ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অসচেতনতা

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

অসচেতনতা

অসচেতনতা এবং অসতর্কতাই দুর্ঘটনার মূল কারণ এমন কথা প্রায়শই বলা হয়, কিন্তু তারপরও আমাদের চৈতন্য ফেরে না, আমরা অবলীলায় এমন সব কাজ করছি শেষ পর্যন্ত তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সময় পরিবেশ-পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকলে এমন কোন কাজ করা উচিত নয় যার পরিণাম জীবনের জন্য ডেকে আনে বিপর্যয়, বিপদ এমনকি মৃত্যু। প্রতিনিয়ত এই যে মিডিয়ার বদৌলতে নানা দুর্ঘটনার খবর পাচ্ছি আমরা, কিন্তু এ থেকে নিজেরা কতটা সতর্ক ও সচেতন হচ্ছি সে প্রশ্ন না এসে পারে না। দুর্ঘটনার কারণগুলো যদি আমরা পর্যালোচনা করি তা হলেই দেখব এসব দুর্ঘটনার পেছনে মূলত দায়িত্বশীলতা ও অসতর্কতাই দায়ী। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য বিবেক ও কর্তব্যজ্ঞানের অভাবও পরিলক্ষিত হয়। যে কোন পদক্ষেপ নেয়ার আগে ভাবতে হবে এটি কতটা সময়, পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। সড়কের মাঝ পথ দিয়ে হাঁটলে কিংবা গাড়িতে/ বাসে যাতায়াতের সময় হাত-মাথা বাইরে বের করে রাখলে যে কোন মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে বিপত্তি, দুর্ঘটনাÑএ বিষয়ে যেমন সদা সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয় তেমনি রেললাইনের স্লিপারে বসে গল্প করা কিংবা মোবাইলে কথা বলতে বলতে হাঁটা মুহূর্তের মধ্যে বিপদ ডেকে আনতে পারেÑ ট্রেনের ছাদে চড়ে এমন করতে গেলেও ঘটতে পারে বিপদ, দুর্ঘটনা এমনকি প্রাণনাশ। যেমনটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার ২০ ফেব্রুয়ারি ট্রেনের ছাদে চড়ে ভ্রমণের সময় রানীনগর রেলওয়ে স্টেশনের নিচু ওভারব্রিজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মৃত্যু ঘটেছে চারজন ট্রেনযাত্রীর আহত হয়েছেন আরও চার যাত্রী। নিহতরা সবাই ঢাকা থেকে ট্রেনযোগে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন এবং সবারই বয়স ৩০ এর নিচে। বিষয়টি মর্মান্তিক হলেও এটিকে নিছক দুর্ঘটনা বলা যাবে না। অসচেতনতা এবং অসতর্কতাই এই দুর্ঘটনার মূল কারণ। সেই সঙ্গে এটাও বলা সঙ্গত যে, রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাও এর জন্য কম দায়ী নয়। নতুন ট্রেনের কোচগুলো পূর্বের ট্রেনের কোচের তুলনায় একটু উঁচু এবং সেই তুলনায় রানীনগর রেলওয়ে স্টেশনের ওভারব্রিজটি নিচু হওয়ায় যে দুর্ঘটনার কারণ এটা যেমন সত্য তেমনি সত্য আমাদের উদাসীন মানসিকতা। আমরা ট্রেনের ছাদে চড়ে বাড়ি যাবার ঝুঁকি নিতে যেমন পিছপা হই না, তেমনি চিন্তা করি না আমাদের সামান্য ভুলে বা অবহেলায় জীবন যে কোন সময় বিপন্ন হয়ে যেতে পারে। সময়ের, অর্থের মায়া এবং চিন্তা আমরা করি বটে কিন্তু জীবন যে এর চেয়ে অনেক বেশি দামী এবং এটা যে অমূল্য তা ভেবে দেখি না। অদ্ভুত খেয়াল জন্মে আমাদের এক এক সময় আর এভাবে বিনা কারণে আমরা আত্মবিসর্জন দেই। কিন্তু পঙ্গু হয়ে যারা বেঁচে আছেন তারা সারা জীবনের জন্য হয়ে পড়েন সমাজ ও পরিবারের বোঝা। যারা চলে যান তারা রেখে যান পরিবারের জন্য দুঃসহ যন্ত্রণা, অতীত। অথচ আমাদের সাধারণ বোধ বিবেচনা যদি প্রয়োগ করি, যদি ভাবি ট্রেনের ছাদে চড়ে ভ্রমণ করলে পরিণতি যে কোন মুহূর্তে ভয়াবহ হতে পারে তা হলে অন্তত এমন ঝুঁকি নিতে সংকোচবোধ করতাম। যে কোন দুর্ঘটনায় পড়ে তা সে নৌপথে বা সড়ক পথে বা রেলপথেই হোক না কেন দোষারোপের সংস্কৃতি চালু করি, কিন্তু নিজেদের দোষ ও দায় সম্পর্কে সচেতন ও সতর্ক হই না। অন্যকে দোষ দেই নিজে সাবধান হই না। প্রায় প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতা খুললেই কিংবা টিভি চ্যানেল অন করলেই দেখা যায় সড়ক দুর্ঘটনার বীভৎস চিত্র, নিহত আহতের ছড়াছড়ি। তাদের আপনজনদের আহাজারি কিন্তু এতসব দুর্ঘটনার পরেও আমরা দায় এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হই না। সড়ক, নদী বা রেলপথে চলাচলে আমরা যদি বিধি বা নিয়ম মেনে চলি, যদি অর্থ ও সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি, এ কথাটি এক বার চিন্তা করি তা হলে এভাবে অকালে, অসময়ে মৃত্যুকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে না।
×