ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর সরকারী বহির্বিভাগ চিকিৎসা কেন্দ্রের বেহাল দশা

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

রাজধানীর সরকারী বহির্বিভাগ চিকিৎসা কেন্দ্রের বেহাল দশা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকাবাসীর চিকিৎসা সেবা সহনীয় রাখতে রাজধানীতে রয়েছে ১৯টি সরকারী বহির্বিভাগ চিকিৎসা কেন্দ্র। এগুলোর বেশিরভাগের অবস্থা বেহাল। তবে সেগুলোকে সংস্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ এহ্সানুল করিম। রাজধানীতে বর্তমানে মোট ১৯টি সরকারী বহির্বিভাগ চিকিৎসালয় বা গবর্নমেন্ট ডিসপেনসারি (জিওডি) রয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগেরই অবস্থ বেহাল। পুরনো বিল্ডিংয়ে অবস্থিত হওয়ায় বেশ কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণও হয়ে পড়েছে। কোনটির ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে, কোনটি দিয়ে সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে, কোনটার সামনের অংশে ময়লা-আবজর্নায় ভরা। দেয়ালের চুন উঠে নোংরা হয়ে আছে। কোথাও টয়লেট থাকলেও ব্যবহার করা যায় না। কোথাও ঠাসাঠাসি করে বসে রোগী দেখছেন চিকিৎসকরা। তবে দু’য়েকটি ভিআইপি এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় সেগুলো কিছুটা ভাল অবস্থায় রয়েছে। ঢাকার ১৯টি জিওডি’র মধ্যে তিনটি স্কুল হেলথ ক্লিনিক এবং ১৬টি জিওডি (গবর্নমেন্ট ডিসপেনসারি)। ‘জিওডি’গুলো হচ্ছে- এজিবি কলোনি হাসপাতাল জোনে অবস্থিত মতিঝিল জিওডি, সেগুনবাগিচায় ১২তলা অফিস সংলগ্ন এজিবি জিওডি, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জনসন রোড জিওডি, ধুপখোলা মাঠের পাশে গেন্ডারিয়া জিওডি, স্টাফ কোয়ার্টারের পাশে খিলগাঁও জিওডি, মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদফতরে নয়াটোলা জিওডি, তেজগাঁও সরকারী স্টাফ কোয়ার্টারের ভেতরে বিজি প্রেস জিওডি, নবাবগঞ্জ পার্কের মধ্যে হাজারীবাগ জিওডি, সরকারী স্টাফ কোয়ার্টারের মধ্যে ঝিগাতলা জিওডি, সরকারী স্টাফ কোয়ার্টারের ভেতর মোহাম্মদপুর জিওডি, সরকারী স্টাফ কোয়ার্টারের ভেতর গ্রিনরোড জিওডি, আগারগাঁও পাকা মার্কেটে শেরেবাংলা নগর জিওডি, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মিরপুর-১ জিওডি, ১০ নম্বর গোল চক্করের কাছে মিরপুর-১০ জিওডি, বাউনিয়া বাঁধ ইসলাম এইড এনজিও অফিসের কাছে পলাশী ব্যারাক জিওডি ও লালকুঠি বাজার মাজার রোডে মিরপুর পুরাতন কলোনি জিওডি। এছাড়া স্কুল হেলথ ক্লিনিকগুলো হচ্ছে- রাজধানীর পুরান ঢাকার আরমানিটোলা স্কুল, আজিমপুর গার্লস স্কুল ও শেরেবাংলা নগর স্কুলে অবস্থিত। মিরপুর-১০ এ গিয়ে দেখা যায়, অবস্থিত জিওডি’র বিল্ডিংটি বেশ পুরনো। ৩ বছর আগে সংস্কার করা হলেও ছাদের পলেস্তারা খুলে পড়ছে। বৃষ্টি হলে পুরো ছাদ স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যায়। বাথরুমের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। সিটি কর্পোরেশনের মশক নিবারণ কর্মীরা প্রায়ই এলেও মশার কামড়ে বসে থাকা দায়। এখনকার মেডিক্যাল অফিসার ও ইনচার্জ ডাঃ মাহবুবা আফসারী বলেন, ‘সব ধরনের রোগীই আমাদের এখানে আসে। শীতকাল হওয়ায় এখন সর্দি-কাশির রোগী বেশি আসছে। কোনও কাটা-ছেঁড়ার রোগী এলে আমরা ব্যান্ডেজ করে দিতে পারি। আমরা সেলাই দিতে পারি না কারণ ওই সুযোগ আমাদের নেই।’ এখানকার উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ লুবনা জাহান লোপা বলেন, ‘আমাদের অফিস রক্ষণাবেক্ষণের বরাদ্দ কম। একটা ফ্যান নষ্ট হলে হেড অফিসে বলে পাঠাতে হয়। একবার নষ্ট হলে ঠিক করতে অনেকদিন সময় লাগে। চেয়ারগুলোর হাতল ছেঁড়া।’ রাজধানীর জনসন রোড বহির্বিভাগ চিকিৎসালয়ের অবস্থাও বেহাল। ভবনের ছাদের দিকে তাকালে আঁতকে উঠতে হয়। ছাদের প্রায় তিনভাগই স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থায় রয়েছে। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। দেয়ালের চুনকাম খুলে পড়ছে। এখনকার সাব এ্যাসিস্ট্যান্ট মেডিক্যাল অফিসার হালিমা আক্তার লুপা বলেন, ‘অনেক আগের বিল্ডিং, এই জন্য এই অবস্থা। কিছুদিন আগে রিপেয়ার করা হয়েছে। চুনকাম করার পর থেকে এখন বিল্ডিংয়ের অবস্থা বেশ ভাল। আরও ভাল করার জন্য লোকজন এসে দেখে গেছে। ছবি তুলে নিয়ে গেছে। খুব তাড়াতাড়ি সংস্কার করা হবে।’ অবস্থা খারাপ হাজারীবাগ সরকারী বহির্বিভাগ চিকিৎসাকেন্দ্রেরও। ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। সিমেন্ট-বালু খসে বেরিয়ে এসেছে ভেতরের রড। বেশিরভাগ দেয়ালে ফাটল ধরেছে। ওয়াশরুম থাকলেও সেখানে পানির ব্যবস্থা নেই। ফলে এটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ কারণে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। তারপরও সেখানে চলছে রোগী দেখা থেকে শুরু করে ওষুধ বিক্রিও। মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ নুশরাত মোমেনা বলেন, ‘প্রথম দিন এসে খুব ভয় পেয়েছিলাম। আগে ঢাকার বাইরে পোস্টিং ছিল। কিন্তু কোথাও এমন বিল্ডিং দেখিনি।’ তবে রাজধানীর প্ল্যানিং কমিশনে অবস্থিত জিওডি’র অবস্থা শহরের অন্যান্য ‘জিওডি’গুলোর চেয়ে ভাল। এই জিওডির মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ সানজিদা শারমীন বলেন, ‘আমাদের এটি সংরক্ষিত এলাকায় হওয়ায় বাইরের রোগী আসার সুযোগ নেই। আমাদের রোগীরা বেশিরভাগই ভিআইপি। সচিব, উপসচিব থেকে শুরু করে সবাই এখানে চিকিৎসা নেন। এটি সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সপ্তাহে পাঁচদিন খোলা থাকে। ওয়াই-ফাই লাইন, টিএন্ডটি সুবিধা রয়েছে এখানে।’ এই জিওডি’তে তিনজন মেডিক্যাল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট, ১ জন আয়া ও ১ জন এমএলএসএস ও ১ জন ক্লিনার আছেন। একটি আয়ার পদ ফাঁকা আছে। ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ এহ্সানুল করিম বলেন, ‘কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ার প্রকল্পের আওতায় ঢাকা শহরে ১৭টি সরকারী আউটডোর ডিসপেনসারি আছে। এগুলো খুবই জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আমরা বেশ কয়েকবার এগুলো ভিজিট করেছি। জাইকার প্রতিনিধিরাও আমাদের সঙ্গে জিওডিগুলো ভিজিট করেছে তারা এই জিওডিগুলো আধুনিকীকরণ করতে আগ্রহী।’ সিভিল সার্জন বলেন, ‘আমি তো চাই ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ৯০টি ওয়ার্ডে ৯০টি সরকারী ডিসপেনসারি হোক। তবে, জাইকার আপাতত সিদ্ধান্ত হচ্ছে যে কয়টা ডিসপেনসারি সংস্কার করে চালানো যাবে সেগুলো সংস্কার করা হবে, আর নয়ত নতুনভাবে তৈরি করবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জাইকার সহায়তা নিয়ে চার তলা বিল্ডিং করতে চাই। এতে রোগীদের জন্য ওয়েটিংরুম ও টয়লেটের ব্যবস্থা থাকবে। এখানে ডাক্তারের চিকিৎসা সেবা, বিভিন্ন পরীক্ষা এবং ঔষধ পাওয়া যাবে। এখন ডাক্তার ও ঔষধ ফ্রি (তবে সব ঔষধ এখানে থাকে না)। তখন প্যাথলজি টেস্টগুলোও ফ্রি থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৯০টি ওয়ার্ডে একটি করে সরকারী ডিসপেনসারি থাকা উচিত। নগর স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন করতে চাইলে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে সরকারী ডিসপেনসারি থাকতে হবে। মাল্টিপারপাস হেলথ ওয়ার্কার রাখা প্রয়োজন, যেন বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা তথ্য নিতে পারে।’
×