ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে ওঠার চেষ্টা

শাহজালালে এবার ধরা পড়লেন নারী কাস্টমস কর্মকর্তা

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

শাহজালালে এবার ধরা পড়লেন নারী কাস্টমস কর্মকর্তা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগের দিন পুলিশের এক দারোগা অবৈধভাবে প্লেনে ওঠার দায়ে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ফের একই কায়দায় ধরা পড়লেন এক নারী কাস্টমস কর্মকর্তা। এ জন্য শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দিয়েছেন। পর পর দুটি ঘটনায় বিমানবন্দরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। দুটো ঘটনাই তদন্ত করছেন উপ-পরিচালক মোশাররফ হোসেন। এতে শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। বিশেষ করে ভিআইপি গেট ব্যবহারকারীদের বেপরোয়া আচরণে লাগাম টেনে ধরার মতামত দিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ। জানা যায়, কাস্টমসের অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে (পিআরএল) থাকা এই নারী কর্মকর্তা তোহরা বেগম পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজের একটি ফ্লাইটে ওঠার চেষ্টা করেন। মঙ্গলবার রাতে তোহরা বেগমের ছেলের অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার সিডিউল ছিল। ছেলের সঙ্গে তোহরা পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ওঠার চেষ্টা চালান। পরে তাকে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পুলিশ তাকে আদালতে পাঠালে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তবে এর পেছনে অন্য কোন কারণ ছিল কি না বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। নিরাপত্তাকর্মীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে তোহরা বেগম তার ছেলেকে নিয়ে বিমানবন্দরের দ্বিতীয় তলায় আসেন। ওই সময় তার গলায় কাস্টমসের আইডি কার্ড ঝুলানো ছিল। ৩ নম্বর গেট দিয়ে তারা ভেতরে ঢোকেন। কাস্টমসের আইডি কার্ড থাকায় গেটে দায়িত্বরত নিরাপত্তারক্ষীরা তোহরাকে ঢুকতে বাধা দেননি। ছেলের জন্য বোর্ডিং কার্ড সংগ্রহ এবং ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন তারা। রাত ১১টা ৩০ মিনিটে ওই ফ্লাইটের সব যাত্রীকে বাসে করে উড়োজাহাজের সামনে নেয়া হয়। যাত্রীরা উঠার মাঝখানে ১০ নম্বর বোর্ডিং ব্রিজে ছেলেকে নিয়ে ফ্লাইটে উঠার চেষ্টা চালান তোহরা। তখন নিরাপত্তা কর্মীরা বাধা দেন। এ নিয়ে তার সঙ্গে তর্ক হয়। ওয়্যারলেসের মাধ্যমে বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য এবং বিমান ও সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তারা রানওয়েতে ছুটে যান। তাকে বিমানবন্দর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে তাকে ছেড়ে দেন। তবে নির্দিষ্ট সময়ে ওই ফ্লাইট ছেড়ে যায়। তোহরা বেগম বর্তমানে অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটি পিআরএলে আছেন। আগের আইডি কার্ডটি ব্যবহার করে তিনি প্রতারণা করেছেন। ওই কার্ডের মেয়াদও ছিল না। ভিসা ও টিকিট ছাড়া তিনি বিমানে উঠতেই পারেন না। ইমিগ্রেশন পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, এসআই আশিকুর রহমানের ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। দায়িত্ব অবহেলার কারণে একজন এএসআই ও একজন কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য গুরুতর নিরাপত্তা লঙ্ঘন করেছেন তোহরা বেগম। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে তিনি কিভাবে বোর্ডিং ব্রিজে চলে গেলেন তাও খতিয়ে দেখা হবে। কারও গাফিলতি থাকলে কিছুতেই ছাড় দেয়া হবে না। উল্লেখ্য এর আগে শনিবার পুলিশের এসআই আশিকুর রহমান ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় তার মামিকে বিদায় জানাতে গিয়ে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে উঠে পড়েন। পরে তাকে জোর করে ফ্লাইট থেকে টেনে নামানো হয়। এ হাঙ্গামায় ওই ফ্লাইটের তিন ঘণ্টা বিলম্ব ঘটে। পরদিন তাকে পিবিআই থেকে বরখাস্ত করা হয়। ওই ঘটনার রেশ না কাটতেই মঙ্গলবার রাতেই এমন কা- ঘটান তোহরা। এ ঘটনার পর নিরাপত্তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এর পেছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা উচিত বলে করেন এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা। এ ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মোশাররফ হোসেন জানান- দুটো ঘটনারই প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ৭ দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দেয়া হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ জনকণ্ঠকে বলেন, প্রথমত ওই মহিলা চাকরি থেকে প্রস্তুতিকালীন অবসরে যাওয়ার সময় তিনি নিজের পরিচয়পত্র ও বিমানবন্দরের ডিউটি পাস সারেন্ডার করেননি। সেটা এখনও তিনি ব্যবহার করছেন। এটাও এক ধরনের অপরাধ। সেই পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তিনি অবৈধভাবে আবার চলে গেছেন বোর্ডিং ব্রিজ পর্যন্ত। এটাও আরেকটা অপরাধ। সেজন্যই ম্যাজিস্ট্রেট জামিল তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিচের ভিআইপি গেট দিয়ে যারা বোর্ডিং ব্রিজ ব্যবহার করেন তাদের পাস কেউ কখনও খতিয়ে দেখেননি। ভিআইপি ইমিগ্রেশন চেকইন পয়েন্টে কোন নিরাপত্তা তল্লাশিরও ব্যবস্থা নেই। এখানে একসেস কন্ট্রোল থাকা জরুরী- যাতে নিরাপত্তা পাস যাচাই করা যায়। প্রায়ই দেখা যায় একজন ভিআইপির সঙ্গে ২/৩ জন করে দর্শনার্থী ঢুকে যান। তাদেরকে কখনই কেউ বাধা দিতে সাহস করে না। এখানে যদি একটা পাঞ্চ মেশিন থাকত তাহলে বৈধ পাসধারীদেরকেও সেটার ভিতর দিয়ে যেতে বাধ্য করা হতো।
×