ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবার উচ্চ ব্যয়ে শত শত পরিবার নিঃস্ব

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবার উচ্চ ব্যয়ে শত শত পরিবার নিঃস্ব

নিখিল মানখিন ॥ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবার উচ্চ ব্যয় বহন করতে গিয়ে সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে শত শত পরিবার। এটি দেশের দারিদ্র্য বিমোচন মোকাবেলার পথে অন্যতম প্রধান অন্তরায় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, হু হু করে বেড়েই চলেছে দেশের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যয়। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাব্যয় বাকিতে চলে না। দেশের মানুষের মাথাপিছু স্বাস্থ্যব্যয় বেড়ে প্রায় ২৩শ’ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ব্যয়ের ৬৪ শতাংশ ব্যক্তি নিজের পকেট থেকে খরচ করে। ২৬ শতাংশ ব্যয় বহন করে সরকার। বাকি ১০ শতাংশ ব্যয় বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, এনজিও ও ব্যবসায়িক বীমা কোম্পানি বহন করে। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে বছরে ৪ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। দেশের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা এখনও অনেকটাই জেলা ও বিভাগ কেন্দ্রিক। জটিল জটিল অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের মাত্রাও অনেকগুণ বেড়েছে। চিকিৎসাব্যয় ও ওষুধের দামও অনেক বেড়েছে। ব্যয়বহুল হওয়ায় দরিদ্র মানুষ জটিল ধরনের অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা করাতে পারে না। স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি ও ভোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শ্রেণীর জনগোষ্ঠীর মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। কিছু কিছু অসমতা এতটাই তীব্র ও প্রতিকূল যে, সমষ্টিগতভাবে তা দেশের অগ্রগতির অন্তরায়। কয়েকটি জটিল রোগ এবং দেশে সেগুলোর চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা ও সেবাগ্রহণে আর্থিক ব্যয় পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। প্রকৃতপক্ষে দেশে ক্যান্সার, কিডনি, লিভারসহ অনেক জটিল অসংক্রামক রোগের পূর্ণাঙ্গ ও শতভাগ নিরাপদ চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। এ সুযোগে এসব রোগে আক্রান্তদের নিয়ে চলে একদল অসাধু চিকিৎসক এবং চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান মালিক চক্রের রমরমা ব্যবসা। এমন বাস্তবতা জানার সুযোগ হয় না অনেক রোগী ও তাদের অভিভাবকদের। আরোগ্য লাভের আশায় চলে চিকিৎসা, কয়েক বছর পার না হতেই পরিবার হয়ে যায় নিঃস্ব, মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে রোগী। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে অনেক জটিল রোগের চিকিৎসার উন্নত ব্যবস্থা রয়েছে বাংলাদেশে। ক্যান্সার রোগী নিয়ে চলে থেরাপি ব্যবসা, দেশে নেই পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাব্যবস্থা ॥ দেশে ক্যান্সারের চিকিৎসা এখনও অপ্রতুল। চিকিৎসকদের দক্ষতা বৃদ্ধি পেলেও অপর্যাপ্ত অবকাঠামো ও মেডিক্যাল উপকরণ এবং ব্যয়বহুল হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে ক্যান্সারের চিকিৎসা। দেশের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা জানান, বাংলাদেশে সব মিলিয়ে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। প্রতিবছর প্রায় তিন লাখ মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আর বছরে মারা যায় প্রায় দেড় লাখ রোগী। সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ের বিদ্যমান চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশে বছরে ৫০ হাজার রোগীকে চিকিৎসাসেবার আওতায় নিয়ে আসা গেলেও আড়ালে থেকে যায় আরও প্রায় আড়াই লাখ রোগী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, জনসংখ্যা