ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদন

অসুস্থদের ৬১ ভাগই অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

অসুস্থদের ৬১ ভাগই অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত

নিখিল মানখিন ॥ অসুস্থ মানুষদের ৬১ শতাংশই অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত। খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচারের পরিবর্তন, দ্রুত নগরায়ণ, ধূমপান, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের প্রসার, বায়ুদূষণ, সড়ক দুর্ঘটনা, মানসিক চাপের কারণে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে হৃদরোগ, স্নায়বিক রোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, স্থায়ী বক্ষব্যাধি, আর্সেনিকোসিস, শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা, মুখের রোগ-এগুলোকে অসংক্রামক রোগ বলা হচ্ছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে পানিতে ডোবা, সাপে কামড়, আত্মহত্যা, নারীর প্রতি সহিংসতা, এসিডে পোড়া রোগীদেরও এর আওতাভুক্ত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক অসংক্রামক রোগের শতভাগ চিকিৎসা ব্যবস্থা দেশে নেই। তাই অনেক অসংক্রামক রোগীকে চিকিৎসার অভাবে অকালে মৃত্যুবরণ করতে হচ্ছে। বর্তমানে দেশের শতকরা ৬১ ভাগ রোগই হচ্ছে অসংক্রামক রোগ। এ সব রোগ মোকাবেলায় কোন জাতীয় দিক নির্দেশনা নেই। বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো নিজেদের মতো করে ব্যবসায়িক মনোভাব নিয়ে এ জাতীয় রোগের চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের ৯৭ শতাংশের কমপক্ষে একটি সংক্রামক রোগের ঝুঁকি আছে। আর এই জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের আছে দুটি রোগের ঝুঁকি। এসব রোগের ঝুঁকিরও কিছু পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, দেশে ৪ কোটি মানুষ ধূমপান ও পান-জর্দায় অভ্যস্ত। ৬ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ পর্যাপ্ত পরিমাণে ফল ও সবজি খান না। ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ প্রয়োজনীয় কায়িক পরিশ্রম করেনা, অন্যদিকে দেশের বয়স্কদের ১৮ শতাংশের উচ্চ রক্তচাপ ও ৪ শতাংশের ডায়াবেটিস আছে। অসংক্রামক রোগ বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন এ বি এম আবদুল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন, মানসিক চাপ, ধূমপান, ভেজাল খাবার, বায়ুদূষণের কারণে অসংক্রামক রোগ বাড়ছে। ফাস্ট ফুডে অভ্যস্থ হওয়ার পাশাপাশি শারীরিক পরিশ্রম না করার কারণেও এর ঝুঁকি বাড়ছে। তিনি বলেন, ভেজাল, ধূমপান, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করার ব্যাপকভিত্তিক উদ্যোগ নিতে হবে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নেয়া রোগীর পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে, হৃদরোগের প্রকোপ বাড়ছে। ২০০৯ সালে জাতীয় এই হাসপাতালের বহির্বিভাগে ১ লাখ ৬০ হাজার ৮ জন চিকিৎসা নেয়। ২০১৪ সালে বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৫৩৩ জনে। একই সময়ের ব্যবধানে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। একইভাবে জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, প্রতিবছরই এই প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পরিসংখ্যান বলছে, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে ক্যানসারের রোগীও বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রামক রোগ ধীরে ধীরে কমছে, দ্রুত বাড়ছে অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। আর অসংক্রামক রোগে আক্রান্তরা খুব তাড়াতাড়ি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। এ ধরনের রোগের চিকিৎসা ব্যয় দেশের অধিকাংশ মানুষের সামর্থ্যরে বাইরে চলে যাচ্ছে। অসংক্রামক রোগ আজ মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিকার ও প্রতিরোধযোগ্য।
×