ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আবাসের খোঁজে লক্ষ্মীপেঁচা

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আবাসের খোঁজে লক্ষ্মীপেঁচা

বন উজাড় হওয়ায় লক্ষ্মী পেঁচা হারিয়ে ফেলছে তাদের আবাস। এরা নিশাচর পাখি। রাতের প্রহর গোনে। বড় বৃক্ষের কোটরে থাকে। দিনের অলোকে ভয় পায়। রাতই ওদের প্রিয়। পেঁচাকুল এখন দিশা ভুলে পথহারা পাখি। ঢুকে পড়ছে কোন বাড়িতে। সেখানেও রক্ষা নেই। কাকের তাড়া খেয়ে হয় আহত। দুর্বল হয় পাখনা। উড়তে পারে না। এরপর কেউ যদি দয়া করে তাকে বাঁচিয়ে রাখে তাহলেই বাঁচে। নইলে মরণ। লক্ষ্মী পেঁচা সম্পর্কে জেনিটিকস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক নিলুফার পান্না বলেন, এর বিজ্ঞান নাম টাইটো আলকা। যা লক্ষ্মী পেঁচা নামে পরিচিত। পেঁচাটি বিরল। বাংলাদেশে ১৭ প্রজাতির পেঁচা আছে। ১৫টি স্থায়ী, ২টি পরিযায়ী। বড় গাছের কোটরে পাহাড়ের গর্তে এরা থাকে। এদের মাথা বড়। মুখম-ল চ্যাপ্টা। চোখের চারদিকে বৃত্তাকার পালক সাজানো থাকে। একে বলে ফেসিয়াল ডিস্ক। অক্ষিগোলক সামনের দিকে থাকায় দ্বিনেত্র দৃষ্টির অধিকারী। বগুড়ার মালগ্রাম এলাকার বাসিন্দা শিহারুল ইসলাম মঞ্জু জানালেন, দিনা কয়েক আগে এক লক্ষ্মী পেঁচার সন্ধান তিনি পান। কাকের তাড়া খেয়ে পাখিটি পড়ে গিয়েছিল। তার স্ত্রী শিল্পী ইসলাম লক্ষ্মী পেঁচা চিনতে পেরে পেঁচাকে শুশ্রুষা দিয়ে সুস্থ করেন। এর পর রাতে ঝাউবনে ছেড়ে দেন। মঞ্জু জানালেন সারিয়াকান্দি নিজবলাইল এলাকায় তিনি অনেক পেঁচা দেখতেন। এখন আর তেমন দেখেন না। পেঁচা নিয়ে কতই না কথা আছে। প্রবীণ ব্যক্তি রফিকুল ইসলাম বললেন, একটা সময় গ্রামের মানুষ পেঁচার ডাক শুনে রাতের প্রহর গুনতো। এখন গ্রাম বিদ্যুতে অলোকিত হওয়ায় পেঁচা ডাক শোনা যায় না। লক্ষèী পেঁচার সুদুর দৃষ্টি আছে। তবে চোখের কয়েক ইঞ্চির মধ্যে কোন বস্তু পরিষ্কার দেখতে পায় না। পেঁচা মাথাকে ১৩৫ ডিগ্রী কোনে ঘোরাতে পারে। দুই দিক মিলে দৃষ্টি সীমা ২৭০ ডিগ্রী। এরা অন্ধকারে শিকার ধরে। ফসলের মাঠে ইঁদুরের শস্যদানা চিবানোর শব্দে এরা শিকার টার্গেট করে। দুই কানে সামান্য আগে ও পড়ে শব্দ পৌঁছায়। বেশিরভাগ পেঁচা শিকার ধরতে বাঁকানো ঠোঁট ব্যবহার করে। ওপর থেকে ছোঁ মেরে শিকার ধরতে অভ্যস্ত। দেশে পেঁচাকে নিয়ে অনেক কুসংস্কার ও অলৌকিক ভাবনা আছে। হুতুম পেঁচা, ভুতুম পেঁচা, খুড়লে পেঁচা, লক্ষ্মী পেঁচাসহ নানা জাতের পেঁচাকে নিয়ে কথিত ভূতের গল্প আছে। যা কুসংস্কার। পেঁচা বিলুপ্ত হওয়ার পথে। বিশ্বে এখনও ২শ’ প্রজাতির পেঁচা আছে। এরা স্ট্রিজি ফার্মিস বর্গভুক্ত। -সমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×