ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সীতাকুন্ডে নিম্নমানের গ্যাস সিলিন্ডার ॥ ঘটছে প্রাণহানি

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সীতাকুন্ডে নিম্নমানের গ্যাস সিলিন্ডার ॥ ঘটছে প্রাণহানি

নিজস্ব সংবাদদাতা, সীতাকু- ২৩ ফেব্রুয়ারি ॥ সীতাকুন্ডে লাইসেন্সবিহীন অনেক দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার কেনা-বেচা চলছে লাগামহীন। অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে নামহীন গ্যাস সিলিন্ডার উপজেলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে, যা বিস্ফোরিত হয়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। গত একমাসে প্রাণ হারিয়েছে ৫ জন। সরকারের যথাযথ সংস্থার মাধ্যমে এ ব্যবসায় ব্যবহৃত সিলিন্ডারগুলোর মান পরীক্ষার দাবি উঠেছে। সীতাকুন্ডে গত এক মাসে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে শিপ ইয়ার্ড, গ্যাসের দোকান ও বসতবাড়িতে ৫ জন নিহত ও ৯ জন আহত হয়েছেন। উপজেলার বাড়বকু- অনন্তপুর এলাকায় গত ৯ ফেব্রুয়ারি এসএস রূপান্তর নামক টায়ার পুড়িয়ে তেল তৈরির কারখানায় সিলিন্ডার গ্যাস বিস্ফোরণে তিনজন অগ্নিদগ্ধ হন। ১২ ফেব্রুয়ারি উপজেলার সোনাইছড়ি জোড়ামতল এলাকার একটি মার্কেটের মানিকের দোকানে গ্যাস সিলিন্ডারে কাজ করা অবস্থায় দু’জন দগ্ধ হন। দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও পরে আহত রাসেলের শরীরের ৯০ ভাগ পুড়ে যাওয়ায় কর্তব্যরত ডাক্তার ঢাকা প্রেরণ করেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ৮দিন চিকিৎসাধীন থেকে মৃত্যুবরণ করেন। একজন এখনও চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে রয়েছেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি উপজেলার বার আউলিয়া সাগর উপকূল এলাকায় এসব নামহীন গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তিন শ্রমিক দগ্ধ হয়। দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে তাদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করানো হয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি উপজেলার সোনাইছড়ি বার আউলিয়া গামারিতল এলাকায় ভাড়া বসতঘরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। এতে বসতঘরে আটকা পড়ে হারুনূর রশিদের প্রতিবন্ধী পুত্র মোঃ ইব্রাহিম (১০) নিহত হয়। এসব নামহীন গ্যাস সিলিন্ডারের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার হচ্ছে চট্টগ্রামের সীতাকু-ের শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড ও পুরাতন জাহাজের স্ক্র্যাপ ডিপোগুলোতে, যা প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করতে বিস্ফোরক অধিদফতরের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক। কিন্তু সীতাকু- উপজেলায় কোন প্রকার লাইসেন্স ছাড়াই নিজেদের ইচ্ছেমতোই গ্যাসের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। হার্ডওয়্যার দোকান, পানের দোকান, মোবাইল ও বিকাশের দোকান, লাকড়ির দোকান, চায়ের দোকান এমনকি ওষুধের ফার্মেসির সঙ্গেও চলছে গ্যাসের ব্যবসা। আর এসব নামহীন গ্যাস সিলিন্ডার বাসা বাড়িতে ব্যবহার করে গৃহিণীরা প্রতিনিয়ত মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে চলছেন। এদের কারও বিস্ফোরক লাইসেন্স নেই, নেই আগুন নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। বিস্ফোরক লাইসেন্সের প্রদত্ত নিয়ম-কানুন অনুযায়ী গ্যাসের ডিলারের মাধ্যমে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসা পরিচালিত হয়ে থাকে। এতে নিরাপদে গ্যাস মজুদসহ নানা ধরনের দিক-নির্দেশনা থাকে। কিন্তু উপজেলার কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় বিভিন্ন দোকান ও শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে এসব নামহীন সিলিন্ডার গ্যাসের বোতল সরবরাহ করে থাকে। এসব নামহীন সিলিন্ডার গ্যাসের বোতল দামে একটু কম হওয়ায় বাসা বাড়িতে বেশি ব্যবহৃত হয়। একইভাবে অত্যাধিক মৃত্যুঝুঁকি থাকলেও বোতলপ্রতি একশত টাকা কম দামে বিক্রির কারণে শিপ ইয়ার্ড মালিকরাও এসব গ্যাস সিলিন্ডার বোতল ব্যবহার করে। প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের বিধিমালা অনুযায়ী যে কোন দোকানে ৮টি এলপি গ্যাস মজুদসহ বিক্রি করার বিধান রয়েছে। অথচ নিয়ম অমান্যকারী কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মূল্যে গ্যাস বিক্রিসহ বেশি মুনাফা লাভের আশায় নিজ আবাসস্থলকে গোডাউনে পরিণত করেছে। এদিকে সীতাকু-ে সাগর উপকূলে প্রায় ১৬০টি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড রয়েছে। এতে চলমান আছে প্রায় ১০০টি। প্রতিটি ইয়ার্ডে দৈনিক ৪০-৪৫টি সিলিন্ডার গ্যাসের বোতল ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু কিছু কিছু ইয়ার্ডে অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের বাসস্থানকেও গুদামে পরিণত করে সিলিন্ডার বোতল সরবরাহ করে যাচ্ছে। আর ইয়ার্ড মালিকরাও প্রতি বোতলে একশত টাকা কম পাওয়ায় এসব নিম্নমানের গ্যাস সিলিন্ডার বোতল ব্যবহার করছে। এসব নামহীন গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে প্রতিনিয়ত শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে ঘটছে দুর্ঘটনা। চট্টগ্রাম বিস্ফোরক অধিদফতরের সহকারী পরিদর্শক মোঃ তোফাজ্বল হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত লাভ করতে গিয়ে বিস্ফোরক অধিদফতরের সুনাম ক্ষুণ্ণ করছে। ইতোমধ্যে আমরা এসব অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও তাৎক্ষণিক জেল দিয়েছি।
×