ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমার জেনারেলদের ওপর ইইউর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

 মিয়ানমার জেনারেলদের ওপর ইইউর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জেনারেলদের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য সম্ভাব্য শীর্ষ কর্মকর্তা বা জেনারেলদের তালিকা তৈরি করতে আগামী সোমবার ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধানের কাছে আনুষ্ঠানিক আহ্বান জানানো হবে। ওই তালিকা ধরে মিয়ানমার সেনাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হবে ইইউ’র পক্ষ থেকে সবচেয়ে কড়া পদক্ষেপ। এর আগে রাখাইন-কাচিনসহ কয়েকটি প্রদেশে হত্যাযজ্ঞ চালানো মিয়ানমার সেনাদের ওপর আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার নিষেধাজ্ঞা চলছে। সূত্র জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো ইইউও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চলেছে। নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন অঞ্চলে তাদের সম্পত্তি জব্দ ও লেনদেনে কড়াকড়িও আরোপ করা হতে পারে। ইউরোপীয় দেশগুলোর এ জোটের একজন কূটনীতিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বলেছেন, পদ্ধতিগত মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে ইইউ’র মন্ত্রীরা জোটের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মগেরিনির প্রতি আহ্বান জানাবেন। আগামী সোমবার নিয়মিত বৈঠকে বসছেন ইইউ’র পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। এই বৈঠকেই সম্ভাব্য পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হবে মগেরিনি ও ইইউ’র পররাষ্ট্র বিষয়ক সেল ‘ইয়াস’র কাছে। ১৯৯০ এর দশকে সামরিক জান্তার দেশটির ওপর যে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা ছিল, সেটাও পুনরায় আরোপ করার দাবি উঠবে বৈঠকে। ওই কূটনীতিকরা বলছেন, নিয়মিত বৈঠক শেষে ইইউ’র পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দিতে পারেন। যেখানে তাদের সবশেষ অবস্থান স্পষ্ট হতে পারে। এছাড়া মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গত ১২ ডিসেম্বর থেকে গ্রেফতার রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানানোও হতে পারে ইইউর ওই বিবৃতিতে। ইইউ কোন জেনারেলকে টার্গেট না করলেও গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিষেধাজ্ঞায় মেজর জেনারেল মং মং সোয়েকে ‘টার্গেট’ করে। এই সোয়েই রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ চালানো সেনা কমান্ডের প্রধান কর্তা। যেহেতু ইইউর নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত বিষয়াদি সবসময়ই ওয়াশিংটনের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিচালিত হয়, ধারণা করা হচ্ছে জোটের মিয়ানমার বিষয়ক সিদ্ধান্তও একইভাবে বাস্তবায়ন হবে। গত বছরের আগস্টে সন্ত্রাসী হামলার অজুহাতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর যে অভিযান শুরু করে, সেটাকে ‘জাতিগত নির্মূলীকরণ’ বলছে জাতিসংঘসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র । বিভিন্ন সংস্থার হিসাব মতে, ওই নিধনযজ্ঞ থেকে বাঁচতে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে সম্প্রতি সে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ঢাকার সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছে নেপিডো। যদিও প্রক্রিয়ার ধীরগতিতে মিয়ানমারের নেতৃত্বের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধি দল গত ১২-১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সফর করে। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সে সময় জানিয়েছিলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান করতে হলে, এই সঙ্কট যেখান থেকে শুরু হয়েছে, সেখান থেকেই সমাধান করতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজ করছে।
×