ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাবি খেলার মাঠে মুক্তির উৎসব

বিজ্ঞানমনস্ক দেশ গড়ে তোলার শপথ শিশু-কিশোরদের

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বিজ্ঞানমনস্ক দেশ গড়ে তোলার শপথ শিশু-কিশোরদের

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে আনা ও বিজ্ঞানমনস্ক বাংলাদেশ গড়ে তোলার শপথ নিয়েছে শিশু-কিশোররা। শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে মুক্তির উৎসব ২০১৮’র অনুষ্ঠানে এই শপথ নেয় তারা। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। মাথায় লাল-সবুজের ক্যাপ, কণ্ঠে মুক্তির গান নিয়ে রাজধানী ও রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন স্কুলের প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী এতে অংশ নেয়। খুদে শিক্ষার্থীদের এ মিলনমেলায় একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধারা, শহীদ পরিবারের সদস্যরা যোগ দিয়ে শুনিয়েছেন যুদ্ধের ইতিহাস। এবারের উৎসবের স্লোগান ছিল- ‘আমরা গড়ব বিজ্ঞানমনস্ক মানবিক সমাজ।’ সকাল ৯টায় ছায়ানটের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে দেশের গান পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডাঃ সারওয়ার আলী। এরপর মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্নেল (অব) আবু ওসমান চৌধুরী উৎসবে আসা শিক্ষার্থীদের হাত উঠিয়ে শপথ পাঠ করান। উৎসবে অংশ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ভাষা আন্দোলন হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতার মূলভিত্তি। কে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী হবে সেজন্য দেশ স্বাধীন হয়নি। বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক মুক্তির জন্য দেশ স্বাধীন হয়েছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক মুক্তি আমরা পেলেও আজও অর্থনৈতিক মুক্তি পাইনি। কারণ- এখনও সব মানুষ লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে না, সব মানুষের বাসস্থানের ব্যবস্থা নেই, অনেক মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বাকি কাজ শেষ করার জন্য শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আগামী দিনেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকা মার্কার বিজয় নিশ্চিত করার জন্য কাজ করতে তিনি সবাইকে আহ্বান জানান। প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে তিনি বলেন, আমি জানি আমাদের শিক্ষার্থীদের মনে প্রশ্নকষ্ট আছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস চিরতরে বন্ধ করার জন্য সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, তোমরা তো আর মুক্তিযুদ্ধ করতে পারবা না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গড়ে তুলতে হবে। জনপ্রিয় লেখক ও অধ্যাপক জাফর ইকবাল শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের মতো ছেলে-মেয়েদের সংখ্যা আমাদের দেশে যত, বিশ্বের অনেক দেশের জনসংখ্যাই তত না। তাই তোমরা যদি শিক্ষিত হয়ে দেশকে ভালোবাস, একদিন ইউরোপ-আমেরিকার ছেলে-মেয়েরা তোমাদের কাছে শিখতে আসবে। তিনি বলেন, তোমরা শুধু মন দিয়ে লেখাপড়া করো। বাংলাদেশকে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা পাকিস্তানিদের হারিয়েছি। কাজেই এখন মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে লেখাপড়া করে। প্রশ্নফাঁস বিষয়ে তিনি বলেন, যারা ফাঁস করা প্রশ্নে পরীক্ষা দেয়নি তারা সবকিছু জানে বলে সব জায়গায় চান্স পায়। কিন্তু যারা ফাঁস করা প্রশ্নে পরীক্ষা দেয় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ধরা খাবে। তিনি বলেন, তোমরা নিজের পায়ে দাঁড়াও। তাহলে এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের যন্ত্রণা বন্ধ হবেই হবে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডাঃ সারওয়ার আলী বলেন, আজকে সমাজ ভেঙ্গে যাচ্ছে। ছেলে-মেয়েরা মাদকাসক্তি এবং অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়ছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হারিয়ে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রাখতে তাই প্রতিবছর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। উৎসবে সাংস্কৃতিক উপস্থাপনায় অংশ নেয় চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ ও খুদে গানরাজের শিল্পীরা, হযরত শাহ আলী মহিলা কলেজ, ওয়াইডব্লিউসিএ উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ব্রাইট স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। সঙ্গীত পরিবেশন করেন সঙ্গীতশিল্পী ফেরদৌস আরা, জলের গানের শিল্পীরা। সবশেষে দুপুরে র‌্যাফেল ড্র ও পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় মুক্তির উৎসব ২০১৮।
×