ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জেরুজালেমে দূতাবাস সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ ॥ হামাস ও পিএলওর নিন্দা

মার্কিন সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

মার্কিন সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন

মার্কিন সরকার আগামী মে মাসে তেল আবিব থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস শহরে নিজের দূতাবাস স্থানান্তরের যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ও ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থা পিএলও। শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিদার নয়ের্ত মে মাসেই জেরুজালেমে অস্থায়ী দূতাবাসের কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনার কথা জানান। ইয়াহু নিউজ। হামাসের মুখপাত্র আব্দুল লতিফ আল-কানু শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে গোটা অঞ্চল ইসরাইলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। তিনি আরও বলেন, মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর করা হলেও বাস্তবতার কোন পরিবর্তন ঘটবে না অর্থাৎ বায়তুল মুকাদ্দাস ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবেই থেকে যাবে, দখলদার ইসরাইলের রাজধানী হতে পারবে না। হামাসের মুখপাত্র তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের ঘটনাকে সব ধরনের আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেন। এদিকে ফিলিস্তিনী মুক্তি সংস্থা পিএলও’র নির্বাহী কমিটির সচিব সায়েব এরিকাত মার্কিন সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ওয়াশিংটনের এ পদক্ষেপ আরব ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর অনুভূতিতে প্রচ- আঘাত হানবে। তিনি বলেন, বায়তুল মুকাদ্দাস ফিলিস্তিনী জনগণের সম্পদ এবং এটি হবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী, ইসরাইলের নয়। মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বের কঠোর বিরোধিতা উপেক্ষা করে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার ঘোষণা করেছে, আগামী মে মাসে তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস বায়তুল মুকাদ্দাস শহরে স্থানান্তর করা হবে। গত ৬ ডিসেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস শহরকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এরপর তিনি ঘোষণা করেন, তেল আবিব থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস শহরে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেয়া হবে। ট্রাম্পের এ ঘোষণার বিরুদ্ধে সারা বিশ্বে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। পরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এ নিয়ে ভোটাভুটি হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র তাতে ব্যাপকভাবে পরাজিত হয়। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের মিত্রদেশগুলোর আপত্তির পরও যুক্তরাষ্ট্র দুই মাসের মধ্যে তাদের ইসরাইলের দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বছরের একেবারে শেষ দিকে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি এবং সেখানেই মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দেন। তার এ ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন অশান্তির জন্ম দেয়। গাজা, বেথেলহেম, জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরসহ বিভিন্ন এলাকায় ইসরাইলী বাহিনীর সঙ্গে ফিলিস্তিনীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। ইসরাইল জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী হিসেবে দীর্ঘকাল দাবি করে আসলেও এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ছিল না। ফিলিস্তিনীরা শহরটির পূর্বাংশকে তাদের ভবিষ্যত রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে চেয়ে আসছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং প্রভাবশালী দেশগুলোও এতদিন ধরে পুরো জেরুজালেমে ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা করে আসছিল। পূর্ব জেরুজালেমে ইসরাইলের অবস্থানকে দখলদার হিসেবেই দেখছিল তারা। ট্রাম্প এর ছেদ ঘটালেন। ডিসেম্বরে ট্রাম্পের ওই ঘোষণার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় আরব ও ইউরোপীয় মিত্ররা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে। ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে বলেও মন্তব্য করে তারা। তাৎক্ষণিক এক জরুরী সভায় মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসি জেরুজালেমকে পাল্টা ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দিতে সারা বিশ্বের প্রতি আহ্বানও জানায়। ‘আমরা এ ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিতে পেরে উচ্ছ্বসিত, মে মাসের মধ্যে দূতাবাস খোলার প্রত্যাশায় আছি,’ বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নয়ের্ত। মে মাসেই ইসরাইলের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস খোলার সময় নির্ধারণের সঙ্গে সেটিরও যোগ আছে বলে জানান নয়ের্ত। জেরুজালেমের আরননা এলাকায় থাকা কনস্যুলেট ভবনেই অস্থায়ী দূতাবাসের কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ মুখপাত্র।
×