ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিচারের দীর্ঘসূত্রতা

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বিচারের দীর্ঘসূত্রতা

দেশে বহু মামলা দীর্ঘদিন ধরে নিষ্পত্তিহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এই ক্ষেত্রে ওইসব মামলায় অভিযুক্তরা বিলম্বিত বিচারের কারণে জেলখানায় পড়ে রয়েছেন বছরের পর বছর। বিনা বিচারে বহু মানুষের এভাবে বন্দীজীবনের ইতিহাস নতুন নয়। অনেক সময় দেখা যায় অভিযুক্ত দোষী না হয়েও মারপ্যাচে পড়ে বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় জেল খাটতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে যারা জেলখানায় পড়ে আছে, বিচারের মুখোমুখি, তাদের হাজির করা হচ্ছে না বা বিচারে হাজির করা হলেও বার বার তারিখ পড়ে মামলাটিকে বিলম্বিত করা হচ্ছে। এতে তার মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগীদের সুবিচারের পথ দেখাল আদালত। বিলম্বিত বিচারে সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দী থাকা ১৩৯ জনের বিচার ৩১ আগস্টের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে নির্দেশনার বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে সুপ্রীমকোর্টের মনিটরিং কমিটির কাছে সংশ্লিষ্ট বিচারকদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে এসব মামলায় সাক্ষীর হাজিরা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সোমবার সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইডের প্যানেলের এক আইনজীবী ১৩৯ কারাবন্দীর বিষয়টি নজরে আনলে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। বিচারের দীর্ঘসূত্রতা বা বিলম্ব বিচারে সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে আটক ব্যক্তিদের তথ্য চেয়ে দেশের আটটি বিভাগের ৬৮টি কারাগারে গত বছরের ১৯ নবেম্বর চিঠি দেয় সুপ্রীমকোর্টের লিগ্যাল এইড। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর কারা কর্তৃপক্ষ ২৫৬ জনের তালিকা পাঠায়। সে তালিকা থেকে যাচাই-বাছাইয়ের পর রবিবার ১৩৯ কারাবন্দীর বন্দীদশা নজরে আনে লিগ্যাল এইড। কথায় আছে, জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনায়েড। অর্থাৎ বিচার বিলম্বিত হওয়া বিচার না পাওয়ারই শামিল। এতে অনেক ক্ষেত্রেই দুর্বলের অধিকার হরণ করা হয়। বিলম্বে হলেও আদালতের এই নির্দেশ ভুক্তভোগী বিচারপ্রার্থী ও অভিযুক্তদের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় একটা মাইলফলক তৈরি করবে বলে আশা করা যায়। উল্লেখ্য, দেশের স্বল্প আয়ের ও অসহায় নাগরিকদের আইনী সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২০০০ সালে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন’ করা হয়। এ আইনের অধীনেই প্রতিষ্ঠা করা হয় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা। সংস্থার অধীনে সুপ্রীমকোর্টসহ দেশের ৬৪ জেলায় লিগ্যাল এইড কমিটি বিনামূল্যে আইনী সেবা নিয়ে কাজ করছে। কোন সভ্য সমাজে বিচারহীনতা কাম্য নয়। এতে অপরাধীরা উৎসাহিত হয়, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। বিচারহীনতা অথবা বিচারের দীর্ঘসূত্রতা অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীদের উৎসাহিত করে বৈকি। তাই দ্রুত বিচারকাজ কেন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, তা নিয়ে ভাবার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। এই ক্ষেত্রে দেখতে হবে প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় কোন গলদ রয়েছে কিনা? যদি থেকে থাকে, তাহলে তা সারাতে হবে। প্রয়োজনে সংশোধন করতে হবে আইন। এ কথা সত্য যে, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার অনেক ক্ষেত্রেই রয়েছে নানা রকম আইনী দুর্বলতা। রয়েছে বিধিমালার দুর্বলতাও। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এসব বাধা দূর করতে হবে। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিচারব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন, তা দ্রুত করবে।
×