ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের পর ফেসবুকে ভিডিও ভাইরাল ॥ গোটা পরিবার আত্মগোপনে

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের পর ফেসবুকে ভিডিও ভাইরাল ॥ গোটা পরিবার আত্মগোপনে

নিজস্ব সংবাদদাতা, শরীয়তপুর, ২১ ফেব্রুয়ারি ॥ শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার একটি গ্রামের এক কলেজছাত্রীর আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর ওই কলেজছাত্রীর পুরো পরিবার লোকলজ্জার ভয়ে বুধবার বাড়ির বসতঘর তালাবদ্ধ করে আত্মগোপনে চলে গেছে। জাজিরা উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের বাসিন্দা জাজিরা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আশ্রাফুল ইসলাম ওরফে মিঠু মাদবর তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের পর তার আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এদিকে অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আশ্রাফুল ইসলাম মিঠুনকে দল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মোঃ এনামুল হক মুন্সি বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর আশ্রাফুল ইসলাম মিঠুনকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি জাজিরা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হককে প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিবে। সত্যতা পাওয়া গেলে স্থায়ীভাবে তাকে বহিষ্কার করা হবে। জাজিরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এনামুল হক বলেন, ঘটনার সত্যতা যাচাই করার জন্য বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থলে পুলিশ অফিসারদের পাঠানো হয়েছে। তারা ভিকটিমের বাড়িতে গিয়ে কাউকে খুঁজে পায়নি। তাদের বসতঘর তালাবদ্ধ। কেউ এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযুক্ত আশ্রাফুল ইসলাম মিঠুকে আটক করার চেষ্টা চালাচ্ছি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে আইনী প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এদিকে এর আগে গত বছর ১৫ অক্টোবর ছয় নারীকে ধর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। ওই নারীদের ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন হাওলাদারের বিরুদ্ধে। আরিফ হোসেন হাওলাদার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে জেলহাজতে আছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের একটি গ্রামের বাসিন্দা আশ্রাফুল ইসলাম ওরফে মিঠু মাদবর জাজিরা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক। পাশের গ্রামের এক কলেজছাত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। প্রেমের ফাঁদে ফেলে দুই বছর আগে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তখন কিছু আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে ওই ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে মেয়েটিকে পুনরায় ধর্ষণের হুমকি দেয় মিঠুন মাদবর। লোকলজ্জার ভয় ও সামাজিক সম্মানের কথা বিবেচনা করে মেয়েটি গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় তার ভাইয়ের বাসায় আশ্রয় নেয়। তাকে ঢাকার একটি কলেজে ভর্তি করে দেয়া হয়। বর্তমানে সে অনার্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। আশ্রাফুল ইসলাম মিঠুন মাদবর ঢাকায় অবস্থান করেও ওই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। বাধ্য হয়ে ওই ছাত্রীর পরিবার পাশের উপজেলার একটি গ্রামে তার বিয়ে ঠিক করেন। গত বছর ২৫ নভেম্বর ওই ছাত্রীর বিয়ে হয়। বিয়ে শেষে ২৭ নবেম্বর তার স্বামী শ্বশুরবাড়ির স্বজনদের নিয়ে তাদের বেড়াতে আসেন। তখন মিঠুন ছাত্রীর কিছু আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও তার স্বামীর হাতে তুলে দেন। ওই ছবি ও ভিডিও পাওয়ার পর ওই ছাত্রীর স্বামী তাদের বাড়ি থেকে চলে যান। ওই ছাত্রীকে আর স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করবেন না বলে জানিয়ে দেন। বিষয়টি সমঝোতা করার জন্য ছাত্রীর পরিবার শিবচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানান। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘জয়নগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে মিঠুন মাদবরের সাথে ওই ছাত্রীর কিছু আপত্তিকর ছবি ও ৫৫ সেকেন্ডের একটি আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর অসংখ্য ফেক ফেসবুক আইডি থেকে বিভিন্ন সময়ে ওই ছবি ও ভিডিও ছড়ানো হয়েছে। এ ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মিঠুনসহ তার পরিবারের কাউকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এর আগেও মিঠুন ওই ইউনিয়নের আরও দুটি মেয়ের সাথে এমন প্রতারণা করেছে। ২০১৫ সালে এক ছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে জাজিরা থানায় একটি মামলা হয়েছে। ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি ওই মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেছে পুলিশ। জাজিরার নারীনির্যাতন প্রতিরোধ চাঁদনী মঞ্চের আহ্বায়ক জামাল মাদবর বলেন, কলেজছাত্রীর সাথে যে অন্যায় হয়েছে তা অনেকগুলো অপরাধ। নারী ও শিশুনির্যাতন, তথ্যপ্রযুক্তি ও পর্নোগ্রাফি আইনের আওতায় অভিযুক্তদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এখনও ওই ছবিও ভিডিও ফেসবুকে ছড়ানো হচ্ছে। পুলিশ যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয় তা হলে ওই কলেজছাত্রী ও তার পরিবার আরও বিপর্যয়ে পড়বে।
×