ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সব্যসাচী দাশ

আনন্দ বিনোদনে জনকণ্ঠের পঁচিশ বছর

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আনন্দ বিনোদনে জনকণ্ঠের পঁচিশ বছর

সাল ১৯৯৩, যাদের বয়সের সূর্য এখন মধ্যগগনে তারা হয়ত উপলব্ধি করতে পারবেন! কী টালমাটাল সময়ের মধ্যে দিয়ে, সেই সময় দেশ এগিয়ে যাচ্ছিল নতুন শাতাব্দীর বাতায়নে। একাধিক তারিখ পরিবর্তন করে শেষে ভাষার মাস অমর একুশের ঠিক পরের দিন উৎসবমুখর পরিবেশে বেলুন উরিয়ে ‘স্বাতন্ত্র্য ও নিরপেক্ষতায় সচেষ্ট’ বাণী নিয়ে আত্মপ্রকাশ হয় ‘দৈনিক জনকণ্ঠে’র। এখন থেকে নব্বইয়ের দশক খুব একটা দূর সময়ের কথা নায়। কিন্তু অল্প সময়ে তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় উৎকর্ষের বিচারে পেছনে ফিরলে অনেক দিনের কথা মনে হয়। সেই দশকে আমাদের দেশের আর বয়স কত! বলতে গেলে মাত্র দুই দশক পেরিয়ে একটি নবীন দেশ। দেখা গেছে দেশের এই অল্প বয়েসে, দেশের ভেতরে ঘটে গেছে অনেক অস্থির করা ঘটনা। দেশের মানুষ ওইসব অস্তিরতা ভোগ করতে করতে এক রকম ক্লান্ত। মানুষের হৃদয়ের ভেতর এবং বাইরের বস্তুগত দুনিয়ায় কোথাও শান্তির পরশ ছিল না। আপামর জনতার কেবল খেয়ে বেঁচে থাকাই দায়। সে তুলনায় সিনেমা বা নাটক দেখা বিনোদিত হওয়া বাস্তবতার নিরিখে একটু বিলাসিতাই বলা চলে। কারণ, বাংলার ঘরে ঘরে টেলিভিশনের উপস্থিতি তখন ছিল ন্যূনতম। বিনোদনের জন্য শহর, উপশহরের সিনেমা হলো ছিল একমাত্র ভরসা। সকল কাজের শেষে মানুষ দল বেদে পরিবার নিয়ে মনভুলানো সেই সব সিনেমার বড়পর্দায়। ১৯৯৩ সাল। দেশব্যাপী মুক্তিপায় সোহানুর রহমান সোহানের কপি রাইট সিনেমা ‘কেয়াত থেকে কেয়ামত।’ দেশব্যাপী এই সিনেমা এক রকম তুলকালম কা- ঘটিয়ে বসল কোথাও কোথাও এক মাস ধরে এই সিনেমা প্রর্দশিত হয়ে। এই সিনেমা দেখে মানুষ এতবেশি বিনোদিত হয়েছে যে এর পেছনের খবর জানতে সকলের কৌতূহল ছিল একরকম আকাশছোঁয়া! কে এই সালমান শাহ্ কে এই মৌসুমি! দেশে তখন অস্বচ্ছ ছাপা, গ্যালামার হীন বিনোদন পেজে সিনেমার নায়ক নায়িকার ছবি দেখে খবর পরে এক রকম দুধের স্বাধ ঘোলে মেটায়। বিনোদনের খবরের সঙ্গে আর্টিসদের গ্যালার্মারাস ছবি, সত্যিকারের বিনোদন সংবাদ যাকে বলে তার পুরোটাই পথিকৃত বলা চলে জনকণ্ঠের বিনোদনের খবরগুলোকে। রাজধানী শহর থেকে শুরু করে উপজেলা শহর পর্যন্ত এমন কি কোথাও কোথাও প্রতান্ত অঞ্চলে সংখ্যায় বড় এক শ্রেণীর মানুষ ছিল যার বিনোদন দুনিয়ার খবর বলতে জনকণ্ঠের বিকল্প ভবতেই পারত না। সেই সময় খবরের কাগজের ভেতরে দুই পৃষ্ঠা আপকামিং সিনেমার পোস্টার ছোট ছোট ছাপা হতো। দেশের অসংখ্য চায়ের দোকন থেকে শুরু চুল দাড়ি কাটানোর সেলুনে। অগণিত সিনেমাপ্রেমী পত্রিকার পাতায় উন্মুখ হয়ে ডুবে যেত। গ্যালামার মৌসুমি, শাবনুর, পূর্ণিমা পপি মুনমুন ইলিয়াস কাঞ্চান, মান্নার মতো আরও অনেক হার্টথ্রবদের সবশেষ খবর দর্শক ভক্তদের মনের তৃষ্ণা বা বিনোদন যোগাতে জনকণ্ঠের বিনোদন বিভাগের ভূমিকা ছিল অসামান্য। বিনোদনের বিশেষ ফিচার, ঈদের বিশেষ সংখ্যা সবই ছিল পাঠকদের অধিক অপেক্ষর বিষয় এবং আকাশছোঁয়া ভালবাসার বিষয়। মূলত নতুন শতাব্দী শুরু পর থেকে দেশের ঘরে ঘরে টেলিভিশন পৌঁছাতে শুরু করে। এর আগে বিনোদন পেতে এবং এই দুনিয়ার যথাযথ খবর জানতে মানুষ খবরের পাতাতেই চোখ রাখত। এর পর খুব দ্রুত সবকিছু বদলাতে শুরু করল। সচরাচর ডিসএনটিনা, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, স্মার্ট ফোন, মানুষদের ভেতর বিনোদনের খোরক যোগাতে অকল্পনীয় হয়ে উঠল। তারপরও ছাপা হওয়া খবরের কাগজের গুরুত্ব কিছু মাত্র খাটো হলো না। সময়ে সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের হাতে এখন বহু সংবাদপত্র প্রতিযোগিতার অশুভ তাগিদে অনেক সংবাদপত্র এক রকম সত্যিকারের সংবাদপত্রের ইথিকসই ভুলে গেছে। পাঠকদের বিভ্রান্ত করতে মনগড়া অশ্রাব্য টগবগে বানোয়ান নিউজ প্রতি নিয়ত পরিবেশ করে যাচ্ছে। পাঠকও বিনোদন দুনিয়ার খবরের নামে ভুলে অসভ্য খবর পড়ে ফেলছে। এসব বিবেচনায় অতীতের মত আজও জনকণ্ঠ সত্যিকারের বিনোদনের বস্তুনিষ্ঠ তার পাঠকদের জন্য খুব সচেতন থেকে পরিবেশেন করে যাচ্ছে। সংবাদ উৎসের শতভাগ সত্য নিশ্চয়তা রেখেই এই কাজ করে দায়িত্বের সঙ্গে দৈনিক জনকণ্ঠ করে যাচ্ছে।
×