ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ছেলে অন্ধ ও বৃদ্ধ মা ভিখারি ॥ তবু জোটেনি ভাতা

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ছেলে অন্ধ ও বৃদ্ধ মা ভিখারি ॥ তবু জোটেনি ভাতা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ হিমেলা খাতুন (৮০)। ভিক্ষা করে সংসার চালান ৪০ বছর। স্বামী মোলাম সরদার মারা গেছেন প্রায় ২০ বছর আগে। কৃষক স্বামীর আয়ে চার ছেলে ও এক মেয়ের সংসার ভালমতো চলত না বলে স্বামী জীবিত থাকতেই অন্যের কাছে হাত পাততেন হিমেলা। একে একে চার ছেলের বিয়ে হয়। বড় ছেলে নওশের আলী (৬০) বসুন্দিয়া এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। স্বামীর মৃত্যুর পরপরই মেজ ছেলে শহর আলী ও সেজ ছেলে মুক্তার আলী মারা গেছেন অসুস্থ হয়ে। মেয়ে রোকেয়াকে বিয়ে দিয়েছেন মণিরামপুরের খানপুর এলাকায়। কোলে ছিল ছোট ছেলে আব্দুল মান্নান।আব্দুল মান্নান অন্ধ হয়েছেন প্রায় ৮ বছর আগে। চোখে যখন দেখতেন, তখন ট্রাক চালিয়ে সংসার চলত তার। স্ত্রী, মা ও দুই ছেলেকে নিয়ে কেটে যাচ্ছিল তার। হঠাৎ একদিন ট্রাকের ব্যাটারির কাজ করতে গিয়ে ওপর থেকে ময়লা পড়ে তার চোখে। লক্ষাধিক টাকা খরচ করে ডাক্তার দেখিয়েছিলেন। চিকিৎসা নিতে গেছেন ভারতেও। কিন্তু দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাননি। মণিরামপুর শহরের বিজয়রামপুর এলাকার বাসিন্দা এই আব্দুল মান্নান। আব্দুল মান্নানের দুই ছেলে তুহিন ও সোহেল সংসার পেতেছেন। অন্যের আলমসাধু চালিয়ে দিন চলে তাদের। বাবা-মায়ের খোঁজ তেমন রাখেন না তারা। হিমেলা যখন পূর্ণ যুবতী তখন থেকেই সন্তানদের আহার যোগাতে অন্যের কাছে হাত পাততে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। সন্তানরা অসচ্ছল হওয়ায় স্বামীর মৃত্যুর পরও তিনি ভিক্ষা করে আসছেন। ভিক্ষা করে কোন রকম চলে যেত তার। এরপর অন্ধ ছেলের সংসারের বোঝা চাপে বৃদ্ধা হিমেলার ওপর। এখন ভিক্ষা করে নিজের ও ছেলের আহার যোগান তিনি। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জমশেদ আলী বলেন, মাঝে ভিক্ষুকের তালিকা হওয়ার সময় ওদের মা-ছেলের নাম দিয়েছিলাম। মনে করেছিলাম, যদি ২০-৩০ হাজার টাকা দেয়া যায়, তাহলে ওরা কিছু করে খেতে পারবে। সেটাতো আর হলো না। সামনে কার্ড আসলে ওদের দেয়ার চেষ্টা করব।
×