অনুপাতে বর্তমানে দেশে সব ধরনের সুবিধাসংবলিত ১৬০টি ক্যান্সার চিকিৎসাকেন্দ্র থাকা অপরিহার্য। কিন্তু বাংলাদেশে এখন এমন কেন্দ্রের সংখ্যা আছে মাত্র ১৫টি। আবার এর সবই কার্যকর নয়, বেশির ভাগই চলছে জোড়াতালি দিয়ে। এছাড়া সারাদেশে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র ৮৫ জন। অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য দিয়ে থেরাপি ব্যবসার অভিযোগ উঠেছে। এক বছর ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ছেন ফেনীর মোঃ আসিফ (৩৭)। ক্যান্সার ধরা পড়ার পর ঢাকার একটি সরকারী হাসপাতালে এক বছর ধরেই তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। আসিফের সঙ্গে হাসপাতালে আসা তার একজন আত্মীয় বলছিলেন, প্রথমে তারা ভারতে যাওয়ার কথা চিন্তা করলেও চিকিৎসার খরচের কথা বিবেচনা করে দেশের সরকারী হাসপাতালেই চিকিৎসা শুরুর সিদ্ধান্ত নেন। মোঃ আসিফ জনকণ্ঠকে জানান, কুমিল্লা থেকে ঢাকা এসেছি। এখানকার ডাক্তাররা বলল, বাংলাদেশে চিকিৎসা আছে। তাই খরচের কথা ভেবে ভারতে যাইনি। কিন্তু এখানেও অনেক খরচ। এই রোগের চিকিৎসার একটি অংশ কেমোথেরাপি, যেটা আসিফকে দেয়া হয়েছে ১২টি। আর প্রতিবারেই এ বাবদ তাদের গুনতে হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। তার এক আত্মীয় বলছিলেন জমি, গবাদি পশু বেচে ও অন্যান্য আত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা ঋণ নিয়ে চলছে তার চিকিৎসা। মিরপুরের ডেল্টা হাসপাতালের তেমনি একটি বিভাগে কেমোথেরাপি নিতে কিশোরগঞ্জ থেকে এসেছেন কাশেম মিয়া (৪৬)। তার সঙ্গে রয়েছে ছেলে বেলাল হোসেন (১৯)। সে জনকণ্ঠকে জানায়, ডাক্তার ১০টি কেমোথেরাপি নেয়ার কথা বললেও আপাতত ৬টার বেশির খরচ বহন করা তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব না। শেফালী আক্তার, শেরপুর জেলা সদরের নয়াপাড়া লসমানপুর গ্রামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর মেয়ে। বয়স মাত্র ৫ বছর। সে দুরারোগ্য ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। চিকিৎসার পেছনে সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন শিশুটির পিতা মোঃ সাইফুল। দুই বছর আগে ক্যান্সার ধরা পড়ে তার। সেই থেকে টানা চিকিৎসা চলছে। শেফালী সুস্থ হবে এমন নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা। চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েও চিকিৎসকদের এমন কথা বাড়িয়ে দিয়েছে শিশুটির মাতা-পিতার কষ্টের মাত্রা। সোয়া দুই বছরের শিশু আরিয়ান রাসিফ। সে দুরারোগ্য ব্যাধি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে সে। এ বয়সে গুটি গুটি পায়ে হেসে-খেলে বেড়ানোর কথা তার। কিন্তু জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে সে। বর্তমানে সে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। উন্নত চিকিৎসা দেয়া হলে শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এজন্য প্রয়োজন প্রায় ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু আরিয়ানের স্বল্প বেতনের চাকুরে বাবা মোঃ রাশেদ আলীর পক্ষে এ ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসার পেছনে ইতোমধ্যে পরিবারটির সহায় সম্বল ফুরিয়ে গেছে। বর্তমানে টাকার অভাবে চিকিৎসা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিশুটির পিতা মোঃ রাশেদ আলী। দেশে পূর্ণাঙ্গ ও স্থায়ী লিভার প্রতিস্থাপন সেন্টার নেই ॥ আর্থিক ও প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবে দেশে পূর্ণাঙ্গ ও স্থায়ী লিভার প্রতিস্থাপন সেন্টার স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলেন, লিভার প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হলে রোগীকে বিদেশে পাড়ি দিতেই হয়। বাংলাদেশে একটি স্থায়ী সেন্টার গড়ে উঠলে প্রতিটি লিভার প্রতিস্থাপন ব্যয় ৩০ থেকে ৩৫ লাখে নেমে আসতে পারে। যা দেশের বাইরে লাগে ৯০ লাখ থেকে আড়াই কোটি টাকা। ব্যয়বহুল চিকিৎসা হওয়ায় লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়া অনেক রোগীকে অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয়। তবে লিভার প্রতিস্থাপন প্রকল্পের প্রস্তাব দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা কমিশনে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। লিভার প্রতিস্থাপনে কয়েকবার সফলতার মুখ দেখেছে বাংলাদেশ। বারডেম ও ল্যাবএইডের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ও খুব শীঘ্রই লিভার সংযোজন শুরু করতে পারবে বলে আশা করছে। এভাবে দেশে একাধিক হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ লিভার সংযোজন কার্যক্রম শুরু হলে রোগীদের আর বিদেশী গিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে না এতে বিশাল অংকের টাকা ব্যয়ের পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক হয়রানি থেকে রোগীরা রেহাই পাবেন বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশে দ্বিতীয়বারের মতো সফল লিভার প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হয় বারডেম হাসপাতালে। কিন্তু লিভার প্রতিস্থাপনে এখনও অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত দেশে মাত্র তিনটি লিভার প্রতিস্থাপনের কাজ হয়েছে। দেশে এখন পর্যন্ত সরকারী ও বেসরকারীভাবে কোন স্থায়ী লিভার প্রতিস্থাপন সেন্টার নেই। লিভার প্রতিস্থাপন সম্পন্ন করতে বারডেম হাসপাতাল ও ল্যাবএইড হাসপাতালকে অনেক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের উপকরণ ধার করে ব্যবহার করতে হয়েছে। লিভার প্রতিস্থাপন খুবই ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসা। কিডনি বিকল মানেই যেন মৃত্যুর পথযাত্রী ॥ দেশে কিডনি বিকল রোগীদের জন্য কিডনিদাতার সঙ্কট প্রকট হয়েছে উঠেছে। কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষমাণ মোট রোগীদের মাত্র শতকরা ২ ভাগ রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়। অন্যরা নিজেদের মতো চেষ্টা করে রোগী নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমান। বাকিরা ডায়ালাইসিস দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে থাকেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টাকা দিয়েও কিডনি সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। কিডনি দেয়ার পর ফলোআপ চিকিৎসা ও বিভিন্ন কারণে নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন জীবিত কিডনিদাতারা। পাশাপাশি রয়েছে কিডনি সার্জনের সঙ্কট। আইনী জটিলতাসহ নানা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার কারণে কিডনি প্রতিস্থাপন কার্যক্রমে অংশ নিতে চান না সার্জনরা। এভাবে ব্যয়বহুল চিকিৎসা, উন্নত চিকিৎসার সীমাবদ্ধতা এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনের জটিলতার কারণে শত শত কিডনি বিকলরোগী অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। মৃত্যুর মুহূর্ত দেখার অপেক্ষা করা ছাড়া বিকল্প কোন উপায় থাকছে না রোগীর স্বজনদের। কিডনি দাতা ও গ্রহীতার ওষুধের মূল্যহ্রাস এবং মস্তিষ্কের মৃত্যুর (ব্রেইন ডেথ) পর তার বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অসুস্থ ব্যক্তির দেহে সংযোজন করার সুযোগ রেখে আইন তৈরির ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে মোঃ মঞ্জুরুল হাসানের। ডায়ালাইসিস দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। দুটি ডায়ালাইসি ও ওষুধের পেছনে প্রতি সপ্তাহে খরচ লাগে প্রায় ১০ হাজার টাকা। জরুরী ভিত্তিতে কিডনি প্রতিস্থাপন করানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু রোগীর পরিবারের পক্ষে এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পরিবারটির আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। মঞ্জুরুলের পিতা মোঃ আব্দুল হাকিম হাওলাদার ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কয়েক বছর আগে তিনি মারা যান। মা, ছোট