ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

৩৫০ কোটি টাকা ভর্তুকি চেয়েছে বিএসএফআইসি

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

৩৫০ কোটি টাকা ভর্তুকি চেয়েছে বিএসএফআইসি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন (বিএসএফআইসি) এখন লোকসানি প্রতিষ্ঠান। এ লোকসান মেটাতে সরকারী এ প্রতিষ্ঠানটি ৩৫০ কোটি টাকা ভর্তুকি চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত চাহিদা অনুযায়ী সাড়া না দিলেও আংশিক সাড়া দিয়েছেন এবং প্রতিষ্ঠানটিকে লোকসান কাটাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানটির লোকসান কাটাতে এর আগেও ভর্তুকি হিসেবে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বেশি দামে চিনি উৎপাদন করে তা কম দামে বিক্রি করার কারণে প্রতিষ্ঠানটি ক্রমাগত লোকসান দিচ্ছে। এই লোকসান মেটানোর জন্য গত পাঁচ অর্থবছরে বিএসএফআইসিকে ৪০৫ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটির লাভজনক হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তাই এ মুহূর্তে বিএসএফআইসিকে ৫০ কোটি টাকা দেয়া যেতে পারে। ৫০ কোটি টাকা দেয়ার জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে অনুমোদন চাওয়া হলে তিনি তাতে সম্মতি দিয়েছেন। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিএসএফআইসি ২০০৬-০৭ থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে চিনি বিক্রি করায় (উৎপাদন খরচের তুলনায় কম দরে) লোকসান দিতে হয়েছে ১ হাজার ৪০৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। উপরের সিদ্ধান্ত এবং সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনক্রমে ২০১০-১২ সালে বিদেশ থেকে চিনি আমদানি করে তা কম মূল্যে বাজারে বিক্রি করায় বিএসএফআইসির ট্রেড গ্যাপ হয়েছে ৪৮৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। সূত্র জানায়, লোকসান ও বাণিজ্যিক ঘাটতির কারণে আর্থিক সঙ্কট দেখা দেয়ায় এ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আখ মাড়াই মৌসুমে শ্রমিক/কর্মচারীদের বকেয়া মজুরি ও বেতন-ভাতাসহ চিনি উৎপাদন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে চিনিকলগুলো সচল রাখতে ভর্তুকি ও বাণিজ্যিক ঘাটতি সমন্বয় শর্তে ৩৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার আশু প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সংস্থাটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। জানা গেছে, দেশে চিনির বার্ষিক চাহিদা ১৫ লাখ মেট্রিক টন। এই চাহিদার বিপরীতে বিএসএফআইসির উৎপাদন ক্ষমতা বার্ষিক আনুমানিক ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। চাহিদার মাত্র ১১ দশমিক ৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানটি যোগান দিয়ে থাকে। বাজারে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরবরাহকৃত চিনির দামের চেয়ে বিএসএফআইসির চিনির দাম বেশি হওয়ার কারণে গুদামে এ বছর ৬০ হাজার মেট্রিক টন চিনি অবিক্রীত অবস্থায় মজুদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণও ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানায়, বিগত চার অর্থবছরের ভর্তুকি ও ট্রেড গ্যাপ সমন্বয়ের জন্য বিএসএফআইসিকে বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে ৪০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৭৫ কোটি টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৩৫ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫০ কোটি টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৫ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি নতুন করে ৩৫০ কোটি টাকা চাওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি সারসংক্ষেপ অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। গত সপ্তাহে পাঠানো সেই সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প উৎপাদন কর্পোরেশন বর্তমান ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে বিদ্যমান বাজার দরে চিনি উৎপাদন করতে সক্ষম নয়। ফলে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ লোকসান হচ্ছে। এছাড়া চিনি আমদানি করা বিএসএফআইসির মূল কাজ (কর বিজনেস) না হওয়া সত্ত্বেও চিনি আমদানি করে তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেও প্রচুর অর্থ লোকসান দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানটি নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হবে বলে প্রতীয়মান হয় না। সূত্র জানায়, এ পরিস্থিতিতে চিনির বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিএসএফআইসিকে সচল রাখার স্বার্থে চিনিকলগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া মজুরি ও বেতন-ভাতাসহ চিনি উৎপাদন সংশ্লিষ্ট ব্যয় নির্বাহের জন্য পুনরায় ৫০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেয়া যেতে পারে। উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে এর আগে প্রতিষ্ঠানটিকে ২০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।
×