ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আইনের তোয়াক্কা নেই সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আইনের তোয়াক্কা নেই সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের

তপন বিশ্বাস ॥ পাঁচ বছর অন্তর গণকর্মচারীদের (সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী) সম্পদ হ্রাস-বৃদ্ধির হিসাব প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগে জমা দেয়ার বিধান মানা হচ্ছে না। এমনকি এ নিয়ে মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কোন আলোচনাও নেই। বিষয়টি নিয়ে যে যার মতো ব্যাখ্যাও দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। কেউ বলছেন গণকর্মচারী আপীল ও শৃঙ্খলা বিধিমালা সেকেলে এবং বর্তমানে তা প্রতিপালনযোগ্য নয়। এখন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আয়কর রিটার্ন জমা দেন এবং প্রত্যেকের ব্যক্তিগত টিআইএন নম্বর রয়েছে। আবার কেউ বলছেন রাষ্ট্রপতির আদেশে জারি হয়েছে বলে এটি প্রতিপালনযোগ্য। বাতিল করার আগ পর্যন্ত অক্ষরে অক্ষরে তা পালন করা বাধ্যতামূলক। সূত্র জানায়,পাঁচ বছর পর পর সম্পদের পরিমাণ কমা-বাড়ার হার উল্লেখ করে নিজ উদ্যোগে সকল সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্ধারিত ফরমে কর্তৃপক্ষের কাছে হিসাব বিবরণী জমা দেবেন। সর্বশেষ ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা তা জমা দিয়েছিলেন। তারপর থেকে ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ বছর অতিক্রান্ত হলেও সম্পদের হ্রাস-বৃদ্ধির হিসাব জমা দিচ্ছেন না কর্মকর্তারা। আবার ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর আরও ৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু সরকারী কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সম্পদের হ্রাস-বৃদ্ধির হিসাব জমা দেয়ার কোন আদেশ-নির্দেশ জারি করা হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি নিয়ে কারও মাথা ব্যথা নেই। বিধিবদ্ধ আইন তামিল না করা বড় ধরনের অপরাধ। প্রশ্ন উঠেছে, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই যদি আইন না মানেন তা হলে কি করে তারা দেশের মানুষকে আইন মানতে বাধ্য করবেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এবং সরকারী চাকরির বিধিবিধান বইয়ের লেখক মোঃ ফিরোজ মিয়া বলেন, আয়কর রিটার্নের সঙ্গে গণকর্মচারী আপীল ও শৃঙ্খলা বিধিমালার কোন সম্পর্ক নেই। যতদিন গণকর্মচারী আপীল ও শৃঙ্খলা বিধিমালায় কর্মচারীদের সম্পদের হিসীব জমা দেয়ার বিধান বহাল থাকবে ততদিন তা অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালন করা বাধ্যতামূলক। না মানা মিজকন্ডাক। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে জারি করা এই বিধিমালা না মানার আইনগত কোন সুযোগ নেই। বরং পাঁচ বছর শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অধিন সকল সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে সম্পদের হিসাব বিবরণী তলব করবে। আর ক্যাডার কর্মকর্তাদের কাছে সম্পদের হিসাব চাইবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কেউ যদি মনে করেন আইনটি সেকেলে এবং প্রতিপালযোগ্য নয় তা হলে অবশ্যই তা গণকর্মচারী আপীল ও শৃঙ্খলা থেকে বাতিল করতে হবে। তিনি বলেন, আয়কর রিটার্নের সঙ্গে গণকর্মচারী আপীল বিধিমালার কোন সম্পর্ক নেই। দুটো আলাদা বিষয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পদস্থ এক কর্মকর্তা জানান, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সম্পদের পরিমাণ বাড়া কিংবা কমার ধরন উল্লেখ করে হিসাব বিবরণী জমা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তা- কর্মচারীদের মাদার ডিপার্টমেন্ট হচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সুতরাং তারা সম্পদের হিসাব বিবরণী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জমা দেবেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেয়া কিংবা নেয়ার কথা নয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, গণকর্মচারী আপীল ও শৃঙ্খলা বিধিমালা বহু পুরাতন আইন। আইনটি প্রতিপালন করা এখন সরকারী কর্মকর্তা- কর্মচারীদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। এখন তাদের জন্য বাধ্যতামূলক হচ্ছে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া। তারা প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন জমা দিচ্ছেন এবং প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর টিন নম্বর রয়েছে। তা ছাড়া সম্পদের হিসাব বিবরণী কেন্দ্রীয়ভাবে আয়কর অফিসেই সংরক্ষণ করা হয়। সুতরাং গণকর্মচারী বিধিমালার বিদ্যমান নিয়মটি প্রতিপালন নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কোন সুযোগ নেই। সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেয়ার জন্য কোন আদেশ-নির্দেশ জারি করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসনের ওই কর্মকর্তা জানান, গণকর্মচারী আপীল ও শৃঙ্খলা একটি স্ট্যান্ডিং আইন। সুতরাং এ বিষয়ে কাউকে নতুন করে আদেশ-নির্দেশ দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কেউ চাইলে মানবেন। না মানলে বাধ্যবাধকতা নেই। তিনি জানান, আমি মনে করি সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেয়া সংক্রান্ত গণকর্মচারী আইনটি ব্রিটিশ আমলে রচিত। এটির কার্যকারিতাও সেকেলে বলে তিনি মন্তব্য করেন। নিয়ম অনুসারে পাঁচ বছর অন্তর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তাদের সম্পদের হিসাব বিবরণী প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার কথা। তবে কেউ জমা দিচ্ছেন না। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল বলেন, এখন প্রতিবছর সম্পদের আয়কর রিটার্ন জমা দিচ্ছি। সুতরাং আগের আইন কি অবস্থায় আছে তা বলা যাচ্ছে না। তার জানামতে ওই মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের সম্পদের পরিমাণ কমা কিংবা বাড়ার ধরন উল্লেখ করে কোন বিবরণী জমা দেননি। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। তিনি এও বলেন, আয়কর রিটার্ন জমা দিলে সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেয়ার তেমন দরকার পড়ে না।
×