ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দখল-বেদখলে বেহাল দশা রাজধানীর ফার্মগেট পার্কের

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

দখল-বেদখলে বেহাল দশা রাজধানীর ফার্মগেট পার্কের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তীব্র দুর্গন্ধে টেকা দায়। ডাস্টবিনের মতো বিভিন্ন জায়গায় ফেলে রাখা হয়েছে ময়লা-আবর্জনা। সেই ময়লা আবার টেনে হেঁচড়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিচ্ছে দুষ্টু কুকুর। বাকি যে অংশগুলোতে ময়লা নেই সেখানে চলছে রান্না-বান্না, কাপড় শুকানোর কাজ। গ্যারেজ মতো করে সারি ধরে রাখা আছে রিকশাভ্যান। বসানো হয়েছে দুই-তিনটি দোকানপাট। গড়ে উঠেছে অস্থায়ী বসতিও। এ দৃশ্য রাজধানীর ফার্মগেট পার্কের। তেজগাঁও কলেজের দিক দিয়ে ফার্মগেট পার্কে ঢুকতেই চোখে পড়ল চারিদিকে ময়লার স্তূপ। পার্কজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আবর্জনা, সেই আবর্জনার স্তূপ পরিণত হয়েছে ডাস্টবিনে। সীমানা প্রাচীরের লোহার রেলিং উধাও। পার্কের ভেতরে গড়ে উঠা ছিন্নমূলদের অস্থায়ী বসতির সামনে চলছে রান্না-বাড়ার কাজ। পথচারীদের কেউ কেউ পার্কের ভেতরেই ময়লার স্তূপ সংলগ্ন জায়গায় প্রস্রাব সেরে নিচ্ছে। পার্কের ভেতরে রাখা আছে নির্মাণ সামগ্রী। সিমেন্টের তৈরি বসার জায়গাগুলোতে ছিন্নমূল ভবঘুরেরা আরামে ঘুমাচ্ছে। পার্কটিকে নিজেদের আবাসনে পরিণত করেছে হকার ও ছিন্নমূল মানুষেরা। দখল-বেদখল আর অযত্ন-অবহেলায় রাজধানীর ফার্মগেট পার্কের বেহাল দশা। রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অভাবে পার্কের ভেতরে পলিথিন আর কাঠ দিয়ে অস্থায়ী বসতি বানিয়ে সেখানে থাকেন রুস্তম আলী ও তার পরিবার। পেশায় সে আমড়া বিক্রেতা। আলাপকালে রুস্তম আলী বলেন, ‘এখানে অনেকে ভ্যান রাখে, দোকান চালায় এর ল্যাইগ্যা ট্যাকা দেয়ান লাগে। পরিবার লইয়া এখানে থাকি আমাগোরও ট্যাকা দেয়া লাগে।’ তবে কাকে টাকা দিতে হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সব কথা কওন যাইবো না।’ পার্কটির নাম আনোয়ারা পার্ক হলেও সবার কাছে পরিচিত ফার্মগেট পার্ক নামেই। পুরো পার্ক জুড়ে ছড়ানো ছিটানো ময়লা। এর মধ্যেই মানুষের যাতায়াত। পার্কের মাঝখানে দলে দলে বিভক্ত হয়ে চলছে ক্রিকেট খেলা। আমড়া, আখের রস, ডাব বিক্রেতারা এখানেই তাদের আবর্জনা ফেলে যাচ্ছেন। রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেট। হাজারও গণপরিবহন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, অফিসের নানা কর্মকান্ডে ক্লান্ত পথিক একটুখানি জিরিয়ে নিতে ছুটে আসেন ফার্মগেট পার্কে। কিন্তু পার্কের এমন পরিস্থিতিতে দেখে বিরক্তি নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যান তারা। এতো গেল সারাদিনের চিত্র। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে পার্কটি অন্য রূপ ধারণ করে। সন্ধ্যার পর থেকে এই পার্ক চলে যায় ভাসমান যৌনকর্মী, দালাল আর মাদক ব্যবসায়ীদের দখলে। গভীর রাত পর্যন্ত থাকে এদের আনাগোনা। তাছাড়া সন্ধ্যা নামলেই এখানে হরহামেশাই ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে। তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী মঞ্জুরুল ইসলাম। বন্ধুদের সঙ্গে পার্কের ভিতরে এসেই আবার ফিরে যাচ্ছিলেন। সে সময়ই আলাপ হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, দিন দিন এই পার্কের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভিতরে গড়ে উঠেছে পলিথিন ও বাঁশ দিয়ে তৈরি বসতি। আশপাশের সব খাবার দোকানসহ অন্য দোকানদাররা তাদের সমস্ত ময়লা-আবর্জনা এই পার্কে ফেলে। গ্যারেজ করে ভ্যান রাখে এখানে। আশপাশের মানুষ এসে প্রস্রাব করে যায় এই পার্কে। বর্তমানে এখানে সাধারণ মানুষ তেমন একটা আসে না। শুধু যাতায়াতের পথ হিসেবে এটা ব্যবহার করে। মঞ্জুরুলের সঙ্গে থাকা তার বন্ধু জুয়েল রানা বলেন, পুরো পার্ক ভবঘুরে ছিন্নমূল মানুষদের দখলে। কোথাও একটু বসার জায়গাও নেই। এছাড়া বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী রাখা ভিতরে। একদিকে আবর্জনার স্তূপ, ছিন্নমূলের বসতি, অন্যদিকে ভবঘুরেদের উৎপাত সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের বসার বা সময় কাটানোর অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এই পার্ক। এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে জোন-৫ এর জোনাল নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম অজিয়র রহমান বলেন, পার্কটির ভেতরে এমন পরিস্থিতি হয়েছে আমরা শুনেছি। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেব। যারাই সেখানে ময়লা ফেলুক বা পরিবেশ নষ্ট করে বসতি গড়ে তুলুক না কেন তাদের উচ্ছেদ করা হবে। পার্কের ভেতরে ভ্যান গ্যারেজ মালামাল রাখার বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, মেট্রোরেলের কাজের জন্য তারা কিছু মালামাল সেখানে রেখেছে। কিছুদিনের মধ্যে তারা সেগুলো বের করে নেবে বলে আমাদের জানিয়েছে। এছাড়া পার্কের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আমরা খুব শীঘ্রই পদক্ষেপ নেব।
×