ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে-

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে-

ধারাবাহিকভাবেই ঘটছে প্রশ্নফাঁস। কর্তৃপক্ষ যেন অসহায়, নির্বিকার। ঠেকানো যাচ্ছে না প্রশ্নফাঁস। জেএসসি এমনকি প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রী হোতাদের কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। কিন্তু কার্যত কোন ফল আসেনি। বরং মনে হচ্ছে সরকারকে চ্যালেঞ্জ করেই যেন প্রশ্নফাঁস করা হচ্ছে। দুষ্কৃতকারীদের তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার ও শাস্তির আওতায় আনতে না পারায়- প্রশ্নফাঁস রোধ করা যাচ্ছে না। আগামীকাল শেষ হবে চলমান এসএসসি পরীক্ষা। ২ এপ্রিল শুরু হবে এইচএসসি পরীক্ষা। এটা উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বড় পরীক্ষা। সামনের পরিস্থিতি কি হবে তা নিয়ে চিন্তিত শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। চলতি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর প্রথম দিন থেকেই ফেসবুক আইডির মাধ্যমে বাংলা প্রথমপত্রের ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র পাওয়া যায়। মুহূর্তেই এটি বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে ছড়াতে থাকে। অনুষ্ঠিত হওয়া পরীক্ষার প্রশ্নের সঙ্গে হুবহু মিল পাওয়া যায়। একই আইডি থেকে পরবর্তী প্রশ্নফাঁসের কথা জানিয়ে বিজ্ঞাপনও দেয়া হয়। প্রতি প্রশ্নপত্রের দাম ধরা হয় ৩০০ টাকা। এত আলোচনা-সমালোচনা, এত হুমকি-ধমকি-হুঁশিয়ারি, নানা রকম উদ্যোগ সত্ত্বেও প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা নিঃসন্দেহে দুর্ভাগ্যজনক। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ সরকারি প্রেস (বিজিপ্রেস), ট্রেজারি ও পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো প্রশ্নফাঁসের উৎস। এসব প্রতিষ্ঠানের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এ অপকর্মটি করে থাকেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে কোচিং সেন্টার, প্রতারক শিক্ষক ও বিভিন্ন অপরাধী চক্র। রীতিমতো সিন্ডিকেট গঠন করে দুষ্কৃতকারীরা একের পর ঘটনা ঘটাচ্ছে। তারপরও মন্ত্রণালয় তেমন তৎপরতা দেখাতে পারেনি। ইদানীং অবশ্য বিজি প্রেস থেকে প্রশ্ন ফাঁস রোধে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিছু কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও প্রশ্নফাঁস ঠেকানো যাচ্ছে না। তবে আশার কথা, আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে করণীয় নির্ধারণে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের (আইটি) নিয়ে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ওই বৈঠকে থাকবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড, বিটিআরসির আইটি (তথ্য প্রযুক্তি) বিশেষজ্ঞ এবং দেশের খ্যাতনামা তথ্য প্রযুক্তিবিদরা নিয়ে খুব শিগগিরই এই সভা আহ্বান করা হবে। মঙ্গলবার আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষা ও চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস রোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এসব সিন্ধান্ত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় আগামী পরীক্ষায় যাতে কোন প্রশ্নপত্র ফাঁস না হয় সে ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। যে ব্যবস্থাই নেয়া হোক দেশের মানুষ চায় প্রশ্নফাঁস রোধ। কারণ এই অবস্থা চলতে থাকলে দেশটির ভাগ্যে একটি মেধাহীন জাতি ভর করতে বাধ্য। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রশ্ন প্রণয়ন, মুদ্রণ, বিতরণে কোথায় প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে তথ্য প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করতে হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে ট্রেজারি বা নিরাপত্তা হেফাজত থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানোর নির্দেশ রয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে অনেক কেন্দ্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। পরীক্ষার্থী বা পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তদের স্মার্টফোন নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছেÑ যে কারণে গুটিকয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে মূল প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। বিগত দিনের অভিজ্ঞতা বলছে, প্রশ্নফাঁসের সিন্ডিকেটগুলো অনেক শক্তিশালী। প্রেস থেকে পরীক্ষা কেন্দ্র পর্যন্ত তাদের হাত বিস্তৃত। তার মানে এই বিষবৃক্ষের শিকড় অনেক গভীরে। কিন্তু তারা যত শক্তিশালীই হোক, সরকারের চেয়ে নিশ্চয়ই নয়। ইতোমধ্যে প্রশ্নফাঁসের বহু কৌশল জানাজানি হয়ে গেছে। নানা উৎস থেকে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। একটি দুটি উৎস বন্ধ করাই যথেষ্ট নয়, সব উৎস বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকার এবং পরীক্ষা সংশ্লিষ্টরা আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হলেই প্রশ্নফাঁস ঠেকানো সম্ভব।
×