ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছয় বছর পর ধরা পড়ল আল আমিনের এক খুনী

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ছয় বছর পর ধরা পড়ল আল আমিনের এক খুনী

গাফফার খান চৌধুরী ॥ ছয় বছর আগে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ব্যবসায়ী আল আমিন হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনার নেপথ্যে ছিল মাদক। নিহত আল আমিন ও তাকে হত্যাকারী সবাই পরস্পর বন্ধু। ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের পাশাপাশি তারা একত্রে নিয়মিত মাদক সেবন করত। সর্বশেষ সেই মাদক আর মাদক বিক্রির পাঁচ হাজার টাকা ধার নিয়ে দিতে দেরি করায় আল আমিনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ফিল্মিস্টাইলে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে বন্ধুরাই হত্যা করে। পুরো হত্যাকা-ের ঘটনাটি সিনেমার কাহিনীকেও হার মানিয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ মামলার সাজ্জাদ নামের এক আসামি ছয় বছর পর পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। তাকে তিন দিনের রিমান্ডে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে লোমহর্ষক সেই হত্যাকা-ের আদ্যোপান্ত রহস্য। পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রো বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুর বারোটার দিকে কামরাঙ্গীরচরের হুজুরপাড়ার আমির হামজা রোডের রংয়ের কারখানার মাঠ থেকে আল আমিন (২৫) নামে এক যুবকের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার হয়। আল আমিনের শরীরে এমন কোন জায়গা ছিল না, যেখানে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল না। অনেক সময় ধরে নৃশংসভাবে কুপিয়ে তাকে হত্যা করা হয় বলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান। এ বিষয়ে আল আমিনের পিতা মোঃ ওসমান গনি বাদি হয়ে কামরাঙ্গীরচর থানায় সোহেল (২৫), রুবেল (২৩), ইসমাঈল (২৩), পায়েল (২৩) ও মোঃ সাজ্জাদসহ (৩০) আরও কয়েকজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি থানা পুলিশ তদন্ত করে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলাটির আসামিরা গ্রেফতার না হলে মামলার তদন্তভার দেয়া হয় ডিবি পুলিশকে। ডিবি পুলিশ ২০১৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মামলার এজাহারনামীয় আসামি রুবেলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। দেড় বছর পর রুবেল জামিনে বেরিয়ে যায়। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান চলতে থাকে। কিন্তু আর কোন আসামি গ্রেফতার হচ্ছিল না। আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে আত্মসর্মপন করে পায়েল নামে মামলার এক এজাহারনামীয় আসামি। সে বতর্মানে কারাগারে। পিবিআইয়ের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে বলেন, ডিবি পুলিশ প্রায় পাঁচ বছর মামলাটির তদন্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আদালতে দাখিলকৃত চার্জশিটে অজ্ঞাত কারণে সাজ্জাদকে বাদ দেয়া হয়। এতে মামলার বাদী আল আমিনের পিতা আপত্তি করেন। তিনি আদালতে না রাজি আবেদন করেন। পরে ঢাকার সিএমএম আদালত মামলাটির তদন্তভার পিবিআই- ঢাকা মেট্রোকে দেয়। পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জানান, অনেক দিন ধরেই সাজ্জাদের সন্ধান চলছিল। কিন্তু তার হদিস মিলছিল না। সর্বশেষ গত ২০ ফেব্রুয়ারি সাজ্জাদের সন্ধান মেলে। তাকে ওই রাতেই রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানাধীন যাত্রাবাড়ী থানাধীন ভাঙ্গাপ্রেস এলাকার চাঁন মিয়া রোডের খান ভিলার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার পিতার নাম মোঃ আলাউদ্দিন পাঠান। বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানাধীন বরপা পূর্বপাড়া গ্রামে। সে পেশাদার অপরাধী। তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের একাধিক থানায় খুন ও ধর্ষণের চেষ্টার মামলা রয়েছে। পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার বশির আহমেদ জানান, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সাজ্জাদকে ঢাকার সিএমএম আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত সাজ্জাদকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রোর পরিদর্শক শামীম আহমেদ সাজ্জাদকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে জানান, রুবেল ও পায়েল গ্রেফতারের পর আল আমিন হত্যাকা-ের ঘটনার অনেক তথ্য বেরিয়ে আসে। তাদের সেই তথ্যের সূত্রধরে গ্রেফতার হয় সাজ্জাদ। বর্তমানে পলাতক থাকা এজাহারনামীয় আসামি সোহেল ও ইসমাইলকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এই পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, মামলার তদন্তে পাওয়া তথ্য মোতাবেক নিহত আল আমিন এবং তার হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামিরা পরস্পর বন্ধু। তারা সমবয়সী। দীর্ঘদিন একত্রে চলাফেরা করত। নিহত আল আমিন স্থানীয়। তেমন কিছুই করত না। তার পিতা ছোটখাটো ব্যবসায়ী। আল আমিনের বড় ভাইয়ের একটি রিক্সা গ্যারেজ আছে। সেই রিক্সা গ্যারেজেই আল আমিন ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে বসত। সেখানে স্থানীয় কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা ইসমাঈল (২৩) ও পায়েল (২৫), নারায়ণগঞ্জের সাজ্জাদ (২৬) এবং আপন চাচাতো ভাই পিরোজপুর জেলার কাউখালীর বাসিন্দা সোহেল (২৫) ও রুবেল (২৩) নিয়মিত আড্ডা দিত।
×