ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এবার ঝড় বাদলের পালা

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

এবার ঝড় বাদলের পালা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রকৃতি থেকে শীতের বিদায়ের পর এবার ঝড় বাদলের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। তারা বলছে আসছে গ্রীষ্মেই কালবৈশাখী থেকে শুরু করে বজ্রঝড়, শিলাবৃষ্টির আধিক্য থাকতে পারে। একই সঙ্গে তাপমাত্রার আধিক্য দেখা দিতে পারে। মার্চেই শুরু হতে পারে বজ্রপাতের মতো ভয়াবহ দুর্যোগ। এছাড়া এপ্রিল, মে মাসেও বজ্রপাতের পাশাপাশি শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। মধ্য এপ্রিল থেকে তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এ সময় অধিক তাপমাত্রার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ দেখা দিতে পারে। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের পৌঁছে যেতে পারে। সাগরেও দু-একটি নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণিঝড়ের দেখা মিলতে পারে। তারা জানায়, আসছে মার্চ মাস থেকেই বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেখা মিলতে পারে। সম্প্রতিকলে বজ্রপাতের কারণে প্রতি বছর দেশে কয়েকশ’ লোকের মৃত্যু হচ্ছে। ফলে এটিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়কারী দুর্যোগ হিসেবেই স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকেই। এ কারণে বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা পেতে দেশব্যাপী তাল গাছ লাগানোর কর্মসূচী হাতে নিয়েছে সরকার। আবহাওয়া অফিস বলছে অন্যবারের মতো এবারও প্রকৃতিতে বজ্রপাতের আধিক্য থাকবে। তা শুরু হবে মার্চ মাস থেকেই। একটানা মে মাস পর্যন্ত বজ্রপাতের মতো দুর্যোগ দেখা দিতে পারে। এবারে বছরের শুরুতেই শীতের তীব্রতা ছিল অন্য যে কোন সময়ে চেয়ে বেশি। এমনকি এবারই প্রথম এই ভূখ-ের তাপমাত্রা সর্বনি¤œ পর্যায়ে নেমে এসেছিল। আবহাওয়া অফিসের হিসাব অনুযায়ী গত ৮ জানুয়ারিতে দেশের তাপমাত্রা ২.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে এসেছিল সর্ব উত্তরে জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। এর আগে এই ভূখ-ে তাপমাত্রা এত নিচে নেমে আসার রেকর্ড তাদের হাতে নেই। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গেই তাপমাত্রা এত নিচে নেমেছিল। শুধু তাপমাত্রা নয় এবারে শীতের তীব্রতা যেমন বেশি ছিল। শীতে স্থায়িত্বও অন্যবারের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। মধ্য ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে তা একটানা মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতের দাপট লক্ষ্য করা গেছে। অথচ আগের বছর শীতের দেখা ছিল না বললেই চলে। বিশেষজ্ঞদের মতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছর শীতের পাশাপাশি অন্য ঋতু বৈচিত্র্যের ধরন বদলে যাচ্ছে। এবার শীত ঋতু দিয়েই প্রকৃতি বৈরী আচরণ শুরু করেছে। সামনের অন্য ঋতুগুলোতে একই ধরনের বৈরী আবহাওয়া দেখা দিতে পারে। বিশেজ্ঞরা বলছেন জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঋতু বৈচিত্র্যের ধরন বদলে যাওয়ার কারণেই গত বছর বৃষ্টির আধিক্য ছিল অনেক বেশি। প্রায় সারা বছরই ধরেই বৃষ্টি দেখা মিলেছে। গত বছর এপ্রিলের বৃষ্টিপাত ৪ দশকের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। আবার জুনের তিন ঘণ্টার বৃষ্টিপাতও নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড় ধসে মৃত্যু, দুই দফায় বন্যা, ঘূর্ণিঝড় সব ধরনের প্রাকৃতির দুর্যোগের ব্যাপক আধিক্য ছিল। তারা বলছেন এবারও ঋতুবৈচিত্র্যের ধরন বদলে প্রকৃতিতে বৈরী আচরণ দেখা দিতে পারে। এরই ধারাবাহিকতায় আবহাওয়া অফিস বলছে শীতের বিদায়ের এবার বজ্রঝড় ও শিলাবৃষ্টিও বয়ে যাবে। এর সঙ্গে তাপমাত্রাও বাড়বে। পাশাপাশি এবার বৈশাখ বৃষ্টিহীন থাকতে পারে। গ্রীষ্মে তাপমাত্রা বেড়ে উঠবে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছাবে। ওই সময় দেশের ওপর বয়ে যাবে তীব্র তাপপ্রবাহও। আবহাওয়া অধিদফতর তৈরি করা তিন মাসের এক দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে, মার্চ মাসে সামগ্রিকভাবে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এ মাসের দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ১-২ দিন মাঝারি/তীব্র কালবৈশাখী/ বজ্র-ঝড় ও দেশের অন্যত্র ২-৩ দিন হালকা/ মাঝারি কালবৈশাখী/ বজ্রঝড় হতে পারে। মার্চ মাসে দিনের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বেড়ে প্রায় স্বাভাবিক (৩৪-৩৬) ডিগ্রী সে. পর্যন্ত হতে পারে। তবে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চালে তাপমাত্রা (৩৭-৩৮) ডিগ্রী সে. পর্যন্ত হতে পারে। এপ্রিল মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি নিম্নচাপের সৃষ্টি হতে পারে। তা রূপ নিতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে। তবে এ মাসে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র তাপপ্রবাহ (৪০ ডিগ্রীর ওপরে তাপমাত্রা) এবং অন্যত্র ১ থেকে ২টি মাঝারি (৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা) এবং ১ থেকে ২টি মৃদু তাপপ্রবাহ (৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রা) বয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
×