ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এক বছরেই গ্রাহক বেড়েছে ১২৩ শতাংশ

জনপ্রিয় হচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

জনপ্রিয় হচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ এই মুহূর্তে দেশে দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা। ফলে হিসাব সংখ্যা ও জমা অর্থের পরিমাণ উভয়ই বাড়ছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাবের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২ লাখ ১৪ হাজার। আর এসব হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় এক হাজার ৪শ’ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং বিষয়ে হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নানান ঝামেলা এড়াতেই গ্রাহকরা ঝুঁকছেন এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের দিকে। এর ফলে একদিকে যেমন নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা কাটছে, সেই সাথে বাড়ছে ব্যাংকিং সেবার পরিধিও। নিরাপত্তাজনিত কারণে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লাগাম টেনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বলা চলে, রেমিট্যান্স আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ার জন্য মোবাইল ব্যাংকিং যখন অনেকাংশে দায়ী, তখন এর বিকল্পও ছিল না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে। সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অনেকটা বিকল্প হয়ে উঠছে এজেন্ট ব্যাংকিং। ব্যাংকের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় এই মাধ্যমে অবৈধ লেনদেন যেমন সম্ভব নয়, তেমনি সম্ভব নয় হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্সের টাকা পৌঁছানোও। এসব দিক বিবেচনায় এখন অনেকেই বেছে নিচ্ছেন এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক বেড়েছে ১২৩ শতাংশ। আর এই মাধ্যমের আমানত বেড়েছে ২৬৭ শতাংশ। আর রেমিট্যান্স বেড়েছে ৫৪০ শতাংশেরও বেশি। দেশের আরও ১৩টি বেসরকারী ব্যাংকের পাশাপাশি সরকারী মালিকানাধীন একমাত্র ব্যাংক হিসেবে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করেছে অগ্রণী ব্যাংকও। তবে রেমিট্যান্স ও আমানত চালু থাকলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী এখনো অনেক ব্যাংকই এজেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করছে না। ফলে গ্রাহকরা এই সেবার পুরোপুরি সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন। মোবাইল ব্যাংকিয়ের নেতিবাচক দিক বিবেচনায় এজেন্ট ব্যাংকিং অনেক বেশি নিরাপদ বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক। এই সেবার পরিধি আরও বাড়লে প্রান্তিক মানুষের পাশাপাশি ব্যাংক ব্যবস্থার প্রসার আরও বাড়বে বলেও তিনি মনে করেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংকের ১২ লাখ ১৪ হাজার ৩৬৭ জন গ্রাহক হিসাব খুলেছেন। এসব হিসেবে জমাকৃত অর্থের স্থিতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৯৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। গত সেপ্টেম্বরে গ্রাহক ছিল ১০ লাখ ৩৮ হাজার ২৪২ জন এবং জমাকৃত অর্থের স্থিতি ছিল ৯২২ কোটি আট লাখ টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে হিসাব বেড়েছে এক লাখ ৭৬ হাজার এবং স্থিতি বেড়েছে ৪৭৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। চলতি বছরের ডিসেম্বর শেষে এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়ায় দুই হাজার ৫৭৭টি এবং আউটলেট সংখ্যা চার হাজার ১৫৭টি দাঁড়ায়। ডিসেম্বর পর্যন্ত চারটি ব্যাংক ঋণ বিতরণ শুরু করেছে। এ সময়ে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ হয়েছে ১০৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আলোচিত সময়ে রেমিট্যান্স বিতরণ হয় এক হাজার ৯৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলে এক হাজার ৭৮২ কোটি ৬৪ লাখ রেমিট্যান্স বিতরণ হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সুবিধার আওতায় আনতে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ পদ্ধতিতে বাড়তি চার্জ গুনতে হয় না গ্রাহককে। ফলে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় ব্যাংকগুলো এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মনোযোগ দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক মোঃ আবুল বশর বলেন, গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতে এজেন্ট ব্যাংকিং চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। সঠিকভাবে পরিচালনা করলে দেশের প্রত্যেক ঘরে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহক চলতি হিসাবে সর্বোচ্চ চার বারে ২৪ লাখ টাকা নগদ জমা এবং সর্বোচ্চ ২টি লেনদেনে ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। সঞ্চয়ী হিসাবে সর্বোচ্চ দুই বার আট লাখ টাকা নগদ জমা এবং সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা করে দুটি লেনদেনে ছয় লাখ টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। তবে রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে উত্তোলন সীমা প্রযোজ্য হয় না। দিনে দুই বার জমা ও উত্তোলন করা যায়। প্রতি এজেন্টকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে চলতি হিসাব থাকতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে ১৮টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স নিয়েছে। এর মধ্যে কার্যক্রম চালাচ্ছে ১৪টি ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো- ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংক। এছাড়া এবি ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এ্যান্ড কমার্স ব্যাংক শীঘ্রই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কাজ শুরু করবে বলে জানা গেছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হিসাব খোলা, টাকা জমা ও উত্তোলন, টাকা স্থানান্তর (দেশের ভেতর), রেমিট্যান্স উত্তোলন, বিভিন্ন মেয়াদি আমানত প্রকল্প চালু, ইউটিলিটি সার্ভিসের বিল পরিশোধ, বিভিন্ন প্রকার ঋণ উত্তোলন ও পরিশোধ এবং সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সরকারী সকল প্রকার ভর্তুকি গ্রহণ করা যায়। এজেন্টরা কোন চেক বই বা ব্যাংক কার্ড ইস্যু করতে পারে না। এজেন্টরা বৈদেশিক বাণিজ্য সংক্রান্ত কোনো লেনদেনও করতে পারেন না। এছাড়া এজেন্টদের কাছ থেকে কোন চেকও ভাঙানো যায় না। মোট লেনদেনের ওপর পাওয়া কমিশন থেকেই এজেন্টরা আয় করেন।
×