ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিহত এক পুলিশ অফিসার, রাশিয়া বিশ্বকাপের জন্য অশনি সঙ্কেত মনে করছেন অনেকে

স্পেনে ফুটবল সমর্থকদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

স্পেনে ফুটবল সমর্থকদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ খেলাধুলা হচ্ছে নির্মল বিনোদনের সেরা মাধ্যম। তবে মাঝে মধ্যে নির্মল এই অঙ্গনও কলুষিত হয়ে থাকে। এই যেমন বৃহস্পতিবার রাতে স্পেনে ঘটেছে হৃদয় বিদারক কা-। উয়েফা ইউরোপা লীগের ম্যাচে স্পেনের বিলবাওয়ের সান মামেস স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় স্বাগতিক স্প্যানিশ ক্লাব এ্যাথলেটিক বিলবাও ও রাশিয়ান ক্লাব স্পার্টাক মস্কো। শেষ ৩২ এর দ্বিতীয় লেগের ম্যাচটি নিয়ে কিছুদিন থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ঝামেলা এড়াতে স্প্যানিশ পুলিশও নিয়েছির কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কিন্তু রাশিয়ার উগ্র সমর্থকদের রুখবে সাধ্য কার! তাইতো ম্যাচ শুরুর এক ঘণ্টা আগে দু’দলের সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এই অরাজকতা রুখতে গিয়ে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন একজন পুলিশ অফিসার। হতাহত হয়েছেন অনেকে। এ পর্যন্ত আটক হয়েছেন ১৫ জনের মতো। এতকিছুর পরও ম্যাচটি বাতিল হয়নি। মাঠের লড়াইয়ে রাশিয়ান ক্লাব মস্কো ২-১ গোলে জিতলেও আগের লেগে নিজেদের মাঠে ৩-১ গোলে হারায় দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ গোলের জয় নিয়ে শেষ ষোলোর টিকেট পেয়েছে এ্যাথলেটিক বিলবাও। বিলবাও-এর মাঠ সান মামেসে এ্যাথলেটিক বিলবাও ও স্পার্টাক মস্কোর দ্বিতীয় লেগের লড়াইটা শুরু হতে তখনও এক ঘণ্টার মতো বাকি। এর মধ্যে স্টেডিয়ামের বাইরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন দুই দলের সমর্থকরা। তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া আর আগুনে লড়াই থামাতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে। স্পেনে দ্বিতীয় লেগকে সামনে রেখে রাশিয়ান চরমপন্থীরা বিপদ ঘটাতে পারেন এমন শঙ্কা আগে থেকেই ছিল। শেষ পর্যন্ত সেই শঙ্কাই সত্যি হলো। রাশিয়ার এক শ’র বেশি সমর্থক টিকেট ছাড়াই স্পেনে আসার চেষ্টা করেন বলে জানা যায়। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার ট্রাভেল অর্ডার না মেনেই স্পেনে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেন। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর, স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ২০০ জনের একটি রাশিয়ান চরমপন্থী দল প্লাজা মুয়োয়ার সামনে অবস্থান নেয়। সেখান থেকেই প্রথম প্রতিপক্ষ সমর্থকদের ওপর আক্রমণ চালানো হয় বলে জানা যায়। এরপর দুই দল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে পুলিশ। প্রায় ৭০০’র মতো পুলিশ রাস্তায় অবস্থান নিয়েছিল। এরই মধ্যে রাশিয়া এবং স্পেনের সমর্থকরা একে অপরের দিকে বোতল, গ্লাস আর মশাল ছুড়ে মারতে থাকে। মারপিট থামাতে বিলবাও পুলিশ একটা সময় বাধ্য হয়েই লাঠিচার্জ করে। এতে পুলিশের ওপরও চড়াও হন সমর্থকরা। মারামারির এক পর্যায়ে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে যান এক পুলিশ। তার নাম ইনোসেন্সিও আরিয়াস গার্সিয়া। হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। জানা গেছে, তার মাথায় চরমপন্থীদের ছুড়ে দেয়া কিছু একটা আঘাত করেছিল। পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বিলবাও পুলিশ, দায়িত্ব পালনের সময় মৃত্যুবরণকারী আমাদের বন্ধু ও সহকর্মীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি। ক্লাবের পক্ষ থেকে পুলিশ কর্মকর্তার পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করে টুইট করা হয়েছে। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজয়ও শোক প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনায় আটকৃতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত আছেন তিনজন রাশিয়ান সমর্থক। ন্যক্কারজনক এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে নিন্দা প্রকাশ করেছেন স্প্যানিশ লা লিগার সভাপতি জাভিয়ের টেবাস। নিহত পুলিশ কর্মকর্তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে ফিফা এবং উয়েফার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি। টেবাসের দৃষ্টিতে স্পার্টাকের ‘আল্ট্রা’দের মতো উগ্রপন্থী সমর্থকদের কখনই অন্য কোন দেশে যেতে দেয়ার অনুমতি দেয়া ঠিক নয়। অবিশ্বাস্য এ ঘটনায় অনেকে জুন-জুলাইয়ে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্বকাপে অশনি সঙ্কেত মনে করছেন। তাদের মতে, এসব হুলিগানদের রুখতে না পারলে বিশ্বকাপ মাটি হয়ে যেতে পারে।
×