহ অনেকে জানিয়েছেন, দ-িতরা কেউ দোষী নয়। এরা আরসারও কোন সদস্য নয়। নিতান্তই নিরীহ লোক। সামরিক অভিযানে বাড়ি ঘেরাও করে তাদের আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। বিচারের নামে এটি একটি প্রহসন হয়েছে। রোহিঙ্গাদের দমিয়ে রাখতে এবং সর্বক্ষণিক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অপপ্রয়াসেই নিরীহ এ যুবকদের কারাদ- দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় সাধারণ রোহিঙ্গারা আরসা ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গোপন আঁতাতের বিষয়টিও আলোচনায় এনেছে। সচেতন রোহিঙ্গাদের পক্ষে জানানো হয়েছে, গেল বছরের ৯ অক্টোবর পরবর্তী রাখাইন পরিস্থিতি শান্তই ছিল। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনান কমিশন যেদিন রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট প্রদান করে ওইদিনই আরসা সন্ত্রাসীরা সেদেশে পুলিশ চৌকিতে হামলা চালায়। পরবর্তী ঘটনা রোহিঙ্গা নিধন ও তাদের ওপর বর্বরতার নানা কাহিনী রক্তে রঞ্জিত হয় পুরো রাখাইন। আর বাংলাদেশে নামে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল। পাহাড় ধসে এক শিশুর মৃত্যু ॥ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে এ ঘটনা ঘটে। আশ্রিত ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, নিহত শিশু দিল খায়াজ (৮) কুতুপালং মধুরছড়া ক্যাম্পের ডি ব্লকের হাবিবুর রহমানের কন্যা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে সূত্র জানায়, সন্ধ্যার আগে রোহিঙ্গা শিশুরা পাহাড়ি খাদের নিচে খেলাধুলা করছিল। হঠাৎ পাহাড়ের মাটি ধসে পড়লে দুই শিশু মাটি চাপা পড়ে। রোহিঙ্গারা মাটি সরিয়ে তাদের উদ্ধার করতে করতেই খায়াজ মারা যায়। মিয়ানমার সীমান্তে বেষ্টনী নির্মাণের প্রস্তুতি ॥ মিয়ানমার নিজেদের সীমান্ত রক্ষায় বাংলাদেশ সীমান্তে বেষ্টনী দেয়ার লক্ষ্যে দেড় কোটি ডলার সমমান কিয়েত বাজেট বরাদ্দ দিয়েছে। মিয়ানমারের পার্লামেন্টে বৃহস্পতিবার এই বাজেট পাস করা হয়। মিয়ানমার একদিকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার কথা বলছে অপরদিকে দেশটির আরও ৯১ কি.মিটার সীমান্তে বেষ্টনী নির্মাণ বাস্তবায়নে মনযোগী হয়ে পড়েছে। উল্লেখ্য, রাখাইন রাজ্যে ২৯৩ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ২০২ কিলোমিটার সীমান্তে ইতোমধ্যে বেষ্টনী নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি ৯১কি.মিটার সীমান্তে বেষ্টনী নির্মাণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। নোবেল জয়ী তিন নারী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাচ্ছেন ॥ শান্তিতে নোবেল জয়ী তিন নারী রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজারে আসছেন। আজ রবিবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাবেন তারা। মূলত রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমতকে আরও সংহত করতেই তাদের এই সফর বলে সূত্রে জানা গেছে। মুচলেকা দিয়ে ১১বিদেশী নাগরিকের ছাড় ॥ ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসে এবং পাসপোর্টের ফটোকপি নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাবার পথে শুক্রবার র‌্যাবের অভিযানে আটক ১১ বিদেশী নাগরিক অবশেষে উখিয়া থানায় মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন রাতেই। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় শুক্রবার দুপুরে এদের আটক করে র‌্যাবের একটি দল। উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের জানান, ‘ট্যুরিস্ট ভিসা’ নিয়ে ওই বিদেশীরা বাংলাদেশে আসেন। তাদের কাজের অনুমতিপত্রও ছিল না। কেবল তাদের কাছে পাসপোর্টের ফটোকপি ছিল। ভবিষ্যতে মূল পাসপোর্ট কাছে রাখার জন্য তাদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আটক বিদেশীদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্য ও ইতালির দুজন করে এবং নেদারল্যান্ডস, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, কেনিয়া, ব্রাজিল, বেলজিয়াম ও নরওয়ের একজন করে নাগরিক।
×