তিন ভাই-বোন, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে মঞ্জুরুল হাসানের সংসার। চিকিৎসার খরচ মেটানোর পেছনে ইতোমধ্যে সহায় সম্বল ফুরিয়ে গেছে। অসহায় হয়ে পড়েছে মোঃ মঞ্জুরুল হাসানের পরিবার। টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার জলছত্র গ্রামের ৩০ বছর বয়সী হাসান মিয়ার দুটি কিডনি অকেজো হয়ে গেছে। কিডনি প্রতিস্থাপন করাতে তাগিদ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু কিডনিদাতা পাওয়া যাচ্ছে না। তার বড় ভাই হেলাল মিয়া জনকণ্ঠকে জানান, সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে ৬ লাখ টাকা যোগাড় করেছি। কিন্তু কিডনিদাতা পাওয়া যাচ্ছে না। সরাসরি রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় ছাড়া অন্য কারও কাছ থেকে কিডনি গ্রহণ নিষিদ্ধ বলে জানিয়ে দিয়েছেন দেশের চিকিৎসকরা। রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়ের কারও কিডনি মিল পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব দেশে অবাধ কিডনিদাতা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, সেসব দেশে যেতে হলে আরও টাকা লাগবে। এভাবে চিকিৎসার নানা জটিলতায় পড়ে তার ভাই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানান মোঃ হেলাল মিয়া। টাকার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে সিরাজগঞ্জের রবিউলের চিকিৎসা। তার দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। জরুরী ভিত্তিতে কিডনি প্রতিস্থাপন করানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু রোগীর পরিবারের পক্ষে এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। রবিউলের বাড়ি সিরাজগঞ্জ শহরের ধানবান্ধি মহল্লার জিএম হিলালী রোডে। তিনি সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের অস্থায়ী ভিত্তিক পিয়নের চাকরি করেন। পরিবারটির আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। বর্তমানে টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। রবিউল ও সেলিনা পারভিনের সংসারে রয়েছে তিন সন্তান। চিকিৎসার পেছনে সহায় সম্বল ফুরিয়ে গেছে। এভাবে কিডনি বিকল হলেই রোগীর মৃত্যু যেন ঠেকানো যাচ্ছে না! দেশে প্রায় ২ কোটি লোক কোন না কোন ধরনের কিডনি রোগে ভুগছে। আক্রান্তের শতকরা ৭৫ ভাগ রোগী কিডনি নষ্ট হওয়ার আগে এ মরণব্যাধির অস্তিত্ব ধরতে পারেন না। কিডনি বিকল রোগীর চিকিৎসা এত ব্যয়বহুল যে, মাত্র শতকরা ৭ থেকে ১০ ভাগ লোকের চিকিৎসা চালিয়ে যাবার সামর্থ্য আছে। দেশে প্রতি বছর ২৫ হাজার লোকের কিডনি বিভিন্ন কারণে হঠাৎ করে অকেজো হয়ে যায়। প্রতি বছর কিডনিজনিত রোগে প্রায় ৪০ হাজার লোক মারা যায়। দেশে প্রতি বছর ৩৫ হাজার মানুষের কিডনি স্থায়ীভাবে অকার্যকর হয়ে আছে। এদের মাত্র ২০ শতাংশ প্রতিস্থাপন চিকিৎসা (ডায়ালাইসিস ও ট্রান্সপ্লান্ট) পাচ্ছে। এভাবে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নত চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবাব্যয় দেশের অধিকাংশ মানুষের নাগালের বাইরে। তার চাপ গিয়ে পড়ছে বিনামূল্যে বা নামমাত্র খরচে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর। সরকারী হাসপাতালের তুলনায় অনেক গুণ বেশি চিকিৎসা খরচ হয়ে থাকে বেসরকারী হাসপাতালে। আর্থিক সঙ্কটে জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীর অকালে মৃত্যুর ঘটনাও বিরল নয়। সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগের মধ্যে সমন্বয় ঘটলে দেশের প্রত্যেক মানুষ স্বল্প খরচে উন্নত চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা পাবে। আর চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকার পরও অনেক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসক অর্থের লোভে রোগীদের আটকে রাখার প্রবণতা পরিহার করতে হবে। এতে অন্য কোথাও চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ পাবেন মৃত্যু পথযাত্রী অনেক রোগী।
×