ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাদক ব্যবসায়ী ও এর সঙ্গে জড়িত পুলিশের নতুন তালিকা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

মাদক ব্যবসায়ী ও এর সঙ্গে জড়িত পুলিশের নতুন তালিকা হচ্ছে

শংকর কুমার দে ॥ সারা দেশের ৬৪ জেলায় মাদক ব্যবসা বিশেষ করে ইয়াবা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত পুলিশ ও মাদক-ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। মাদক বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতদের তালিকা ডিজিটালাইজড করা হবে। কোন জেলায় কারা মাদক ব্যবসায়ী ও বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতদের তালিকা কম্পিউটারে টিপলেই চলে আসবে। পুলিশ সদর দফতর থেকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। মাদক ব্যবসা বিশেষ করে ইয়াবা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী ও পুলিশ সদস্যদের তালিকা তৈরির পর দেশব্যাপী মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গত রবিবার পুলিশ সদর দফতরের ত্রৈমাসিক অপরাধ সভায় সারা দেশে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন পুলিশ কর্মকর্তারাই। নতুন আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী দায়িত্ব গ্রহণের পর পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ তোলা হয়। নতুন আইজিপির নির্দেশেই দেশের মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের নতুন তালিকা প্রণীত হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের ত্রৈমাসিক অপরাধ বিষয়ক সভায় পুলিশ সুপার পদ মর্যাদার একজন কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, মাদক বাণিজ্যের সঙ্গে পুলিশের মাঠ পর্যায়ের সদস্য ও কর্মকর্তারা জড়িত। দেশের বিভিন্ন থানায় ওসি, এসআই, এএসআই পদায়নে রেঞ্জ ডিআইজিরা ২০ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ গ্রহণ করেন এবং ঘুষের টাকা চেইন অব কমান্ডের মতোই পুলিশের ওপরের কর্মকর্তাদের পকেটে চলে যায়। পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের মাদক বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। শুধু তাই নয়, মাদক বাণিজ্যে মদদদাতা ও পৃষ্ঠপোষকদের গডফাদার তালিকাও স্থান পাবে নতুন তালিকায়। এমনকী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা মাদক বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত তাদেরও তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানান, মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করা হবে নির্দিষ্ট ছক অনুযায়ী। নির্দিষ্ট ওই ছকে থাকবে মাদক ব্যবসায়ী, তাদের গডফাদার ও পৃষ্ঠপোষকদের নাম, পিতার নাম, তাদের রাজনৈতিক দলীয় ও প্রশাসনিক পরিচিতি। সারাদেশের ৬৪ জেলায় পুলিশের ইউনিট প্রধানরা এই তালিকা তৈরি করে নিজ ইউনিটের কাছে সংরক্ষণ ও পুলিশ সদর দফতরে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সারাদেশের মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের পৃষ্ঠপোষক গডফাদারদের তালিকা বিচ্ছিন্নভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের কাছে আছে। সেই তালিকা থেকেও নতুন তালিকা তৈরিতে সাহায্য ও সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। এরপর নতুন তালিকা ধরে পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশব্যাপী মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানান, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সারাদেশের মাদক ব্যবসায়ী বিশেষ করে ইয়াবা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ও তাদের পৃষ্টপোষক গডফাদারদের যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগই এখনও অধরা। মাদক ব্যবসা বিশেষ করে ইয়াবা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত রাজনৈতিক দলের নেতা, পুলিশ কর্মকর্তা, প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন। যারা গ্রেফতার হননি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতরের ত্রৈমাসিক অপরাধ সভায় সারাদেশে মাদকের ভয়াবহ বিস্তারের কারণ হিসেবে মাদক বাণিজ্যের সঙ্গে পুলিশের মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টিও অভিযোগ করা হয়। এমনকী ডিআইজিরা ওসি পদায়নে ২০ থেকে ৫০ লাখ টাকা ও এসপিরা পর্যন্ত ঘুষ গ্রহণ করেন, যা তারা মাদক বিশেষ করে ইয়াবা বাণিজ্যের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত হয়ে ঘুষের টাকার যোগান দেন বলে অভিযোগ করা হয়। এরপরই পুলিশের নতুন আইজি ড. জাভেদ পাটোয়ারী সারাদেশের মাদক বিশেষ করে ইয়াবা বাণিজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার করার জন্য তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন। মাদকদ্রব্য অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, সারাদেশের মাদক বিশেষ করে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকা তাদের কাছে আছে। এসব মাদক ব্যবসায়ী বা ইয়াবা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতদের অনেকেই মাদক আন্ডারওয়ার্ল্ডে তারা ডন হিসেবে পরিচিত। আবার তারা গডফাদার হিসাবেও পরিচিত। তাদের হাতেই দেশের মাদক বা ইয়াবা বাণিজ্যের সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ। অনেকে সরকারী দলের প্রভাবশালী নেতা। ওয়ার্ড, থানা বা মহানগর নেতা থেকে খোদ সংসদ সদস্য থেকে সিআইপি খেতাব পাওয়া ধনাঢ্য ব্যবসায়ী থেকে সরকারী কর্মকর্তারাও মাদক বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। তবে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা হাতেনাতে মাদক উদ্ধার করা ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করতে না পারার সীমাবদ্ধতায় মাদক ব্যবসায়ী বা ইয়াবা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতরা গ্রেফতার এড়িয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে। ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী নতুন আইজিপির দায়িত্ব গ্রহণের পর দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ প্রশাসন ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা দেয়ার পর সারাদেশে পুলিশের ১০ হাজার কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে সার্ভিলেন্স টিম নিয়োগ দিয়েছেন। এখন আবার মাদক ব্যবসা বা ইয়াবা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত পুলিশ, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, প্রশাসনের কর্মকর্তা, গডফাদার তাদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। এই তালিকা তৈরি হলে দেশব্যাপী মাদক বা ইয়াবা বিরোধী অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা করা হবে, যা পুলিশের নতুন আইজির জন্য আরও একটি চ্যালেঞ্জ বা কঠিন পরীক্ষা।
×