ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ

অর্পিত সম্পত্তি প্রকৃত মালিকদের কাছে ফেরত যায়নি

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

অর্পিত সম্পত্তি প্রকৃত মালিকদের কাছে ফেরত যায়নি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের বাস্তবায়ন নিয়ে টালবাহানা চলছে। ১৭ বছর ধরে এই আইন কার্যকর প্রয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে যেসব জমি অর্পিত সম্পত্তি নামে রয়ে গেছে তা এখন পর্যন্ত প্রকৃত মালিকদের কাছে ফেরত যায়নি। আইন বাস্তবায়নে সরকারের কোন সদিচ্ছার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতার আশ্বাসও পাওয়া যাচ্ছে না। শনিবার অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের জনবিরোধী বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগের প্রতিবাদ এবং আইন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া দ্রুততর করার দাবিতে নয়টি সংগঠনের যৌথভাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করা হয়েছে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে সমন্বয় সেলভুক্ত সংগঠন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, এএলআরডি, অর্পিত সম্পত্তি আইন প্রতিরোধ আন্দোলন, নিজেরা করি, ব্লাস্ট, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনসহ নয়টি সংগঠনের পক্ষ থেকে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের ফলে পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা দুর্ভোগ ও হয়রানির লাঘব হবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু ভুক্তভোগীদের সে আশা এখনও পূরণ হয়নি। এমনই এক অবস্থায় সম্প্রতি ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ভাগাভাগি করে জমি বন্দোবস্ত দেয়ার বিধান রেখে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। খসড়া বিধিমালার ৪ নম্বর ধারায় সরকারী, আধাসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় ১৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে চাকরিরত ১০ বা তার চেয়ে বেশি সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সমন্বয়ে গঠিত সমবায় সমিতিকে বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য এই জমি স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ধরনের বিধান সংবলিত বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নতুন করে সম্পত্তি আত্মসাতের ষড়যন্ত্রেরই নামান্তর। প্রস্তাবিত বিধিমালার ৪ (খ) উপধারায় বলা হয়েছে, অংশীদার ও দাবিদারদের সম্পত্তি ইজারা নেয়ার ক্ষেত্রে বাজারমূল্যের ৯০ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে, যা অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের পরিপন্থী। অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের বাস্তবায়নে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল। তিনি বলেছেন, এই আইন বাস্তবায়নে আইনমন্ত্রী নানা ধরনের বাহানা সৃষ্টি করেছেন। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন করা হয়েছিল অর্পিত সম্পত্তির নামে যাদের জমিজমা দখল করে নেয়া হয়েছিল, সেই জমিজমার আসল মালিক যারা তাদের কাছে তা ফেরত দেয়া হবে। লক্ষাধিক মামলা এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। আইনমন্ত্রী নানা ধরনের বাহানা সৃষ্টি করে এই আইনটার প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত করে রেখে দিয়েছেন। একবার বলছেন, আপীল হবে, একবার বলছেন এটার বিরুদ্ধে রিট হবে, একবার বলছেন অনুশাসন, একবার বলছেন এটার বিরুদ্ধে অন্য কোন পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। কিন্তু তার সঙ্গে যোগাযোগ করে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। অর্পিত সম্পত্তি আইন প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতা এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী আইন বাস্তবায়নে সরকারের কালক্ষেপণ এবং এই বিধিমালা প্রণয়ন উদ্যোগের সমালোচনা করেন। বলেন, আইন বাস্তবায়নে সরকারের সদিচ্ছার অভাব সুস্পষ্ট। ২০১৩ আইনের সর্বশেষ সংশোধনীর পর থেকে পাঁচ বছর একই দাবিগুলো বারবার জানিয়ে আসছি। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছার কোন প্রতিফলন দেখিনি, সরকারের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতার আশ্বাসও আমরা পাইনি। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন নেতা তবারক হোসেইন বলেন, কারো অধিকার খর্ব হলে সরকারের বিরুদ্ধে রিট করার বিধান সংবিধানে আছে। অথচ আইনমন্ত্রী বলে দিলেন, সরকার রিট করতে পারে। মন্ত্রীর এই তথাকথিত অনুশাসনের বলে এখন ট্রাইব্যুনালের ডিক্রী বাস্তবায়নকে বেআইনীভাবে আটকে রাখা হচ্ছে। অর্পিত সম্পত্তিকে লুটের মালের মতো ভাগবাটোয়ারার মতো বর্বর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের বাস্তবায়নে আন্দোলন অব্যাহত রাখার তাগিদ দেন। ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশী কবির বলেন, বিগত কয়েক বছরে আমরা দেখছি জনগণের পক্ষে কোন কর্মসূচী কার্যত গৃহীত হয় না। নীতিমালা, আইনকে অমান্য করার একটা প্রবণতা সরকারের প্রশাসনের মধ্যে ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে আট দফা দাবি সংবলিত লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত। অন্যদের মধ্যে নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, অর্পিত সম্পত্তি আইন প্রতিরোধ আন্দোলনের সুব্রত চৌধুরী, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা উপস্থিত ছিলেন।
×