ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খুলনায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

খুলনায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ আগামী ৩ মার্চ খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে। জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। নেতৃবৃন্দ আশা করছেন, জনসভায় ১০ লাখ লোকের সমাগম ঘটবে। এই লক্ষ্য নিয়েই কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে ছুটে চলেছেন। সভা-সমাবেশ করছেন। নেয়া হচ্ছে নানা প্রস্তুতিমূলক কাজ। প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীও ব্যাপক তৎপর রয়েছে। জনসভাস্থল থেকে প্রধানমন্ত্রী খুলনার অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। সেই প্রকল্পগুলোর তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। রূপসা-ভৈরব বেষ্টিত শিল্পনগরী খুলনায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে কিছু দিন আগে থেকেই প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে খুলনা বিভাগের জেলা ও উপজেলা কমিটি, পৌরসভা কমিটিসহ বিভিন্ন কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, দলীয় সংসদ সদস্যবৃন্দ, জেলা ও উপজেলা পরিষদে দলীয় মনোনয়নে নির্বাচিত চেয়ারম্যানবৃন্দ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সম্পাদকদের অংশ গ্রহণে খুলনায় বিশেষ প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামীগ পৃথকভাবে তাদের কমিটির আওতাধীন শাখা কমিটির নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। মহানগর ও জেলা ছাত্রলীগ সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতির উপস্থিতিতে প্রস্তুতি সভা করেছে। যুবলীগের চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সংগঠনটির মহানগর ও জেলা কমিটির উদ্যোগে রবিবার শহীদ হাদিস পার্কে বিভাগীয় পর্যায়ের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অন্যান্য সংগঠন তৎপর রয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা ধারাবাহিকভাবে সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। শুধু খুলনা মহানগরী নয়, জেলার পার্শ্ববর্তী বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ অন্যান্য জেলাতেও প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে জোর তৎপরতা চলছে। সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, সমুদ্রবন্দর মংলাসহ এ অঞ্চলের সর্বত্রই খুলনার এই জনসভাকে ঘিরে জনমনে ব্যাপক আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। জনসভাকে মহাজনসমুদ্রে পরিণত করার জন্য সর্বস্তরে পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতারা বর্তমান সরকারে উন্নয়ন কার্যক্রম ও সফলতার দিকগুলো তুলে ধরছেন। একই সঙ্গে তারা বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে সমালোচনা করছেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯৯৬ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর মৃত প্রায় মংলা বন্দরকে গতিশীল করা হয়। বঞ্চনার শিকার খুলনা অঞ্চলের উন্নয়নে রূপসা সেতু, বিমান বন্দর, আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের নির্মাণ কাজ, অনেক সড়ক, সেতু-কালভার্টসহ বহু উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করে। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর খুলনা অঞ্চলকে সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত করা হয়। আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইমাম, সাংবাদিক হুমায়ূন কবির বালু, মানিক সাহাসহ আরও কয়েক জনকে হত্যা করা হয়। মংলা বন্দরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের কাজসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজ। মিল-কারখানাগুলোকে বন্ধ করে শিল্পাঞ্চল খালিশপুরকে মৃত পুরিতে পরিণত করা হয়। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর শেখ হাসিনার সদিচ্ছায় শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে হাসপাতালটি চালু করা হয়েছে। দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ এখানে উন্নত সেবা পাচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত সরকার বন্ধ করে দেয়া দৌলতপুর জুট মিল ও পিপলস জুট মিল ( বর্তমান খালিশপুর জুট মিল) চালু করা হয়েছে। অচল হয়ে পড়া অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো সচল করা হয়েছে। চ্যানেলের ড্রেজিংসহ নানা পদক্ষেপের কারণে মংলা বন্দর এখন গতিশীল হয়েছে, লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে খুলনার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারীকরণ করা হয়েছে। বর্তমানে খুলনা আধুনিক রেল স্টেশন ও শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স নির্মাণ, দুইটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, জেলা স্টেডিয়াম পুনর্নির্মাণসহ অনেক প্রকল্পের কাজ চলছে। নগরীতে সুপেয় পানি সরবরাহ করার জন্য ওয়াসার মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে, বিমান বন্দর, খুলনা-মংলা রেল লাইনের কাজও চলছে। খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। এবারের জনসভা হবে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জনসভা। প্রধানমন্ত্রীর এ জনসভায় খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলাসহ আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন। জনসভার জন্য নৌকার আদলে সুসজ্জিত মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে। নারীদের ব্যাপক উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে একদা উন্নয়ন বঞ্চিত খুলনা অঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বহু উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী খুলনায় কিছু প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন, যার তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর কাছে অবিলম্বে খুলনা অঞ্চলে গ্যাস সংযোগ, খুলনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা ক্যাডেট কলেজ, মেরিন একাডেমি, পূর্ণাঙ্গ আইটি ভিলেজ, শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে রিসার্স সেন্টার স্থাপন, খুলনা জেনারেল হাসপাতালকে ৫০০ শয্যায় উন্নীতকরণসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হবে।
×