ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এএফসি কাপের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত মেয়েরা

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

এএফসি কাপের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত মেয়েরা

রুমেল খান ॥ বাংলাদেশ মহিলা ফুটবলের সূচনালগ্ন ২০০২ সালে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ মহিলা ফুটবল দল বাংলাদেশ সফরে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে আসে বিরাট বড় দল (৪০ ফুটবলার) নিয়ে, ২০০১-০২ সালে। বাংলাদেশ দলে খেলোয়াড় সঙ্কট ছিল। তাই অতিথি দলের তিন ফুটবলার স্বাগতিক দলের হয়ে খেলেছিল। সেই অবস্থা থেকে আজ দেশের নারী ফুটবল কতটা শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, ভাবলে আশ্চর্যই হতে হয়। অনেকদিন ধরেই পুরুষদের ফুটবল রসাতলে গেলেও নারীদের ফুটবলের সাফল্য এবং জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। আর এর জন্য যাকে সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব দিতে হবে তিনি হচ্ছেন দলটির কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। কি দেশে, কি বিদেশেÑ সব জায়গাতেই উড়ছে তাদের সাফল্যের ঝা-া। সফল ও আত্মবিশ্বাসী নারী ফুটবল দলের সামনে এ বছর অনেকগুলো টুর্নামেন্ট। যার মধ্যে মার্চের শেষে হংকংয়ে আছে আমন্ত্রণমূলক চার জাতীর টুর্নামেন্ট। যেখান থেকে আসন্ন এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইয়ের প্রস্তুতিটা সেরে নিতে চায় গোলাম রব্বানী ছোটনের সুযোগ্য শিষ্যারা। আগামী ৩০ মার্চে হংকংয়ে অনুষ্ঠিত হবে অ-১৫ চার জাতি আমন্ত্রণমূলক ফুটবল টুর্নামেন্ট। শেষ হবে ১ এপ্রিল। যেখানে অংশ নেবে বাংলাদেশ, চাইনিজ তাইপে, হংকং এবং ইরান। আপাতত প্রস্তুতিটা এই টুর্নামেন্টকে ঘিরেই মনে হলেও মূলত সামনের সব টুর্নামেন্টগুলোকে মাথায় রেখেই এগোচ্ছেন কোচ ছোটন। যেখানে শুধু অ-১৫ না, অ-১৬ দলের মেয়েরাও রয়েছে। গুরুত্বটা এতই বেশি যে ২১ ফেব্রুয়ারিতে যেখানে সবাই ছুটি কাটাতে ব্যস্ত ছিল, তখনও শিষ্যাদের দুই বেলা অনুশীলন করিয়েছেন তিনি। আসন্ন টুর্নামেন্টে শিরোপা জেতার লক্ষ্য এবং পূর্বের অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে বলে মন্তব্য মারিয়াদের। কোচ বলছেন ৯০ মিনিট সমানতালে খেলতে পারবে তার মেয়েরা। হংকংয়ে কি টার্ফে খেলা হবে নাকি ঘাসের মাঠে খেলা হবে? ‘এটা আমরা এখনও জানি না। তবে বাফুফে এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিচ্ছে। দুই-একদিনের মধ্যেই জানব। তবে ওখানে খেলা হবে সকাল ও দুপুরে, এটা জানি। দলকে সেভাবেই প্র্যাকটিস করাচ্ছি। তবে যদি খেলা ঘাসের মাঠে হয় তাহলে দ্রুতই আমরা ঘাসের মাঠেই প্র্যাকটিস শুরু করে দেব। আপাতত বাফুফের আর্টিফিসিয়াল টার্ফেই অনুশীলন করছে দল।’ ছোটনের জবাব। চার জাতির এ টুর্নামেন্টে আগামী ৩০ মার্চ চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। এরপর ৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল বাংলার কিশোরীদের প্রতিপক্ষ ইরান এবং স্বাগতিক হংকং। হংকংয়ের সঙ্গে আগে দেখা না হলেও চাইনিজ তাইপে আর ইরানের সঙ্গে গত এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। সেখানে তাদের বিপক্ষে জয়ের রেকর্ডটা লাল-সবুজদেরই পক্ষে। এ বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হবে এএফসি নারী চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্ব। তার আগে এই দলটি নামবে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে। হংকংয়ে আমন্ত্রণমূলক টুর্নামেন্টটি তাই খুবই গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন ছোটন। কারণ ঐ টুর্নামেন্ট দিয়েই আসন্ন দুই গুরুত্বপূর্ণ আসরের প্রস্তুতিটা সেরে নিতে চান তিনি। ছোটন জানান, ‘যাদের এসএসসি পরীক্ষা চলছে তারাও এই মাসের মধ্যেই দলের সঙ্গে যোগ দেবে। ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পরীক্ষা শেষ হলেও কয়েকজনের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা আছে। তবে যেহেতু হাতে প্রায় মাসখানেক সময় আছে তাই তেমন কোন সমস্যা হবে না।’ হংকংগামী দল হবে ২০ জনের। যদিও শুরুতে ২৩ জন ফুটবলার থাকবে বলে আয়োজকরা জানিয়েছিল। পরে সিদ্ধান্ত বদলে যায়। ছোটনের অধীনে বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক মহিলা দলগুলোর সাফল্য ঈর্ষণীয় : এএফসি অনুর্ধ-১৪ বালিকা চ্যাম্পিয়ন (আঞ্চলিক) আসরে দু’বার (২০১৫ ও ২০১৬), এএফসি অনুর্ধ-১৬ আসরের (২০১৬) আঞ্চলিক বাছাইপর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন একবার এবং সর্বশেষ সাফ অ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে (২০১৭) একবার শিরোপা জিতেছে। এছাড়া সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে একবার রৌপ্যপদক অর্জন (২০১৬), দু’বার সেমিফাইনালিস্ট (২০১০ ও ২০১৪); এসএ গেমস ফুটবলে দু’বার তাম্রপদক (২০১০ ও ২০১৬) অর্জন করেছে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল। তবে এখানেই থেমে যেতে চান না ছোটন। নতুন বছরে সাতটি শিরোপা হাতছানি দিচ্ছে তাকে। লেখার শুরুতেই একটির কথা বলা হয়েছে। বাকিগুলো হচ্ছে : মে’তে এএফসির ফুটবল টুর্নামেন্ট (থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য), আগস্টে সাফ অ-১৫ এবং অ-১৮ টুর্নামেন্ট, সেপ্টেম্বরে এএফসি অ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্ব, অক্টোবরে এএফসি অ-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্ব এবং ডিসেম্বরে সিনিয়র সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের আসর। মেয়েদের পরের লক্ষ্য আগামী চার বছরের মধ্যে ফিফা অ-২০ মহিলা বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলা। ইতোমধ্যেই তারা ফিফা অ-১৬ মহিলা বিশ^কাপের বাছাইপর্ব খেলেছে। অংশ নিয়েছে এশিয়ার সেরা আট দল নিয়ে এএফসি অ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের মূলপর্বে। প্রতি বছর তারা ১০-১৫টি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলবে। এই লক্ষ্যে ক্যাম্প চলছে জোরেশোরে।
×