ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আর ঢুঁ মারা নয়, বই কেনার শেষ সময়

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আর ঢুঁ মারা নয়, বই কেনার শেষ সময়

এত লম্বা সময় ধরে চলছে মেলা। এক মাসের আয়োজন। এর পরও ভাললাগে। এর পরও বলতে মন চায়- থেকে যাও। চলুক। বইয়ের চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে? বই তো বন্ধু। তাকে পড়ি। পড়তে ইচ্ছে হয় না? হবে। বইয়ের সান্নিধ্যে আসুন। ছুঁয়ে দেখুন। পাতা উল্টান। ভাল লাগবেই। আর ভাল লাগে বলেই হয়ত চোখের পলকে চলে গেল ২৩ দিন। শেষ শুক্রবারটিও শেষ হলো। এদিনও যথারীতি ছিল শিশুপ্রহর। বেলা ১১টায় খুলে দেয়া হয় প্রবেশদ্বার। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশু-কিশোরদের বইয়ের আলাদা প্রদর্শনী। আছে আকর্ষণীয় টুকটুকি ও হালুম। অনেক দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখতে হলো তাদের। শত শত বাচ্চা ঘিরে রেখেছিল মঞ্চ। উঁকি দিয়ে দেখছিল। বাচ্চাদের বই পড়ার গুরুত্ব গল্পের ছলে বলে যাচ্ছিল সিসিমপুরের দুই কাল্পনিক দুই চরিত্র। একইসঙ্গে চলছিল বই কেনা। বাবা মায়ের হাত ধরে বই পছন্দ করা। নিজের যে বইটি চাই, কিনে দেয়ার জন্য বায়না ধরা, অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য! এমন দৃশ্য দেখা যায় বেলা ২টা পর্যন্ত। বিকেলের পর থেকে আসতে থাকেন সব বয়সী মানুষ। শেষ শুক্রবার যেহেতু, বইপ্রেমী মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। আশপাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মেলায় ঢুঁ মারার যে ব্যাপারটি ছিল, এখন আর তা নেই। দেখা যাচ্ছে না। বই কেনায় ব্যস্ত সবাই। যারা আগেই মেলা ঘুরে পছন্দের বই কিনেছেন তাদের জন্য বলা- আরও বই এসেছে। আসছে প্রতিদিন। নতুন প্রকাশনা নয় শুধু, সংগ্রহে রাখার মতো বই। অন্যপ্রকাশ থেকে মেলায় এসেছে সৈয়দ শামসুল হকের উপন্যাস ‘নদী কারো নয়।’ সব্যসাচী লেখক চির বিদায় নিয়েছেন। তবে তাঁর লেখা কথা বলছে তাঁর হয়েই। এটি লেখকের শেষ উপন্যাস। বিষয় হয়ে এসেছে দেশভাগ। দেশভাগের ফলে, বাংলাভাগের ফলে মানুষের মনে যে বেদনা ও বিচ্ছিন্নতার বোধ জন্ম নিয়েছিল, আবারও তা সামনে নিয়ে এলো বিশাল ক্যানভাসে লেখা উপন্যাস। একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে মেলায় এসেছে ‘তিনটি শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ : সক্রেটিস ও গণতন্ত্র।’ জালাল ফিরোজের লেখা। একটু ব্যতিক্রমী প্রয়াস বলতে হবে। এতে ম্যাকিয়াভেলির ‘দি প্রিন্স’, এডাম স্মিথের ‘দি ওয়েলথ অব নেশনস’ এবং টমাস পেইনের ‘কমনসেন্স’ বই তিনটি সম্পর্কে জানা যাবে। সরল ভাষায় লেখা বইটি একইসঙ্গে সুখপাঠ্য। উপন্যাসের জন্য বিশেষ আলোচিত নাসরীন জাহান। এর পাশাপাশি দারুণ সব গল্প লিখেছেন। সেগুলো থেকে কয়েকটি বেছে নিয়ে ‘প্রেমের গল্পসমগ্র’ প্রকাশ করেছে পাঞ্জেরী। আমাদের চারপাশের ঘটনাগুলোকে, চরিত্রগুলোকে তিনি নিজের মতো করে দেখছেন। গল্পের ছলে উপস্থাপন করছেন। এই সময়ের নর-নারীদের বহুমাত্রিক সম্পর্কের কথা ওঠে এসেছে তাঁর গল্পে। প্রেমের গল্পগুলোতেও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে পাঠকের সামনে উপস্থিত হয়েছেন নাসরীন জাহান। একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছে ‘আর্নেস্ট হেমিংওয়ে সেরা ২০ ছোট গল্প।’ ভূমিকা ও ভাষান্তরের কাজ করেছেন রনক জামান। বিশ্বসাহিত্যের কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে। দ্য ওল্ড ম্যান এ্যান্ড দ্য সী উপন্যাসটির সুবাদে পাঠকনন্দিত হলেও অসামান্য কিছু ছোটগল্প লিখেছেন তিনি। সবমিলিয়ে তাঁর রচিত গল্পের সংখ্যা ৪৯। এই ৪৯টি গল্পের মধ্য থেকে বাছাই করা ২০টি গল্পের অনুবাদ নিয়ে এই গ্রন্থ। সুবর্ণ থেকে এসেছে আসাদ চৌধুরীর লেখা ‘স্মৃতিগুলো সুখের ছিল।’ কবির দীর্ঘ জীবন। ছয় দশক ধরে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির ভুবনে বিচরণ করছেন। সেই জীবনের নানা কথা তিনি বিভিন্ন সময় পত্রিকায় লিখেছেন। ব্যক্তিগত স্মৃতি ভ্রমণ লেখালেখির গল্প নিয়ে এ বই। ঐতিহ্য থেকে এসেছে ‘নোরবি: দ্য মিক্সড আপ রোবট।’ জ্যানেট আজিমভ ও আইজ্যাক আজিমভের লেখা অনুবাদ করেছেন খন্দকার ইশতিয়াক মাহমুদ। মেলা মঞ্চের আয়োজন ॥ গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে ছিল ‘শওকত আলীর সাহিত্যসাধনা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আবু হেনা মোস্তফা এনাম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ফারজানা সিদ্দিকা ও তারেক রেজা। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। সন্ধ্যায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
×