ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কনস্টেবল নিয়োগে দুর্নীতি ঠেকাতে সার্ভিলেন্স টিম

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

কনস্টেবল নিয়োগে দুর্নীতি ঠেকাতে সার্ভিলেন্স টিম

শংকর কুমার দে ॥ সারাদেশের ৬৪ জেলায় ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত ১০ হাজার পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ শুরু হচ্ছে। পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, তদবির, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মোকাবেলায় সার্ভিলেন্স টিম (তদারক দল) পাঠাচ্ছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের দিন পুলিশ সদর দফতর থেকে প্রত্যেক জেলায় পুলিশের একজন এসপি ও একজন এডিশনাল এসপির নেতৃত্বে দুই সদস্যের সার্ভিলেন্স টিম পাঠানো হচ্ছে। নতুন আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারীর জন্য দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ জানুয়ারি থেকে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের এই প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে তা হঠাৎ করেই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর ১০ হাজার ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পুলিশ সদর দফতর। এর মধ্যে সাড়ে ৮ হাজার পুরুষ ও দেড় হাজার নারী সদস্যকে নিয়োগ দেয়ার কথা ছিল। এরপর জরুরী ভিত্তিতে ৬৪ জেলার এসপিকে নিয়োগপ্রক্রিয়া স্থগিত রাখার কথা জানিয়ে বার্তা পাঠানো হয়। পুলিশ নিয়োগ বন্ধের নেপথ্যে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রতিবছর ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়। বিভিন্ন জেলায় রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে এমপি-মন্ত্রিরা পুলিশ সুপারদের কাছে তালিকা ধরিয়ে দেন। এ ছাড়া পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারাও দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ দেন। তবে নির্বাচনের বছর হিসেবে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পরপরই এবার মন্ত্রী-এমপি এবং রাজনৈতিক নেতাদের সুপারিশ ছিল অন্যান্য বারের তুলনায় অনেক বেশি বলে আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রতিযোগিতাও শুরু হয়ে গিয়েছিল। অর্ভিযোগ রয়েছে, একজন কনস্টেবল নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলা ভেদে ৭ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়ে থাকে। এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বাণিজ্য হয়ে থাকে। রাজনৈতিক নেতা ও মন্ত্রী-এমপিরা ডিমান্ড অর্ডার বা ডিও লেটার দিয়ে তদবির করে থাকেন। তারা প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকেই ৭ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করেন। অনেক সময় পুলিশ সদর দফতর বা পুলিশ সুপারদের কেউ কেউ নিজেরাও নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। গত রবিবার অপরাধ বিষয়ক সভায় কনস্টেবল নিয়োগপ্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত করার নির্দেশ দেন পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী। দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রদানের নির্দেশের পর পুলিশ সদর দফতরে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ নিয়ে সার্ভিলেন্স টিম পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। পুলিশ বাহিনীতে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদের নিয়োগে ঘুষ ঠেকাতে জেলায় জেলায় তদারক দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টি পুলিশ সদর দফতর থেকে সারাদেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারদেরকে অবহিত করা হয়েছে। কোন জেলায় কোন পুলিশের এসপি ও এডিশনাল এসপির নেতৃত্বে দুই সদস্যের সার্ভিলেন্স টিম পাঠানো হচ্ছে তা আগে জানানো হয়নি। দুই সদস্যের সার্ভিলেন্স টিমের উপস্থিতিতে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হবে। পুলিশ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ঠেকানোর কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মাঈনুল হক দৈনিক জনকণ্ঠকে জানান, পুলিশ সদর দফতরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২২ ফেব্রুয়ারি হবে কনস্টেবল প্রার্থীর শরীরের মাপ। ২৪ ফেব্রুয়ারি হবে প্রার্থীর লিখিত পরীক্ষা। ২৬ ফেব্রুয়ারি হবে ভাইভা পরীক্ষা। এই ৩ দিনে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা দুর্নীতিমুক্ত করার লক্ষ্যে পুলিশ সদর দফতর থেকে পাঠানো হচ্ছে পুলিশের একজন এসপি ও একজন এডিশনাল এসপির নেতৃত্বে তদারক দল। তাদের উপস্থিতিতেই পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগপ্রক্রিয়া ও পরীক্ষা সম্পন্ন হবে। পুলিশ সদর দফতর থেকে ইতোমধ্যেই এই বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের একজন পদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পুলিশ বাহিনীতে কনস্টেবল পদে নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে গত রবিবার পুলিশের অপরাধবিষয়ক সভায় আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, জেলায় জেলায় কনস্টেবল নিয়োগে লাখ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেন হচ্ছে। এই দুর্নীতিতে পুলিশের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতারাও জড়িত। পুলিশ বাহিনীর কনস্টেবল নিয়োগ নিয়ে সব সময়ই অবৈধ আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকেই রাজনৈতিক দলের স্থানীয় কিছু নেতার কাছে চাকরি প্রার্থীরা ধরনা দিতে শুরু করেন। এর আগে এ বছরের ১৬ জানুয়ারি থেকে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে তা স্থগিত করা হয়। এরপর গত রবিবারের অপরাধবিষয়ক সভায় কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত করার নির্দেশ দেন পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। পুলিশ সদর দফতরের সংস্থাপন বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, এ বছর সাড়ে ৮ হাজার পুরুষ, ১ হাজার ৫শ’ নারীসহ মোট ১০ হাজার ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ করা হবে। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর এই নিয়োগপ্রক্রিয়ার বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। গত ৮ ফেব্রুয়ারি সংবাদ মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ কোন জেলায় কবে হবে তা প্রকাশ করা হয়েছে। ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই নিয়োগ চলবে ১২ মার্চ পর্যন্ত। এ সময় দেশের ৬৪ জেলায় নিয়োগ দেয়া হবে। দীর্ঘ দিন ধরেই পুলিশ সুপাররা তাদের নিজের মতো করে নিয়োগ দিতেন। এবার সেই প্রক্রিয়া তদারক করতে প্রতি জেলায় দুজন করে কর্মকর্তা যাবেন। তাদের একজন পুলিশ সুপার ও অন্যজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদের হবেন। তারা প্রশ্ন তৈরি করা, পরীক্ষা নেয়া, খাতা কোডিং করা, উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা থেকে ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত সবকিছু তদারক করবেন। এই দলের উপস্থিতিতেই নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে। এতে কনস্টেবল নিয়োগে আর্থিক লেনদেন বা ঘুষ-দুর্নীতি ছাড়াও রাজনৈতিক তদবির বা হস্তক্ষেপ বন্ধ হয়ে যাবে বলে পুলিশ কর্মকর্তার দাবি।
×