ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উ. কোরিয়ার বিরুদ্ধে এ যাবতকালের সবচেয়ে কঠোর পদক্ষেপ ট্রাম্পের

জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার জাহাজ চলাচলের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। যা এ যাবতকালে পিয়ংইয়ংয়ের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সবচেয়ে কঠোর বলে মনে করা হচ্ছে। খবর এএফপির। ওয়াশিংটনের বাইরে শুক্রবার সকালে কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল কনফারেন্সে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কথা বলেন। ট্রাম্প বলেন, উত্তর কোরিয়াকে তার অস্ত্র কর্মসূচী বন্ধ করার জন্য এটি সর্বাত্মক চাপে রাখবে। আমরা আজ তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছি। অতীতের মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটে এটিই হবে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। ট্রাম্পের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্টিভ মনুচিন নিশ্চিত করেছেন, আগের সব নিষেধাজ্ঞার চেয়ে এটি সবচেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। যাতে উত্তর কোরিয়ার সব জাহাজ চলাচল এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবে। প্রকৃতপক্ষে দেশটির পণ্য আমদানি ও রফতানির ক্ষেত্রে জলপথ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারা স্যান্ডার্স সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা আশা করছি যে এর মাধ্যমে আমরা উত্তর কোরিয়াকে উপদ্বীপের অবশিষ্ট এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারব। এটাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। আমি আপনাদের বলতে পারি যে পূর্ববর্তী প্রশাসনের ভুলগুলি বর্তমান প্রেসিডেন্ট করবেন না। এমনকি তিনি নমনীয় বা দুর্বলও হবেন না। পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক কর্মসূচীর জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে এক ধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। উত্তর কোরিয়া এখন চেষ্টা করছে যাতে তার পারমাণবিক কর্মসূচীকে আরও উন্নত করে যুক্তরাষ্ট্রের সব প্রধান শহরে হামলা করা যায় এমন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা গড়ে তোলা। সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞার আওতায় উত্তর কোরিয়ার অর্থনৈতিক কর্মকা- ইতোমধ্যেই অনিশ্চিত এবং তার জ্বালানি সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটছে। ট্রাম্প তার বক্তব্যে উত্তর কোরিয়ার ৫৬টি জাহাজ, শিপিং কোম্পানি ও বাণিজ্যিক কর্মকা-ের বিষয়ে বিস্তারিত বক্তব্য দিতে চেয়েছিলেন। তবে প্রস্তুতকারকরা বক্তব্যে সে বিষয়টি যথাযথভাবে উত্থাপন না করায় তিনি তা বাদ দেন। এর পরিবর্তে তিনি বলেন, সত্যি কথা বলতে কিছু ইতিবাচক হতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলের সঙ্গে দেয়া এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞাকে কেবলমাত্র প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। তিনি বলেন, যদি নিষেধাজ্ঞা কাজ না করে থাকে তাহলে আমাদের দ্বিতীয় পন্থা অনুসরণ করতে হবে। যা হবে খুবই খারাপ। যার ব্যাখ্যা তিনি দেননি। মনুচিন বলেন, যে লক্ষণগুলো দেখা যাচ্ছে তাতে স্পষ্ট হয়েছে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কাজ করছে। যদিও তিনি সে বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেননি। উত্তর কোরিয়া সামরিক ও বৃহত্তর অর্থনীতির জন্য চীন-রাশিয়ার কাছ থেকে কয়লা, তেল আমদানি করার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। চীন হচ্ছে পিয়ংইয়ংয়ের সবচেয়ে বড় মিত্র। দেশটিতে তেল রফতানি করার বিষয়ে পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে ওয়াশিংটনের আহ্বান চীন প্রত্যাখ্যান করেছে। দুই সপ্তাহ আগে দক্ষিণ কোরিয়ার শীতকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার পথে জাপানের রাজধানী টোকিওতে দেয়া এক বক্তৃতায় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স উত্তর কোরিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানিয়েছিলেন। ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল কনফারেন্সে বৃহস্পতিবার পেন্স উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতার বোন কিম ইয়ো জংকে গ্রহের সবচেয়ে বর্বর ও নিপীড়ক শাসন ব্যবস্থার অন্যতম কেন্দ্রীয় স্তম্ভ অ্যাখ্যা দেন। দক্ষিণ কোরিয়ার পিয়ংচ্যাংয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কিম ইয়ো জংও উপস্থিত ছিলেন। উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতার বোন কিম ইয়োকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন। যা ম্লান করে দেয় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিও। জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি বৃহস্পতিবার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া এক ভাষণে বলেন, উত্তর কোরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর প্রভাব রাখছে। এর ফলে ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচীতে ব্যয় করার মতো অর্থ পিয়ংইয়ংয়ের থাকছে না। উত্তর কোরিয়া তাদের ক্ষতি পোষাতে ও ভাবমূর্তি উজ্জল করতে শীতকালীন অলিম্পিকে অংশ নিয়েছে। তাদের রাজস্ব আয়ের উৎসগুলো মৃতপ্রায় হয়ে যাচ্ছে। পিয়ংচ্যাংয়ের চিয়ার লিডার পাঠানোর কারণ তাদের হতাশা; জাতীয় গর্ব নয়।
×