ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রেলের আধুনিকায়নে ৩৬ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে এডিবি

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

রেলের আধুনিকায়নে ৩৬ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে এডিবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ রেলওয়ের চলমান সংস্কারে সহায়তায় ৩৬ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। ফিলিপিন্সের ম্যানিলাভিত্তিক আন্তর্জাতিক ঋণদানকারী সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদ বাংলাদেশের অনুকূলে এ ঋণ অনুমোদন করেছে। বুধবার সংস্থাটি তাদের ওয়েবসাইটে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী (প্রতি ডলার ৮০ টাকা) স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। এডিবি বলছে, ঋণের এই অর্থে রেলওয়ের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনে আধুনিক কোচ, (বগি) ওয়াগন ও লোকোমোটিভ সংযোজন করা হবে। কেনা হবে ৪০টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ, ১২৫টি লাগেজ ভ্যান ও মালগাড়ির জন্য এক হাজার ওয়াগন। এর ফলে সড়ক পরিবহনের ওপর নির্ভরতা কমে আসবে। এডিবির জ্যেষ্ঠ পরিবহন বিশেষজ্ঞ সুনেউকি সাকাই এ প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশে সড়ক পথের তুলনায় রেলওয়েতে কম খরচে, নিরাপদে ও স্বল্প জ্বালানিতে যাত্রী ও মাল পরিবহন করা সম্ভব। কিন্তু বিনিয়োগের অভাব ও পুরনো রেলগাড়ি ব্যবহারের কারণে এটি পিছিয়ে রয়েছে। এডিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘রেলওয়ে রোলিং স্টক (ইঞ্জিন, যাত্রী ও মালবাহী গাড়ি) অপারেশন্স ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালন দক্ষতাকে বাড়িয়ে দেবে। নতুন প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি ও কর্মপদ্ধতি প্রয়োগের ফলে এটা সম্ভব হবে। আর দক্ষতা বৃদ্ধির ফলে কার্বন ডাই অক্সাইডের নিঃসরণও কমবে। উল্লেখ্য, পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে এক সময় একচেটিয়া প্রাধান্য ছিল বাংলাদেশ রেলওয়ের। অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘদিন বিনিয়োগ না হওয়ায় এবং বহু পুরনো বাহনের কারণে রেলওয়ে নেতিয়ে পড়ে। বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে রেলের হারানো জৌলুস ও গুরুত্ব ফিরিয়ে আনতে নেয়া হয় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীদের যৌথ উদ্যোগে বর্তমানে রেলের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প চলমান। এসব প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় এডিবি এ ঋণ দিচ্ছে। এডিবি বলছে, বাংলাদেশ রেলওয়েতে বিনিয়োগ ও আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তার দিকে লক্ষ্য রেখেই নতুন প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ৪০টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ, ১২৫টি লাগেজ ভ্যান ও মালগাড়ির জন্য এক হাজার ওয়াগন কেনা হবে। সেই সঙ্গে লোকোমোটিভে ডিজেল সাশ্রয়ের জন্য অক্সিলিয়ারি পাওয়ার ইউনিট, রক্ষণাবেক্ষণ, ট্রেন ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণ ও রেলওয়েতে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নেও কাজ করা সম্ভব হবে। মোট ৪৫ কোটি ৩৩ লাখ ডলার ব্যয়ের এই প্রকল্পের জন্য ৯ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের যোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২২ সালের জুনে। উল্লেখ্য, রেলওয়ে যেসব কোচ, ওয়াগন ও লোকোমোটিভ ব্যবহার করে সেবা দিচ্ছে তার বেশিরভাগই ৩০ বছরের পুরনো। যতদিন চলার কথা, তার চেয়ে বেশিদিন ধরে চলছে অধিকাংশ বাহন। ফলে যাত্রা হচ্ছে অস্বস্তিকর, পণ্য পরিবহন হচ্ছে বিলম্বিত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থারও উন্নয়ন হয়নি। সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় রেলওয়ের উন্নয়নে দেয়া হয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। ২০২০ সালের মধ্যে রেলের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন দেশের মোট পণ্য পরিবহনের ১৫ শতাংশ এবং যাত্রী পরিবহন ১০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে লোকসানে চলা রেলের পরিচালন ব্যয় প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক রাজস্ব আদায়ের দ্বিগুণ। এডিবির সহযোগিতায় সরকার রেলের উন্নয়নের যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, তাতে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে আয় বাড়িয়ে লোকসান কমিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। ২০০৬ সালে রেলওয়ে ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট চালু করার পর এডিবি বাংলাদেশকে এ পর্যন্ত চার দফায় ২৮১ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। ওই অর্থ রেলপথের উন্নয়ন এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে আঞ্চলিক যোগাযোগ তৈরির কাজে ব্যয় হয়েছে। আর নতুন অনুমোদন হওয়া ঋণে বাংলাদেশ রেলওয়ের বহরে যুক্ত হবে ৪০টি নতুন ব্রডগেজ লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন), ১২৫টি লাগেজ ভ্যান এবং মালবাহী ট্রেনের জন্য এক হাজার ওয়াগন। এই ঋণে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, চালকদের জন্য প্রশিক্ষণ এবং তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোরও উদ্যোগে নেয়া হবে।
×