ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফিরে দেখা

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ফিরে দেখা

সংখ্যালঘু তকমা শাহীন রহমান ॥ আমাদের সমাজে পরিবার থেকে সমাজ, রাষ্ট্র সব ক্ষেত্রে পুরুষের আধিক্য। কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ বাড়লেও এখনও তা পুরুষের সমতুল্য নয়। সব পেশার মতো সাংবাদিকতার এই ঝুঁকিপূর্ণ পেশাতেও নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। তবে তা সংখ্যাগুরুর পর্যায়ে এখনও উন্নীত হয়নি। তাই নারীদের সবসময় সংখ্যালঘুর অপবাদ সইতে হয়। কিন্তু সম্প্রতি এর বিপরীত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে একটি কর্মশালায় অংশ নিয়ে। নারী প্রগতি সংঘের আমন্ত্রণে ওই কর্মশালায় প্রায় ২০ জনের অংশগ্রহণ ছিল। যেখানে প্রায় সবাই ছিল নারী। অনুষ্ঠানে আমিসহ মাত্র তিনজন পুরুষ। নারীদের সংখ্যা ভারি হওয়ায় বার বার সংখ্যালঘুর অপবাদ শুনতে হচ্ছিল। কর্মশালায় আলোচক হিসেবে ছিলেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সোহরাব হাসান। তিনি রসিকতা করে বলছিলেন, এ ধরনের অনুষ্ঠানে নারীদের উপস্থিতি সব সময় কম থাকে। কিন্তু এখানে এসে দেখি পুরুষরাই সংখ্যালঘু। ভাবতে ভালই লাগছে নারীদের অগ্রগতি দেখে। তবে অনুষ্ঠানে পুরুষ হিসেবে সংখ্যালঘু হলেও সবাই ছিল গণমাধ্যম কর্মী। আগেই কাজ এগিয়ে রাখা! রুমেল খান ॥ ২০১৫ সালের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ। দৈনিক জনকণ্ঠের ক্রীড়া সম্পাদক মজিবর রহমান রুবেল ভাই অফিসে কাজ করছেন। হঠাৎ মাথা ঘুরে মেঝেতে পড়ে গেলেন। ঘেমে এবং বমি করে একাকার। হাই ব্লাডপ্রেসার। অবস্থা গুরুতর। তাড়াতাড়ি তাকে কাছের হাসপাতাল হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে নিয়ে ভর্তি করানো হলো। স্পোর্টস বিভাগের সবাই পরদিন তাকে দেখতে গেলাম। দ্রুত এবং সুচিকিৎসার ফলে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে তার। এদিকে ক্রীড়াঙ্গনে তার অসুস্থতার খবরটা ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক ক্রীড়া সংগঠন, সাংবাদিক, খেলোয়াড়, কোচরা তার খবর জানতে চেয়ে এবং তার সুস্থতা কামনা করে বিবৃতি দিচ্ছে। আমরা ঠিক করলাম এটা নিয়ে জনকণ্ঠের খেলার পাতায় একটা নিউজ করতে হবে। নিউজটা আমিই করলাম, প্রকাশিত হলো ১ মার্চ। ওইদিন কাজ শেষে জনকণ্ঠ পত্রিকাটি নিয়ে হাসপাতালে গেলাম মজিবর ভাইকে দেখতে। সঙ্গে অন্য সহকর্মীরাও আছেন। যাহোক, বসকে পেপারটা দিতে তিনি নিউজটা একমনে পড়লেন। তার পরই চোখ কপালে তুলে বললেন, ‘আমি কবে, কি করেছি... এসব এভাবে লিখেছ কেন? সাধারণত কেউ মারা গেলেই এগুলো লেখা হয়। তুমি এমনভাবে নিউজটা করেছ যে, পাঠকরা ধরে নেবে আমি মনে হয় মারা গেছি!’ আমি নিউজটার শেষ প্যারায় লিখেছিলাম, ‘উল্লেখ্য, মজিবর রহমান দৈনিক জনকণ্ঠের সূচনালগ্ন থেকেই কর্মরত আছেন। দেশের ফুটবলে সুপরিচিত ক্লাব ইয়াংমেন্স ফকিরেরপুলের হয়ে ১০ বছর খেলেছেন তিনি। ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে ২০০৬ জার্মানি, ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা ও ২০১৪ ব্রাজিল ফুটবল বিশ্বকাপ এবং অলিম্পিক গেমসসহ বিশ্বের অসংখ্য বৃহৎ ক্রীড়া ইভেন্ট কভার করেছেন।’ যাহোক, বসের এমন কথায় মোটেই ঘাবড়ালাম না। বরং বললাম, ‘আপনি মারা গেলেও তো একদিন এই কথাগুলো ঠিকই লেখা হবে। আমি বরং আগেভাগেই লিখে রেখে কাজটা এগিয়ে রাখলাম!’ শুনে আমাদের সবাইকে পিলে চমকে দিয়ে বস ফেটে পড়লেন অট্টহাসিতে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম আমিও!
×