ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপত্তা ও পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে এ সিদ্ধান্ত ॥ মেলা সচিব

একুশে গ্রন্থমেলায় পোর্ট্রেট আঁকার অনুমতি পাননি চিত্রশিল্পীরা

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

একুশে গ্রন্থমেলায় পোর্ট্রেট আঁকার অনুমতি পাননি চিত্রশিল্পীরা

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ গ্রন্থমেলায় ঘুরতে এসেছেন ফাতেমা। পছন্দের বই কিনেছেন স্টল ঘুরে ঘুরে। ফেরার পথে তিনি চিত্রশিল্পীদের খুঁজছেন। কারণ তার মায়ের পুরনো একটি ছবির পোর্ট্রটে আঁকতে চান তিনি। কিন্তু অনেক খুঁজেও তিনি কোন চিত্রশিল্পীকে মেলার মাঠে ও আশপাশে কোথাও দেখতে না পেয়ে ফিরে গেলেন। প্রতি বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ঢোকার মুখে পেন্সিল আর ক্যানভাস নিয়ে বসতেন তরুণ চিত্রশিল্পীরা। কিন্তু এবারের গ্রন্থমেলায় তাদেরও দেখা নেই। অনেকেই তাদের খুঁজে না পেয়ে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। চিত্রশিল্পীদের বেশিরভাগই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী। এরা মূলত মেলায় আসা দর্শনার্থীদের পোর্ট্রেট আঁকতেন। বছরের পর বছর মেলায় আসা ক্রেতাদের অনেকেই মেলার আগ থেকে ভেবে থাকে এবারের মেলা চলার সময়ে নিজেদের অথবা প্রিয়জনদের ছবি আঁকবেন অথচ তারা নিরাশ হচ্ছেন। কারণ চিত্রশিল্পীদের দেখা নেই। তবে কেন দেখা নেই রং-তুলির কারিগরদের? গ্রন্থমেলা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, মেলার পরিবেশ ও নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করেই চিত্রশিল্পীদের মেলায় ঢোকার অনুমতি নেই। এমনকি মেলার বাইরেও বসার নির্দেশ নেই বলে জানানো হয়েছে। যার হাত ধরে শুরু হয়েছিল গ্রন্থমেলায় চিত্রশীল্পীদের পোর্ট্রটে আঁকার প্রচলন তিনি হলেন চিত্রশিল্পী রাজু সাহা। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ‘১৯৯৮ সাল থেকে গ্রন্থমেলায় আঁকাআঁকি শুরু করি। তৎকালীন মহাপরিচালক কবীর নুরুল হুদা মেলা প্রাঙ্গণে আমার হাতে ক্যানভাস দেখে বলেছিলেন ছবি আঁকতে চাও? তখন হ্যাঁ বলায় উনি আমাকে গ্রন্থমেলায় বসতে অনুমতি দেন। পরবর্তীতে সুমন, রতনসহ আমরা তরুণ চিত্রশিল্পীরা একসঙ্গে ছবি মেলা প্রাঙ্গণে পোর্ট্রটে আঁকা শুরু করি। জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি ছবি এঁকে সুনাম অর্জন করা আমাদের মূল লক্ষ্য। কিন্তু গত ২ বছর ধরে আমাদের মেলা প্রাঙ্গণে বসতে দেয়া হচ্ছে না। মেলা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অনেকবার যোগাযোগ করা হলেও আমাদের বসার অনুমতি মেলেনি। অনেক ক্রেতারা মেলায় এসে আমাদের খোঁজেন। অনেকেই মেলা শুরু হওয়ার আগে থেকে বলেন ভাই, এবারের মেলায় থাকবেন তো! আমরা তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছি না। আমরা গ্রন্থমেলায় ছবি আঁকার প্রচলন শুরু করলেও আমরাই এখন ছবি আঁকতে পারছি না।’ অনেকটা আক্ষেপ নিয়ে এই চিত্রশিল্পী বললেন, বর্তমানে মেলার স্থান বেড়েছে। সেইসঙ্গে বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন স্টল রয়েছে যেমন-খাবারের স্টল, রক্তদান কর্মসূচী, বিকাশ ইত্যাদি। তবে আমাদের জন্য একটি স্টল দিতে সমস্যা কোথায়? সাধারণ মানুষকে আমরা একটি ছবি আঁকি বিনোদন দিয়ে থাকে। আমাদের শিল্পকর্মকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে। এমন হলে তো চিত্রশিল্পীরা হারিয়ে যাবে। গ্রন্থমেলায় অনেক শিশু-কিশোররা আসে। তারা এসে যখন মেলা প্রাঙ্গণে ছবি আঁকার দৃশ্য দেখবে তখন তাদেরও অনেক ভাল লাগবে। তারা এই শিল্পটাকে বুঝতে শিখবে। আমরা যখন বসতাম তখন অনেক অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের আমাদের দেখিয়ে বলতেন দেখো আংকেলের মতো ছবি আঁকতে হবে কিন্তু! অনেকেই আসত তাদের বাবা-মা বা প্রিয়জনের শেষ স্মৃতি একটি পুরনো ছবি নতুন করে আঁকিয়ে নেয়ার জন্য। তাদের প্রত্যাশা পূরণে ও আনন্দ দেয়ার জন্যই আমরা ছবি আঁকি। কিন্তু বর্তমানে শিল্পকর্মকে বাণিজ্যিকভাবে রূপ দেয়া হচ্ছে। প্রশাসনিক জটিলতায় আমরা শিল্পচর্চা করতে পারছি না। এদিকে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণে বিকাশ স্টলের সামনে দেখা গেলো দু’জন চিত্রশিল্পকে। যারা সেখানে বসে ছবি আঁকছেন। জানা গেল, যেসব ক্রেতারা নির্দিষ্ট বিকাশ স্টলে এসে এ্যাকাউন্ট খুলবেন তারা পাবেন বিকাশের সৌজন্যে ফ্রি পোট্রের আঁকার সুযোগ। এটি অনেকটা বাণিজ্যিকীকরণ বলে উল্লেখ করে চিত্রশিল্পী রাজু সাহা বলেন, আমিও দেখেছি বিকাশ স্টলে বসা দু’জন আর্টিস্টকে।
×