ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পেট্রোবাংলা কোন নিশ্চয়তা দেয়নি

গ্রীষ্মে চাহিদামাফিক গ্যাস পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় পিডিবি

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

 গ্রীষ্মে চাহিদামাফিক গ্যাস পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় পিডিবি

রশিদ মামুন ॥ গ্রীষ্মে চাহিদা মাফিক গ্যাস সরবরাহ পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সম্প্রতি পিডিবির পক্ষ থেকে গ্রীষ্মের দৈনিক বিদ্যুত উৎপাদন ঠিক রাখতে এক হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট বিদ্যুতের চাহিদা দেয়া হয়েছে। কিন্তু পেট্রোবাংলার কাছ থেকে এখনও চাহিদা মাফিক গ্যাস পাওয়ার কোন নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। জ¦ালনি বিভাগ গ্রীষ্মের জরুরী অবস্থা মোকাবেলায় মার্চের শুরু থেকে সারকারখানা বন্ধ করে ওই গ্যাস বিদ্যুতে সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উৎপাদন বৃদ্ধির অন্যতম শর্ত হিসেবে বলা হচ্ছে- এজন্য পিডিবিকে প্রতিদিন এক হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ দিতে হবে; এখন রয়েছে ৯৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। গত বছর গ্রীষ্মেও এই গ্যাসের সরবরাহ ছিল এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। যেহেতু গ্যাসের উৎপাদন বাড়েনি তাই এবারও চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ পাওয়ার ক্ষেত্রে শঙ্কা তৈরি হয়ছে। পিডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, এখন কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দিয়ে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করে। কোন কারণে ঘাটতি ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট হলে প্রায় এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র চালানো যাবে না। এতে উৎপাদন পর্যায়ে সমস্যা তৈরি হবে। বিদ্যুত বিভাগ আগামী গ্রীষ্মে বিতরণ পর্যায়ে ১৩ হাজার ৬৭৫ মেগাওয়াটের চাহিদা নির্ধারণ করেছে। গত বছর বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে নয় হাজার ৭০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত। তবে অধিকাংশ দিন গড়ে উৎপাদন ছিল নয় হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। এতে এবার সঙ্কট সামাল দিতে অতিরিক্ত সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াটের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। কিন্তু এক বছরের মধ্যে এতটা উৎপাদন বৃদ্ধি আদৌ সম্ভব কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সরকার শেষ সময়ে এসে সঙ্কট সামাল দিতে তেল চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি করছে। যদিও পিডিবি বলছে তাদের পক্ষে ১৩ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে গত ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া সেচ মৌসুমে ১০ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময়ে সর্বোচ্চ পল্লীবিদ্যুত সমিতিগুলোর ৫ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট চাহিদা দেখানো হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুত উন্নয়ন কোর্ডের চাহিদা দেখানো হচ্ছে এক হাজার ৬১০ মেগাওয়াট। চাহিদা ১০ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট হলেও এই সময়ে ৫ ভাগ প্রাথমিক খরচ এবং ৩ ভাগ সঞ্চালন ক্ষতি বাদ দিয়ে ১১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করতে হবে। তবে একদিনও পিডিবি এই পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদন করার কথা জানাতে পারেনি। এখনও পর্যন্ত পিডিবি সর্বোচ্চ উৎপাদন ৯ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটকে অতিক্রম করতে পারেনি। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সাধারণত দেখা যায় গ্রীষ্মে লোডশেডিং হলে পিডিবি নানাভাবে সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যবস্থার ওপর দোষ চাপায়। তখন বলা হয়, সঞ্চালন ব্যবস্থা ভাল না থাকায় উৎপাদন করা যায়নি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় যেসব প্লান্ট তৈরি থাকার কথা বলা হয় তা আদৌ তৈরি থাকে না; যাতে বিদ্যুতের উৎপাদনের যে প্রক্ষেপণ দেয়া হয় তা পূরণ হয় না। এবার এসব বিষয়ে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। জ¦ালানি বিভাগ সূত্র জানায়, গ্রীষ্মে পিডিবি যতটা গ্যাস বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য বরাদ্দ চেয়েছে তার পুরোটা দেয়া সম্ভব না হলেও সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করা হবে। এজন্য রেশনিং করার পাশাপাশি সারকারখানা বন্ধ করা হচ্ছে। মার্চের শুরু থেকেই সারকারখানাগুলো বন্ধ করে বিদ্যুত উৎপাদনে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো হবে। তবে এতেও পর্যপ্ত গ্যাস পাবে না বিদ্যুত কেন্দ্র।
×