ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তুমব্রুর জিরো লাইন থেকে আরও তিন শতাধিক রোহিঙ্গা এসেছে

তালিকা যাচাই চলছে, ডকুমেন্ট ছাড়া কাউকে নেবে না মিয়ানমার

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

তালিকা যাচাই চলছে, ডকুমেন্ট ছাড়া কাউকে নেবে না মিয়ানমার

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ তুমব্রু সীমান্তের ওপারে জিরো লাইনে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গারা কেবলই বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। বৃহস্পতিবার ভোরে আরও তিন শতাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে উখিয়ার বালুখালি ও কুতুপালং ক্যাম্পে ভিড় জমিয়েছে। সেখানে যে সাড়ে ৬ সহস্রাধিক রোহিঙ্গা অবস্থান নিয়েছিল তাদের সরিয়ে নিতে দুদেশের যৌথ সিদ্ধান্তের পর এখন ৫ হাজারের মতো অবস্থান করছে। এ ঘটনায় মংডু এলাকার জেনারেল এ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্ট বিভাগের কর্মকর্তা ইউ কাইয়া কাইয়ার পক্ষে সেখানকার গণমাধ্যমে খবর এসেছে তমব্রুর জিরো লাইনে অবস্থান নেয়া উদ্বাস্তুরা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায় না। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার পক্ষ জাতীয়তা শনাক্তকারী যে কার্ড প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করছে তারা এর আওতায়ও আসতে অনিচ্ছুক। অপরদিকে, বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম দফায় যে ৮ হাজার ৩২ রোহিঙ্গার একটি তালিকা প্রদান করা হয়েছে সে বিষয়ে মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক মন্ত্রী ইউ উইন মিয়াত সে দেশের অনলাইন মিয়ানমার টাইমসকে বলেছেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে তালিকা দেয়া হয়েছে তা যাচাই বাছাই শেষে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ কাজে আরও দু’সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। এছাড়া সে দেশের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ বলেছে, বাংলাদেশের দেয়া তালিকা রেজিস্ট্রার ধরে যাচাই করবে স্বরাষ্ট্র বিষয়ক কর্তৃপক্ষ। এরপর অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তারা তালিকার সঙ্গে দেয়া ডকুমেন্ট যাচাই করে দেখবেন। এরপর তাদের পক্ষ থেকে একটি তালিকা বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ সবুজ সঙ্কেত দিলেই প্রত্যাবাসন শুরু হবে। মিয়ানমার প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের মুখপাত্র ইউ জাওয়া হতাইও বলেছেন, অভিবাসন দফতর বাংলাদেশের প্রদত্ত তালিকা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে যাচাই বাছাই করছে। এক্ষেত্রে যাদের ডকুমেন্ট আছে তাদেরকে গ্রহণ করবে মিয়ানমার সরকার। তিনি আরও জানিয়েছেন, যাচাই বাছাই শেষ হওয়ার পর প্রতিদিন নৌরুটে ৩ শ উদ্বাস্তুকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত মিয়ানমার। বুধবার মন্ত্রী এ সংক্রান্তে প্রদত্ত বক্তব্যে রোহিঙ্গা শব্দটি উল্লেখ না করে তাদেরকে উদ্বাস্তু বলেছে। তুমব্রু জিরো লাইনে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গারা যেভাবে প্রতিদিন বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে এসব রোহিঙ্গারা কেউ মিয়ানমার অভ্যন্তরে যাবে না, উল্টো তারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে থাকবে। সাড়ে ৬ হাজার অবস্থানকারীর মধ্যে এখন রয়েছে ৫ সহস্রাধিক। অপরদিকে, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাবিরোধী ঘটে যাওয়া সেনা অভিযানের বিষয়টিকে ২০১৭ সালে বিশ্বজুড়ে সংঘটিত ঘটনাবলীর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যশনাল। এছাড়া যুক্তরাজ্যের শতাধিক এমপি মিয়ানমারের এ ঘটনার বিষয়ে বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য যুক্ত স্বাক্ষরের একটি পত্র হস্তান্তর করেছেন সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের কাছে। পাশাপাশি এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মিয়ানমারের বর্তমান সেনা প্রধান মিং অং লাইকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের আওতায় আনা উচিত। এ্যামনেস্টির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সামরিক অভিযান ও প্রচার সেখানকার সমাজকে বিদ্বেষী করে তুলেছে। সমাজের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে পড়া সে বিদ্বেষটিই রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের অন্যতম কারণ বলে মনে করছে ওই সংস্থাটি। যুক্তরাজ্যভিত্তিক এ মানবাধিকার সংস্থা তাদের অনুসন্ধানের বরাত দিয়ে বলেছে, বিশ্ব নেতাদের ঘৃণাপ্রসূত রাজনৈতিক ধ্যানধারণা সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য উস্কে দিচ্ছে। এদিকে, উখিয়া টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্রত্যাবাসনবিরোধী তৎপরতা দিন দিন বাড়ছে। ইতোপূর্বে প্রত্যাবাসনের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় বালুখালি ক্যাম্পে ২ জনকে হত্যাও করা হয়েছে। প্রত্যাবাসনবিরোধীরা এখনও রোহিঙ্গাদের প্রতিনিয়ত ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চলেছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা বখতিয়ার আহমেদ জানিয়েছেন, উখিয়ার বালুখালি ও কুতুপালং ক্যাম্পে অস্ত্রধারী বহু রোহিঙ্গা রয়েছে বলে জানতে পেরেছেন। এরা মূলত সীমান্তের জিরো লাইন থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে চলে আসতে এবং এদেশের আশ্রয় ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পক্ষে রাজি না হওয়ার জন্য একদিকে যেমন উস্কে দিচ্ছে, তেমনি ভয়ভীতিও প্রদর্শন করছে। তুমব্রু সীমান্তের ওপারে জিরো লাইনে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য দুদেশের বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হয় এরপর থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশমুখী হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেড় সহস্রাধিক চলেও এসেছে। এদের কোন নিবন্ধনও হয়নি। মিয়ানমার অভ্যন্তরে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি না করে মংডু প্রশাসনের পক্ষে বলা হচ্ছে, ওরা রাখাইন রাজ্যে ফিরে আসতে ইচ্ছুক নয়। তারাও স্বীকার করেছে, জিরো লাইনে অবস্থানকারীরা বিভিন্নভাবে সটকে পড়ছে।
×