ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কুমিল্লায় গার্মেন্টস কর্মীকে হত্যার পর ঘাতক ওমানে

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

কুমিল্লায় গার্মেন্টস কর্মীকে হত্যার পর ঘাতক ওমানে

মীর শাহ আলম, কুমিল্লা, ২১ ফেব্রুয়ারি ॥ কুমিল্লায় মোবাইল ফোনে পরিচয়ের সূত্র ধরে সাদ্দাম হোসেন ও হালিমা আক্তারের মধ্যে প্রেম, এরপর স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে দুই মাস এক সঙ্গে বসবাসের পর প্রেমিক সাদ্দামের হাতেই হালিমা খুন হওয়ার চাঞ্চল্যকর রহস্য উদ্ঘাটন হয়েছে। শুধু তাই নয়, হালিমাকে খুন করার পর প্রেমিক সাদ্দাম ওমানে পালিয়ে গিয়ে হালিমার লাশের ছবি ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। হত্যাকাণ্ডের শিকার হালিমা গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কুন্দপাড়া গ্রামের হারুনুর রশীদের মেয়ে এবং গাজীপুরের একটি গার্মেন্টসের কর্মী ছিল। কুমিল্লায় অজ্ঞাত পরিচয়ে লাশ উদ্ধারের ২০ দিন পর সদর দক্ষিণ থানা পুলিশ ঘাতকের এক সহযোগী সোহেল রানাকে গ্রেফতার করলে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন হয়। পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে আদালতের মাধ্যমে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। জানা গেছে, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানা পুলিশ গত ১ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা-নোয়াখালী সড়কের দত্তপুর এলাকার একটি ব্রিজের পার্শ্ব থেকে গলায় ওড়না পেঁচানো অজ্ঞাত পরিচয়ের এক নারীর লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই খাদেমুল বাহার বিন আবেদ জানান, মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘাতক প্রেমিক জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার হিয়াজোড়া গ্রামের মীর হোসেনের ছেলে সাদ্দাম হোসেনের পার্শ্ববর্তী বাড়ির হারুনুর রশীদের ছেলে সিএনজি চালক সোহেল রানাকে (২৫) গত সোমবার নাঙ্গলকোট থেকে আটক করে থানায় এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল রানা হত্যার দায় স্বীকার করে এবং মঙ্গলবার বিকেলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। গ্রেফতারকৃত সোহেল রানা পুলিশ ও আদালতকে জানায়, প্রায় ৩ বছর পূর্বে তার বন্ধু সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে গাইবান্ধার হালিমার পরিচয় হয় এবং একপর্যায়ে তারা গভীর প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি টের পেয়ে হালিমার পরিবার গাইবান্ধার মাসুদ নামের এক ছেলের সঙ্গে তড়িঘড়ি করে হালিমাকে বিয়ে দেয়। এ বিয়ের কিছুদিন পর হালিমা তার বাবার বাড়ি বেড়াতে গেলে সাদ্দাম সেখানে যায় এবং তাকে তার বাবার বাড়ি থেকে কৌশলে চট্টগ্রামের সিটি গেইট এলাকায় নিয়ে যায় এবং সেখানে বাসা ভাড়া করে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস শুরু করে। এর ২ মাস পর হালিমাকে ওই বাসায় রেখে সাদ্দাম ওমান চলে যায়। একপর্যায়ে হালিমার সঙ্গে সাদ্দামের যোগাযোগ কমে যায় ও টাকা না দেয়ায় হালিমা চট্টগ্রামের বাসা ছেড়ে গাজীপুরে একটি মেসে থেকে গার্মেন্টসে কাজ নেয় এবং অপর এক ছেলের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। বন্ধু সোহেল রানার মাধ্যমে এমন খবর জেনে গত ২৬ জানুয়ারি সাদ্দাম ক্ষিপ্ত হয়ে ওমান থেকে দেশে ফিরে আসে। ৩১ জানুয়ারি সে গাজীপুরে হালিমার মেসে যায় এবং ওইদিন রাতে হালিমাকে নিয়ে কুমিল্লার উদ্দেশে রওয়ানা করে। ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে তারা কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে বাস থেকে নেমে সেখানে অপেক্ষমাণ সোহেল রানার সিএনজিতে ওঠে। সোহেল রানা পুলিশ ও আদালতকে আরও জানায়, পদুয়ার বাজার থেকে নাঙ্গলকোট যাওয়ার পথে সাদ্দাম চলন্ত সিএনজিতে হালিমাকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে কুমিল্লা-নোয়াখালী সড়কের দত্তপুর ব্রিজের পাশে হালিমার লাশ ফেলে দেয়। সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি মোঃ নজরুল ইসলাম বুধবার দুপুরে জানান, অজ্ঞাতনামা মহিলার লাশ উদ্ধারের পর পরিচয় শনাক্তের জন্য ছবি তোলে ফেসবুকে দেয়া হয় এবং বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে কুমিল্লায় দাফন করা হয়। ৬ ফেব্রুয়ারি হালিমার বাবা লাশটি তার মেয়ের বলে শনাক্ত করেন। তিনি আরও জানান, সোহেল রানাকে গ্রেফতারের পর হালিমা হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন হয়েছে এবং বিদেশে পালিয়ে যাওয়া মূল ঘাতক প্রেমিক সাদ্দাম হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
×